দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে চাঁদাবাজি সর্বদা উদ্বেগের বিষয় হয়ে আসে। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের আশা তৈরি হয়েছিল। তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকায় সেই আশা পূরণ হয়নি। ব্যবসা-বাণিজ্য এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে চলছে। এর মধ্যে চাঁদাবাজি ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ব্যবসায়ী নেতারা মনে করেন, এ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হলো সরকারের কঠোর পদক্ষেপ।
পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের মতবিনিময় সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সভায় ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারের অস্থিরতার মূল কারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নয়। বরং কিছু করপোরেট গ্রুপের সিন্ডিকেট এবং পণ্য পরিবহন ও খালাসের সময় চলমান চাঁদাবাজি দায়ী।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলার বক্তব্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, ‘বাজার তদারকিতে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ওপর নজর থাকবে, ততক্ষণ সমস্যার সমাধান হবে না। কারওয়ান বাজারের চুনোপুঁটি ব্যবসায়ীর কাছে না গিয়ে রাঘববোয়ালের কাছে যান।’ তিনি আরও বলেন, চিনি ও ভোজ্যতেলের মতো অপরিহার্য পণ্যের সরবরাহে মাত্র সাতটি গ্রুপের ওপর পুরো দেশের নির্ভরতা সিন্ডিকেট-নির্ভরতার বিপদকে আরও প্রকট করে।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন আরও সরাসরি অভিযোগ করেছেন। তিনি করপোরেট ব্যবসায়ীদের ‘শকুনের মতো শোষণকারী’ আখ্যায়িত করে উল্লেখ করেছেন, ৩ টাকার মোড়ক ৪০ টাকায় বিক্রি করার মতো কারসাজি চলে। সংকটের সময় মিলগুলো নিয়মিত পাইকারদের তেল না দিয়ে বিশেষ শ্রেণির পরিবেশকদের সুবিধা দেয়ায় বাজারের অস্থিরতা বেড়ে যায়। তিনি বলছেন, সরকারের কার্যকর নজরদারি ছাড়া রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখা অসম্ভব।
ব্যবসায়ী নেতারা একমত, পণ্য পরিবহন ও সরবরাহের পথে চাঁদাবাজি গুরুতরভাবে চলছে। ট্রাক লোডিং-আনলোডিংসহ সর্বত্র চাঁদা দিতে হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে চাঁদাবাজদের সম্পর্কের অভিযোগ নতুন নয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাঁদাবাজমুক্ত পরিবেশ না হলে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে না এবং বাজার স্থিতিশীল হবে না। এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসকরা কেবল ‘অনুরোধ করা হবে’ বললে সমস্যার সমাধান হবে না, প্রয়োজন কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা।
এছাড়া, পেঁয়াজ ও খেজুরের মতো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে সরকারের ভুল শুল্কনীতি ও আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা বড় ভূমিকা রাখে। পেঁয়াজে মাত্র ১০ শতাংশ ঘাটতির কারণে দাম বাড়লেও তা আমদানির প্রয়োজন সময়োচিত নয়। খেজুরের মতো পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপের ফলে তা বিলাসবহুল পণ্যে পরিণত হয়েছে। ফল আমদানিকারকরা অবিলম্বে শুল্ক যৌক্তিক করার দাবি জানিয়েছে। ব্যবসায়ীরা প্রস্তাব দিচ্ছেন, রমজানে সরকার নির্দিষ্ট পরিমাণ চিনি ও ভোজ্যতেল আমদানি করে মজুত রাখলে বেসরকারি ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ কমবে এবং সংস্থার হয়রানি বন্ধ হবে।
গত বছরের রমজানে সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে বাজারের পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে সন্তোষজনক ছিল। এবছরও আশা করা হচ্ছে, সরকার আগাম প্রস্তুতি নিয়ে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখবে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়াই কাম্য।

