বিচারক যখন আইনের মূল চেতনার পরিবর্তে এর আক্ষরিক প্রয়োগে অগ্রাধিকার দেন, তখন সচেতনভাবে কিংবা অবচেতনে আইনের মূল উদ্দেশ্য যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, তা থেকে সরে আসেন।
আমরা যখন তাড়াহুড়ো করে কোনো পরিবর্তন চাই, তখন এর প্রক্রিয়া নিয়ে খুব একটা ভাবি না। যার ফলে সেই পরিবর্তন টেকসই হয় না। যখন আমরা সর্বত্র ন্যায়বিচার চাই, কিন্তু আইনি খুঁটিনাটি বা যথাযথ প্রক্রিয়া উপেক্ষা করি, তখন ন্যায়বিচারের পূর্বশর্ত যে ন্যায়পরায়ণতা, সেটা নিশ্চিত হয় না।
যখন আমরা একসঙ্গে অনেক অপরাধীকে শাস্তি দিতে চাই, কিন্তু আসামির অধিকারের বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিই না, তখন সেটি প্রতিশোধপরায়ণতার ইঙ্গিত দেয়। এর ফলে জনমনে বিচার প্রক্রিয়া ও এর ফলাফলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
আমরা সেই প্রবাদ ভুলে যাই—শুধু ন্যায়বিচারই যথেষ্ট নয়, সেটা দৃশ্যমানও হতে হবে। করণীয় খুবই পরিষ্কার—আইনভঙ্গকারীকে শাস্তি দিতে গিয়ে নিজেরা আইন ভাঙতে পারব না; ক্ষমতার অপব্যবহারকারীকে জবাবদিহি করতে গিয়ে নিজেরা ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারব না। বাস্তবতা হলো, অন্যার্যভাবে কখনোই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায় না।
আমরা এখন আইনের ভয়াবহ অপব্যবহার দেখছি—কিছু মানুষকে একত্রিত করে মব তৈরি করলেই আইনের ঊর্ধ্বে যাওয়া যায়। এমনকি কাউকে পিটিয়ে হত্যা করলেও সরকারের বিবেক যেন নড়ে না। কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে হেয় প্রতিপন্ন করতে কেবল কিছু শব্দ ব্যবহার করলেই চলে, তথ্য যাচাইয়ের দরকার হয় না।
বহু মানুষকে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং বিচার বা জামিন ছাড়াই এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা জেলে রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে পতিত সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। তাদের অপরাধের প্রমাণও প্রচুর রয়েছে। কিন্তু তারপরও তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত মোট এক হাজার ৭৩০টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ৭৩১টি হত্যা মামলা। কিন্তু ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৩৪টি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে, যার মধ্যে ১৩টি হত্যা মামলা। (আইসিটি আইনের মামলাগুলো এখানে ধরছি না।)
তাহলে বাকি মামলাগুলোর কী হবে? কেন এসব মামলার আসামিরা অপ্রমাণিত অপরাধের লাঞ্ছনা নিয়ে বাঁচতে বাধ্য হবে? বিশেষ করে যখন তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে তদন্তই শেষ হয়নি?
সরকারও জানে যে, ভুয়া মামলা করে পরবর্তীতে টাকা নিয়ে আসামি তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার এক ধরনের চাঁদাবাজি ব্যবসা গড়ে উঠেছে। আরও দুঃখজনক হলো, সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়—বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়—জানে যে, ব্যক্তিগত শত্রুতা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, আর্থিক বিরোধ ও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে মামলা হচ্ছে।
যদি ক্ষমতাবান কোনো রাজনৈতিক দল বর্তমানে দুর্নামগ্রস্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতাকর্মীদের শাস্তি দিতে চায়, তাহলে ভুয়া মামলার সংখ্যা মুহূর্তেই পাহাড়সম হয়ে যায়। ক্ষমতাসীনরা কখনোই সেগুলো নিয়ে চিন্তিত না। আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে হয়রানি ও হেয় করাও এর একটি বড় কারণ।
যেহেতু ভুয়া মামলা করার কোনো শাস্তি নেই এবং উল্টো এটা অর্থ উপার্জনের সুযোগ হয়ে উঠেছে, তাই ভুয়া মামলা দায়েরের প্রবণতা দ্রুত বেড়েছে—বিশেষ করে যখন সরকারের অবস্থান হলো, ‘যে কেউ মামলা করতে পারে, এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই।’
কিন্তু, সরকার যদি এই নীতি গ্রহণ করত যে, ভুয়া মামলা করা অপরাধ এবং যারা এই অধিকারের অপব্যবহার করেছে তাদের শাস্তি দিত, তাহলে হয়রানি ও চাঁদাবাজির এই দ্বার খুলতো না এবং আইনের এতটা লজ্জাজনক, ইচ্ছাকৃত ও পরিকল্পিত অপব্যবহার হতো না।
দ্য ডেইলি স্টারের এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৫ সালের ৩ মে পর্যন্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত মামলায় অন্তত ২৬৬ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে অন্তত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে অন্তত ১৩৭ জন ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রাজশাহীতে দায়ের করা ৩২টি মামলায় (২১ আগস্ট ২০২৪ থেকে ২০ এপ্রিল ২০২৫ এর মধ্যে) আসামি হয়েছেন।
এসব মামলার নথি অনুযায়ী, তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, দাঙ্গা, অপহরণ, ভাঙচুর, চাঁদাবাজি, হামলা ও অবৈধভাবে সমাবেশ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনেও মামলা হয়েছে। মামলায় উল্লেখ করা ধারা থেকে সন্ত্রাসবাদ কেন বাদ গেছে সেটি বিস্ময়ের বিষয়।
বর্তমানে পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি গণমাধ্যমকর্মী হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে এত সাংবাদিক হঠাৎ করে কীভাবে খুনি হয়ে গেলেন? আজীবন সাংবাদিক হিসেবে এটা আমার জন্য গভীর লজ্জা ও অপমানের বিষয় বলে মনে করি।
হ্যাঁ, আসামি হওয়া সাংবাদিকদের অনেককে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি, কিন্তু তাদের অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন, সামাজিক মর্যাদা হারিয়েছেন, সুনামও নষ্ট হয়েছে।
আর যারা জেলে রয়েছেন? বারবার তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হচ্ছে। কেন? সংবিধান অনুযায়ী জামিন কি তাদের অধিকার নয়? নারী সাংবাদিক ফারজানা রূপা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন। অথচ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগপত্র গঠন করা হয়নি। কেন তাকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না?
বাঙালি ও মুসলিম—দুই সংস্কৃতিতেই নারীর ভূমিকা, বিশেষ করে সন্তান লালন-পালনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জামিন বিবেচনায় কি এই বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়া উচিত নয়, বিশেষ করে যখন তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণই পাওয়া যায়নি? নারী ও প্রতিবন্ধীদের জামিন দেওয়ার জন্য আইনে বিশেষ বিধানও রয়েছে। এগুলো তো সেই মৌলিক মানবাধিকারেরই লঙ্ঘন, যেগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ বিগত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল।
প্রায় এক বছর ধরে মিথ্যা মামলা নিয়ে অপমান সহ্য করার পর অবশেষে সরকার গত ৯ সেপ্টেম্বর জেলা ও মহানগর পর্যায়ে কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির কাজ হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত মামলায় হয়রানিমূলকভাবে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাদের শনাক্ত করে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার চেষ্টা করা। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে এটাও জোর দিয়ে বলছি, এর জন্য যেন স্বল্প সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। নইলে এমন একটি ভালো উদ্যোগ থেকেও তেমন কোনো সুফল পাওয়া যাবে না।
প্রথমেই স্বীকার করছি যে, সাংবাদিকতার রাজনীতিকরণের কারণে অনেকেই বস্তুনিষ্ঠতা ও সততা হারিয়েছেন। তারা নির্লজ্জ চাটুকারিতায় লিপ্ত হয়েছেন, যা শুধু এই পেশাকে কলঙ্কিতই করেনি, বরং দমন-পীড়ন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও ভিন্নমত দমনের পথকে সহজ করেছে। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো এক লজ্জাজনক রেকর্ড তৈরি করেছে।
অনেক সাংবাদিক সুবিধা পাওয়ার লোভে বিবেক বিক্রি করেছেন, দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছেন এবং সাংবাদিকতা পেশাকে কলুষিত করেছেন। এসব কথিত সাংবাদিকদের চিহ্নিত করা উচিত, তাদের যথাযথ অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা উচিত, ন্যায্যবিচার হওয়া উচিত এবং আইন অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া উচিত।
কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে হত্যা বা হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনার অর্থ হলো, সরকার নিজেই আইনকে তুচ্ছ করছে। এর ফলে আসল অপরাধীরা আড়ালে থেকে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
অনেক উদাহরণ রয়েছে রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্যদের, যারা প্রায় এক বছর কিংবা তারও বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন। তাদের মধ্যে অনেকের বয়স সত্তর বা আশির কোঠায়। অনেকেই এমন সব অসুখে ভুগছেন, যা প্রাণঘাতী পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তাদের মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। তবুও তাদের জামিন আবেদন বারবার খারিজ হচ্ছে।
পতিত সরকারের এক ভয়ঙ্কর দিক ছিল জামিন না দেওয়া। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরুসহ বহু রাজনৈতিক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং আমরা মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর তাদের জামিন না দেওয়ার বিরুদ্ধে লিখেছি ও প্রতিবাদ করেছি। লেখক মুশতাক আহমেদ ২০২০ সালের মে মাসে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ফেসবুকে ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট ও তৎকালীন সরকারের করোনা মোকাবিলা নিয়ে কার্টুনের কারণে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অমানবিক নির্যাতনের ফলে মুশতাক কারাগারে মারা যান।
ছয়বার তার জামিন আবেদন খারিজ করেছেন বিভিন্ন বিচারক। এমনকি হাইকোর্টেও তার জামিন আবেদন খারিজ হয়েছে। এই বিচারকদের কি কোনো দায়িত্ব নেই? তারা প্রত্যেকেই বিচারকের জন্য অপরিহার্য সেই নৈতিক প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট অভাব দেখিয়েছেন। যদি একজন বিচারকও তাকে জামিন দিতেন—যা ছিল তার সাংবিধানিক অধিকার—তাহলে তার অকাল মৃত্যু নিশ্চিতভাবেই এড়ানো যেত। আসলে তারা বিচারক ছিলেন না, ছিলেন সরকারের আদেশ পালনকারী।
তাহলে কেন এখনো বিচার বিভাগ জামিন দিচ্ছে না এবং বিচার বিভাগের সেই স্বাধীনতা দেখাচ্ছে না, যা আমরা অন্তত এখন প্রত্যাশা করি? পুলিশের দায়িত্ব গ্রেপ্তার করা। কিন্তু, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি কতদিন জেলে থাকবেন, তা বিচারক নির্ধারণ করেন। এমনকি তাকে রিমান্ডে পাঠানোর সিদ্ধান্তও আদালতের—যদিও আমরা সবাই জানি যে রিমান্ড আসলে নির্যাতনের অনুমতি। অতীতে আমরা দেখেছি, বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের সেবক হতে উদগ্রীব ছিল। এখনও কেন একই উৎসাহ, আনুগত্য ও আইনের প্রতি অবজ্ঞা নিয়ে সেই একই প্রবণতার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে?
জামিন না দেওয়া, বিচারকদের জন্যে যেন স্বভাবসুলভ ব্যাপার ছিল আগে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এখনো কোনো পরিবর্তনের লক্ষণ নেই। মনে হচ্ছে, এই সত্যের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা নেই যে আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া কোনো নাগরিককে এক ঘণ্টার জন্যও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করার অধিকার কারও নেই। যখনই একজন বিচারক জামিন দিতে অস্বীকৃতি জানান, তখনই তার বিবেকের ওপর ভারী বোঝা থাকা উচিত যে তিনি একজন নাগরিককে স্বাধীনতা ও স্বাভাবিক জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন।
বিচার বিভাগের অজুহাত হলো—যদি অপরাধটি জামিনের অযোগ্য হয়, তাহলে বিচারক কীভাবে জামিন দেবেন? কিন্তু এখানেই আসে ন্যায়পরায়ণতা ও বিবেচনার প্রশ্ন। বিচারক কি পরীক্ষা করবেন না যে সঠিক আইন প্রয়োগ হচ্ছে কি না? বিচারক কি প্রশ্ন করতে পারবেন না যে হত্যা মামলার যুক্তি কী? একটি হত্যাকাণ্ডে কীভাবে কয়েকশ মানুষ অংশ নিতে পারে? বিচারক কি প্রমাণ চাইতে পারবেন না যে জামিনপ্রার্থী আসামি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কি না?
বিচারক চাইলে দু-একদিনের জন্য জামিন স্থগিত রাখতে পারেন এবং পুলিশকে প্রাথমিক প্রমাণ দিতে বলতে পারেন। প্রমাণ না পেলে তিনি নিজ বিবেচনায় জামিন দিতে পারেন। বিচারকের সর্বোচ্চ ভূমিকা হলো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
আমাদের সংবিধানে যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা হয়েছে এবং যা গত কয়েক দশক ধরে সরকারগুলো দমন করেছে, সেটি যেন অবশেষে বাস্তবায়িত হতে চলেছে। আমরা চাই বিচারকদের মানসিকতায় অবিলম্বে পরিবর্তন ও তাদের মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী হতে দেখার মাধ্যমে এই অর্জন উদযাপন করতে। বিচারকরা শুধু আইনের অক্ষর মেনে চলবেন না, বরং এর গূঢ় উদ্দেশ্যকেও ধারণ করবেন—যেখানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে অধিকার, স্বাধীনতা, ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার।
একজন বিচারক কেবল আইনি আমলা হতে পারেন না। তাদের হতে হবে নৈতিক, সাহসী ও নির্ভীক এবং আইন ও সংবিধানের রক্ষক। আমরা এমন রায় দেখতে চাই যা ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দেবে। আমরা বিচারকদের এমন ঘোষণা দেখতে চাই যা গণতান্ত্রিক নিয়ম-কানুন ও চর্চাকে শক্তিশালী করবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ভিন্নমতের পরিসর সংকুচিত করার যেকোনো প্রচেষ্টা আগেভাগেই প্রতিহত করবে।
আমরা দেখতে চাই না যে, এখানে-ওখানে কোনো ধারা বা বাক্য চাতুর্যের সঙ্গে পাল্টে আমাদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। বিচারকদের নৈতিক দায়িত্ব হলো, আইনের প্রতি আমাদের অবিচল আস্থা শক্তিশালী করা। তাদের সম্পূর্ণ সচেতন থাকতে হবে যে, তাদের অতীতের কর্মকাণ্ড বিচার বিভাগের মতো মহান প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনসাধারণের বিশ্বাসকে দুর্বল করেছে। আমরা এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারি না যে, আইনের শাসনের পূর্ণ চর্চা করতে হবে, শুধু সুবিধামতো কোনো অংশ বেছে নিয়ে নয়।
শুরুতে যা বলেছিলাম, শেষেও তারই পুনরাবৃত্তি করি—অন্যায্যভাবে কখনো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায় না।
মাহফুজ আনাম: সম্পাদক ও প্রকাশক, দ্য ডেইলি স্টার।