শবে মিরাজ ইসলাম ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাত, যা মুসলমানদের জন্য আধ্যাত্মিকতার এক বিশেষ মুহূর্ত। এই রাতটি নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মিরাজ রাত হিসেবে পরিচিত। শবে মিরাজকে বলা হয় নবীজির আসমানে অবতরণের রাত, যখন তিনি আল্লাহর কাছে কিছু বিশেষ দোয়া ও নির্দেশনা নিয়ে ফিরে আসেন।
মিরাজের ঘটনাটি দুটি ভাগে বিভক্ত। প্রথমত: হযরত মুহাম্মদ (সা.) মাক্কা থেকে মদিনায় এক অলৌকিক বাহনে (বোরাক) রাত্রে পবিত্র মসজিদুল আকসা পৌঁছান। সেখানে তিনি সকল নবীদের নেতৃত্বে নামাজ আদায় করেন। এরপর দ্বিতীয়ত: তিনি মদিনার মসজিদুল হারাম থেকে আসমানে উর্ধ্বগামী হন এবং সেখানে একান্ত আল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়ে তাঁর থেকে বিশেষ নির্দেশনা গ্রহণ করেন।
এই রাতে- নবীজিকে প্রথমে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান দেওয়া হয়, যা পরবর্তীকালে মুসলিম উম্মাহর জন্য ফরজ হয়। এছাড়াও, মিরাজের রাতের মাধ্যমে নবীজির জীবনে বহু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও নির্দেশনা আসে- যা মুসলিম জাতির জন্য আজও জীবন্ত ঐতিহ্য।
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
- “আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীকে (সা.) মিরাজের রাতে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি ৫ ওয়াক্ত নামাজের বিধান লাভ করেন।” (সহীহ বুখারী)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
- “নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শবে মিরাজে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, আল্লাহ তার দোয়া কবুল করবেন এবং তাকে ক্ষমা করবেন।'” (সহীহ তিরমিজী)
শবে মিরাজ মুসলিম উম্মাহর জন্য শুধুমাত্র একটি আধ্যাত্মিক রাত নয়, এটি তাঁদের আত্মিক উন্নতির এক বিশেষ সময়। এ রাতে মুসলমানরা বিশেষভাবে ইবাদত, নামাজ, দোয়া ও তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা করেন। এই রাতের বিশেষত্ব হলো- আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর এক বিশেষ সুযোগ, যখন মানুষের প্রার্থনা দ্রুত কবুল হতে পারে।
শবে মিরাজে আল্লাহর মহান নির্দেশনায় মুসলিম জাতি পায় সত্য, শান্তি ও ন্যায়ের পথ। এটি এক অভিজ্ঞান মুহূর্ত যেখানে সমস্ত পৃথিবীকে একটি আধ্যাত্মিক প্রেক্ষাপটে দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। একইসঙ্গে এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস এবং তাঁর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমে সত্য ও ধর্মের পথে চলতে হবে।
শবে মিরাজের ঘটনাটি শুধু আধ্যাত্মিকভাবে নয় বরং মুসলিম জাতির জন্য একটি শিক্ষা প্রদানকারী ঘটনা। এটি প্রমাণিত করে যে, বিশ্বে সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছার অধীন এবং তাঁর কাছেই আমাদের সব চাওয়া-পাওয়া। হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মিরাজ রাতের অভিজ্ঞতা মুসলমানদেরকে এই শিক্ষা দেয় যে, সব কাজ আল্লাহর সম্মতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয় এবং প্রতিটি কাজই তার ইচ্ছাতেই হয়ে থাকে।
শবে মিরাজের মাহাত্ম্য শুধুমাত্র এই রাতে সীমাবদ্ধ নয় বরং এই রাতটি প্রতিটি মুসলমানের জীবনে নতুন আধ্যাত্মিক শক্তি এবং আল্লাহর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের প্রেরণার এক মাধ্যম।
- সংকলক: এফ.আর. ইমরান

