হার্ট অ্যাটাক এক প্রাণঘাতী পরিস্থিতি, যেখানে সময়মতো চিকিৎসা না পেলে ঝুঁকি বাড়ে বহুগুণ। চিকিৎসকদের মতে, দ্রুত পদক্ষেপ ও আগাম সতর্কতায় এড়ানো যায় বড় বিপদ। সম্প্রতি চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণায় উঠে এসেছে হার্ট অ্যাটাকের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব লক্ষণ, যেগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকলে সময়মতো চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব।
ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ-
১. বুকব্যথা:
হার্ট অ্যাটাকের শিকার ৪০ শতাংশ রোগীর আগেভাগেই বুকব্যথার অভিজ্ঞতা ছিল বলে জানিয়েছে গবেষণা। অনেকেই সাধারণ ব্যথা ভেবে এড়িয়ে যান, অথচ এটি হতে পারে প্রথম বিপদের সংকেত।
২. বুকে চাপ বা ভারবোধ:
শারীরিক পরিশ্রম, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা বা দ্রুত হাঁটার পর বুকে চাপ অনুভব করা মোটেই স্বাভাবিক নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৪ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকের রোগী এ ধরনের অনুভূতির কথা বলেছেন।
৩. বুক ধড়ফড় বা হার্টবিট অনিয়ম:
৪২ শতাংশ রোগী জানিয়েছেন, তাঁদের বুক ধড়ফড় করছিল বা হার্টবিট অনিয়মিত হচ্ছিল। কখনও হার্টবিট হঠাৎ বন্ধ হওয়ার মতো অনুভূতিও দেখা যায়।
৪. শ্বাসকষ্ট বা হাঁপিয়ে যাওয়া:
পরিশ্রম ছাড়াও যদি শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় বা সহজেই হাঁপিয়ে যান, সেটি হৃৎপিণ্ডের অস্বাভাবিকতার ইঙ্গিত হতে পারে।
৫. বুক জ্বালাপোড়া:
অনেকে গ্যাস্ট্রিক ভেবে ভুল করেন। তবে গ্যাসের ওষুধেও উপশম না হলে বুঝতে হবে, সমস্যা অন্য কোথাও- সম্ভবত হার্টে।
৬. দুর্বলতা ও ক্লান্তিবোধ:
সাধারণ দুর্বলতা নয়- যদি দীর্ঘদিন ধরেই অস্বাভাবিক ক্লান্তি বোধ করেন, তা উপেক্ষা করা উচিত নয়। এটি হতে পারে হৃদ্রোগের আগাম বার্তা।
অতিরিক্ত কিছু উপসর্গ-
হার্ট অ্যাটাকের সময় অনেকের মাথা ঘোরা, বমি ভাব, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা কিংবা পা ভারী লাগার মতো উপসর্গও দেখা দেয়। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এসব উপসর্গ তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে আবার কোনো লক্ষণ ছাড়াই হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে।
হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক করণীয়-
১. আতঙ্কিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবুন:
ভয় নয়, প্রয়োজন দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত।
২. দ্রুত হাসপাতালে যান:
নিকটস্থ হাসপাতালে পৌঁছাতে বিলম্ব যেন না হয়। সময়মতো চিকিৎসা প্রাণ বাঁচাতে সহায়তা করে।
৩. শ্বাসের গতি নিয়ন্ত্রণ করুন:
লম্বা করে শ্বাস নিয়ে ধীরে ছাড়ুন। এতে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে।
৪. কাশির মাধ্যমে সাপোর্ট দিন:
গভীর শ্বাস নিয়ে জোরে কাশলে হৃৎপিণ্ডের কার্যক্রম কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
৫. প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন:
যদি আগে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যাসপিরিন বা নাইট্রোগ্লিসারিন গ্রহণের নির্দেশনা থাকে, তাহলে তা নেওয়া যেতে পারে। তবে নতুন করে নিজের সিদ্ধান্তে ওষুধ গ্রহণ বিপজ্জনক।
৬. রোগীকে শুইয়ে দিন:
সমতল জায়গায় রোগীকে শুইয়ে দিন। সম্ভব হলে পা একটু উঁচুতে রাখলে রক্তপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হয়।
৭. আশপাশের সাহায্য নিন:
নিজে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা না করে কাছের কাউকে জানিয়ে দ্রুত সহায়তা চাওয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। আগাম লক্ষণগুলো চিনে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে প্রাণরক্ষা শুধু সম্ভবই নয়, অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ সুস্থ জীবন ফিরে পাওয়া যায়।

