Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Fri, Dec 19, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বাণিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • স্বাস্থ্য
      • প্রযুক্তি
      • ধর্ম
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » মুক্ত বাণিজ্য বাড়লেও সংঘাত কমছে না কেন?
    মতামত

    মুক্ত বাণিজ্য বাড়লেও সংঘাত কমছে না কেন?

    মনিরুজ্জামানNovember 22, 2025
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন ডি. রুজভেল্টের সময়ে পরপর ১২ বছর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন কর্ডেল হাল। ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত নিজের স্মৃতিকথায় তিনি জানান, পুরো কর্মজীবনে একটি ভাবনাকেই নীতি হিসেবে অনুসরণ করেছেন—‘নির্বিরোধ বাণিজ্য শান্তির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।’ তাঁর ধারণা ছিল, শুল্কপ্রাচীর যত বাড়ে যুদ্ধের ঝুঁকিও তত বাড়ে। আর শুল্কপ্রাচীর ভেঙে দিলে যুদ্ধের মেঘও কেটে যায়।

    হালের এই বিশ্বাস একান্ত ব্যক্তিগত ছিল না। এটি দীর্ঘ দিনের উদারবাদী চিন্তারই উত্তরাধিকার। অষ্টাদশ শতকের জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট থেকে শুরু করে উনিশ শতকের ব্রিটিশ রাজনীতিক রিচার্ড কবডেন পর্যন্ত অনেকে একই ভাবনা তুলে ধরেছেন। ১৭৯৫ সালে প্রকাশিত ‘পারপেচুয়াল পিস’ গ্রন্থে কান্ট যুক্তি দেন, বাণিজ্য ও আইনের কাঠামোয় আবদ্ধ প্রজাতন্ত্রগুলো স্বভাবতই যুদ্ধ এড়িয়ে চলে। তাঁর মতে, অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংঘাত কমায় ও শান্তিকে টেকসই করে। অন্যদিকে, ব্রিটিশ রাজনীতিক কবডেন মনে করতেন, পারস্পরিক অর্থনৈতিক নির্ভরতা যুদ্ধকে ব্যয়বহুল ও ধ্বংসাত্মক করে তোলে। তাই যুদ্ধ তখন আর যুক্তিসংগত থাকে না।

    প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সময় কান্টের এই ভাবনা নিয়ে নিয়মিত বক্তৃতা দিতেন উড্রো উইলসন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে উইলসন একই আদর্শবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে বিংশ শতকে আরও এগিয়ে নেন। ১৯৩৪ সালে ‘রিসিপ্রোকাল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টস অ্যাক্ট’ পাস হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্যের শান্তিকর প্রভাব এক ধরনের রাজনৈতিক মতবাদে রূপ নেয়। কর্ডেল হালের খসড়া করা এই আইন ১৮৯০ সাল থেকে প্রচলিত রিপাবলিকান রক্ষণশীল নীতিকে বদলে দেয়। ১৯৩০ সালের ‘স্মুট–হাওলি ট্যারিফ অ্যাক্ট’ এবং প্রতিশোধমূলক শুল্কযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে ধারণা তৈরি হয়—উচ্চ শুল্ক যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই মুক্ত বাণিজ্যই শান্তির পথ।

    তবে মুক্ত বাণিজ্য সংক্রান্ত এই ভূরাজনৈতিক বিশ্বাস বহুটা ছিল কল্পনাভিত্তিক। হালের মতো দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজনীতিকদের জন্য মুক্ত বাজারে যুক্ত থাকার পেছনে বাস্তব অর্থনৈতিক স্বার্থও ছিল। উত্তরাঞ্চলের উৎপাদন শিল্প সুরক্ষায় ধার্য শুল্ক দক্ষিণের কৃষিপণ্যের রফতানি কমিয়ে দিত। কিন্তু বাস্তব প্রক্রিয়া ছিল উল্টো—শান্তিই বাণিজ্যকে প্রসারিত হওয়ার সুযোগ দেয়। বৈশ্বিকীকরণের উত্থান ও বর্তমান পশ্চাদপসরণ দুইটিই বুঝতে এই সত্য গুরুত্বপূর্ণ।

    ইতিহাসে ব্রিটেনের সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকের সাম্রাজ্য বিস্তার এ প্রক্রিয়াকে আরও স্পষ্ট করে। নৌ–সামরিক শক্তি এবং ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণের পাশাপাশি দেশটির বাণিজ্যনীতি ছিল স্পষ্টভাবে মার্কেন্টালিস্ট। লক্ষ্য ছিল যুদ্ধের ব্যয় মেটাতে স্বর্ণ–রৌপ্য সংগ্রহ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী বিদেশি ব্যবসাকে দমন করা। ১৬৫১ সালের ‘নেভিগেশন অ্যাক্ট’ ইংরেজ জাহাজ ও বন্দরকেই বাণিজ্যের একমাত্র পথ হিসেবে নির্ধারণ করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো একচেটিয়া বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সেই সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণকে আরও শক্ত করে। ১৮১৫ সালের শস্য আইনও একই নীতিকে সুসংহত করে।

    মার্কেন্টালিজমের প্রতি ব্রিটেনের ঝোঁক কমতে শুরু করে তখনই, যখন তাদের নৌ–নিয়ন্ত্রণ প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি এসে দেশটির প্রয়োজন হয় সস্তা খাদ্যশস্য, কাঁচামাল এবং প্রস্তুতপণ্যের নতুন বাজার। ফলে কম শুল্ক এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি নতুন নীতির অংশ হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় স্বর্ণমান গ্রহণ, যা লন্ডনকে বৈশ্বিক আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে। মূলত ব্রিটেন নিজের আরোপিত ‘শান্তি’ প্রতিষ্ঠা করেই মুক্ত বাণিজ্যকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল।

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র এমন এক অবস্থানে পৌঁছে, যেখানে তারা সহজেই বৈশ্বিক নেতৃত্ব দাবি করতে পারে। দেশটির হাতে ছিল শক্তিশালী সামরিক ক্ষমতা, আর ছিল বড় প্রণোদনা—বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাণিজ্য ও মুদ্রার স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা। কম শুল্ক ও স্থির বিনিময় হার মার্কিন শিল্পপণ্যের বাজার বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখে। এই প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠে জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্যারিফস অ্যান্ড ট্রেড (জিএটিটি), যার উদ্দেশ্য ছিল আমদানি প্রতিবন্ধকতা কমানো। একই সময়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রতিষ্ঠিত হয় বৈশ্বিক মুদ্রা স্থিতিশীল রাখতে এবং প্রতিযোগিতামূলক অবমূল্যায়ন ঠেকাতে। পরবর্তী ‘প্যাক্স আমেরিকানা’ যুগ কর্ডেল হালের বিশ্বাসকে সত্য বলে মনে করায়—অনেকে মনে করেন ১৯৩০-এর অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদই তখনকার বড় ভূরাজনৈতিক পতনের কারণ। অথচ বাস্তবে এটি ছিল সেই পতনের উপসর্গ।

    যুদ্ধোত্তর সময়ে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পুনরুত্থান কখনোই সম্ভব হতো না যদি যুক্তরাষ্ট্র তার বাণিজ্য অংশীদারদের, বিশেষ করে ন্যাটো সদস্যদের, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা না দিত। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য প্রথম দিকে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সংহতির প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের মার্শাল পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছিল। তাদের যুক্তি ছিল, মার্কিন সুরক্ষা ছাড়া জাতীয় স্বয়ংসম্পূর্ণতাই নিরাপত্তার প্রধান শর্ত। তাই যাকে ‘লিবারেল অর্ডার’ বলা হয়, তা কোনো স্বতঃস্ফূর্ত বৈশ্বিক কাঠামো ছিল না; বরং যুক্তরাষ্ট্রের নকশা অনুযায়ী তৈরি এবং তার সামরিক শক্তি ও ডলারের আধিপত্য দ্বারা টিকে থাকা একটি ব্যবস্থা।

    হাল ডকট্রিনের পরিণতি আরও পরিষ্কার হয় প্যাক্স ব্রিটানিকা ও প্যাক্স আমেরিকানার অভিজ্ঞতায়। ইতিহাস দেখিয়েছে—শান্তি আসে না শুধু নিরস্ত্রীকরণ বা যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে। যেমন ১৯২৮ সালের কেলগ–ব্রায়ান চুক্তি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছিল। স্থায়ী শান্তি আসে তখনই, যখন কোনো এক বৈশ্বিক শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো শক্তি ও সদিচ্ছা উভয়ই রাখে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্বসূরি দ্য ইউরোপিয়ান কোল অ্যান্ড স্টিল কমিউনিটি গড়ে ওঠে সেই ধারণা নিয়ে যে অর্থনৈতিক পারস্পরিক নির্ভরতা আরেকটি বড় যুদ্ধকে অসম্ভব করে তুলবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন—যুদ্ধোত্তর ইউরোপের শান্তি বাজারব্যবস্থা নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরোধ–ক্ষমতার ওপর দাঁড়ানো ছিল। ফলে মুক্ত বাণিজ্যের বৈশ্বিক বিস্তার অদৃশ্য হাতের ফল নয়; এর পেছনে ছিল স্পষ্ট এক লৌহ–মুষ্টির নিরাপত্তা কাঠামো।

    শীতল যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক দুই ক্ষেত্রেই আরও গভীর ও বিস্তৃত বাণিজ্যপ্রবাহ গড়তে চেয়েছিল। ১৯৯৩ সালে নাফটা সমর্থনে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন যুক্তি দেন—এ চুক্তি শুধু সমৃদ্ধি আনে না, শান্তিও ছড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, ‘এই নতুন যুগে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা নির্ভর করবে বৈদেশিক বাণিজ্যবাধা কতটা ভাঙতে পারি তার ওপর—যতটা নির্ভর করে দূরের প্রতিরক্ষা প্রাচীর ভাঙার ওপর।’ কিন্তু ক্লিনটনের এই ধারণা বাস্তবে টেকেনি। নাফটার পর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যে কিছু নিরাপত্তা সহযোগিতা দেখা গেলেও তা মূলত আইন–শৃঙ্খলা ও অভিবাসন সংশ্লিষ্ট উদ্বেগ থেকে এসেছে, বাণিজ্যের প্রভাব থেকে নয়।

    এ সত্য আরও স্পষ্ট হয় যুক্তরাষ্ট্র–চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে। ২০০১ সালে চীনের ডব্লিউটিওতে যোগদান থেকে শুরু করে ২০১৬ সালে সুরক্ষাবাদী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়া পর্যন্ত—এই সময় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। অথচ একই সময়ে নিরাপত্তা সম্পর্ক অবনতির দিকে যায়। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আগ্রাসী অবস্থান, সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির বিস্তার এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘পিভট টু এশিয়া’ কৌশল দু’দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তোলে।

    ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। এমনকি ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে দুই দেশের বাণিজ্য ১৪ শতাংশ বাড়লেও কৌশলগত অবিশ্বাস কমেনি। উল্টো অর্থনৈতিক পারস্পরিক নির্ভরতা নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টরের ওপর নির্ভরতা কাটাতে হিমশিম খাচ্ছে, আর যুক্তরাষ্ট্র নির্ভরতা কমাতে চীনা বিরল ধাতুর বিকল্প খুঁজছে। কৌশলগত ঝুঁকি কমার বদলে উভয় পক্ষ গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে আরও অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

    মূল কথা হলো—হালের মতবাদ এখন কার্যত অকার্যকর। দক্ষিণ চীন সাগরের ঢেউয়ের মতো তা ডুবে গেছে বাস্তবতার নিচে। উদারপন্থীরা বলেন বাণিজ্য যুদ্ধকে ব্যয়বহুল করে তোলে—এ ধারণায় আংশিক সত্য থাকলেও বাস্তব অবস্থা দেখাচ্ছে পারস্পরিক নির্ভরতা ঠিক ততটাই সন্দেহ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করতে পারে।

    রুজভেল্টের সময় এটি সবচেয়ে ভালো বুঝেছিলেন ওয়েন্ডেল উইলকি। তিনি ১৯৪০ সালের নির্বাচনে রুজভেল্টের রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। ১৯৪২ সালে যুদ্ধকালীন চীন সফর শেষে উইলকি প্রশ্ন তোলেন, ‘আমরা কি চীনের সঙ্গে বৃহৎ বাণিজ্য করতে পারি যদি যৌথ সামরিক কৌশল গড়ে তুলতে না পারি?’ তাঁর বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—পারস্পরিক আস্থা ছাড়া বাণিজ্য প্রসার সম্ভব নয়। অর্থাৎ বাণিজ্যের সুফল টেকসই হয় কেবল তখনই, যখন সহযোগিতা ও নিরাপত্তার অনুভূতি অভিন্ন থাকে।

    উইলকি খুব পরিষ্কারভাবে বুঝেছিলেন—বাজারভিত্তিক অর্থনীতিকে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির সঙ্গে একীভূত করা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। বৈশ্বিক বাজারে যদি দাম আসল জোগান–চাহিদাকে প্রতিফলিত না করে, তাহলে উৎপাদন ও বাণিজ্যের স্বাভাবিক স্রোত বিকৃত হয়। এতে দক্ষ প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয় এবং অসন্তোষ বাড়ে।

    ১৯৪৪ সালে নিউইয়র্ক টাইমসে লেখা এক নিবন্ধে উইলকি সতর্ক করেছিলেন—যদি যুদ্ধের পর বিশ্বের বেশির ভাগ শিল্প ও বাণিজ্য রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রেও মুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠবে। তখন বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি সরকারি তত্ত্বাবধান, বরাদ্দ ও এমনকি মূল্যনির্ধারণের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সাজাতে হবে। কারণ রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি খরচের তোয়াক্কা না করেই পণ্য বিক্রি করতে পারে। ফলে দাম রাজনৈতিক হয়ে যায়। আর দাম যখন রাজনৈতিক হয়, তখন তা স্বভাবতই প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করে। নাৎসি আইনজ্ঞ কার্ল শ্মিটও এই বাস্তবতার কথা বলেছিলেন—যা রাজনৈতিক, তা অবধারিতভাবে বিরোধ তৈরি করে।

    নিরাপত্তা ছাড়া বাণিজ্য নয়:

    এই অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো—উদারনৈতিক বিশ্বব্যবস্থা, বিশেষত বৈশ্বিক বাণিজ্যের বিস্তার, টিকে ছিল মার্কিন নিরাপত্তা ছাতার ওপর। শীতল যুদ্ধের সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্ররা এ ব্যবস্থার বাইরে থাকলেও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে তাদের ভূমিকা ছিল প্রান্তীয়। বিপরীতে পশ্চিম ইউরোপ ও জাপান মার্কিন নিরাপত্তার ওপর ভরসা করে উদারীকরণকে গ্রহণ করে।

    শীতল যুদ্ধের পর বৈশ্বিকীকরণ আরও দ্রুত হয়। কিন্তু ডব্লিউটিওতে যোগদানের পর চীনের উত্থান উইলকির সেই সতর্কবাণীকেই সত্য প্রমাণ করে। বাজার ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা একত্র হলে বৈশ্বিক দাম বিকৃত হয় এবং তা রাজনৈতিক প্রভাবের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। উদারীকরণের পথ অনুসরণ করার বদলে চীন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকারকে ব্যবহার করেছে তার রাষ্ট্র–শিল্প কাঠামোকে শক্তিশালী করতে।

    প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের শিল্প উৎপাদনে অংশীদারত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ‘মেড ইন চায়না ২০২৫’ ও ‘চায়না স্ট্যান্ডার্ডস ২০৩৫’–এর মতো পরিকল্পনার মাধ্যমে কৌশলগত খাতে বিপুল সরকারি পুঁজি ঢালছে বেইজিং। ইস্পাত, সোলার প্যানেল, বৈদ্যুতিক গাড়ি—এসব খাতে অনুদাননির্ভর অতিরিক্ত উৎপাদন বাণিজ্যকে এখন ভূরাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার অস্ত্রে পরিণত করেছে। উইলকির সেই মন্তব্য—“দাম রাজনৈতিক হয়ে উঠতে পারে”—আজকের বৈশ্বিক বাস্তবতাকে নিখুঁতভাবে ব্যাখ্যা করে। ক্লজেভিৎসের ভাষায় বলতে গেলে, এখন বাণিজ্যও যুদ্ধের অন্য রূপ।

    আজকের চীনা অর্থনীতি ডব্লিউটিওতে যোগদানের সময়ের তুলনায় প্রায় ১৪ গুণ বড়। তাদের প্রতিরক্ষা বাজেটও নামমাত্র ডলারের হিসেবে ১০ গুণের বেশি বেড়েছে—বাস্তব হিসেবে আরও বেশি হতে পারে। চীনের এই বাড়তি সামরিক ক্ষমতা, রাশিয়ার প্রতিশোধপরায়ণ ভূরাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং বৈশ্বিকীকরণ প্রকল্পকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের গভীর হতাশা—এই তিন মিলিয়ে所谓 লিবারাল অর্ডারের নিরাপত্তাভিত্তিক কাঠামোকে গুরুতরভাবে দুর্বল করেছে। বিশ্বনেতারা বৈশ্বিকীকরণের পক্ষে কথা বলে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছাড়া বহুপক্ষীয় বাণিজ্যব্যবস্থা টিকে থাকবে কি না—তা এখন আর নিশ্চিত নয়।

    এ ভিত্তি যখন দুর্বল হতে থাকে, তখন ডিগ্লোবালাইজেশন মোটেও সহজ হয় না। যুক্তরাষ্ট্র–চীন অর্থনীতি বিচ্ছিন্ন করার চাপ রপ্তানিকারকদের ট্রানশিপমেন্ট বাড়াতে উৎসাহিত করবে, যাতে তারা পণ্যের মূল উৎস গোপন রাখতে পারে। এসব প্রক্রিয়া ধরা পড়লে—বা শুধু সন্দেহ দেখা দিলেও—নতুন শুল্ক ও দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞার স্রোত তৈরি হবে।

    নিয়মভিত্তিক বাণিজ্য রক্ষার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করছে আরও তিনটি বিষয়। প্রথমত, ডব্লিউটিওতে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ ব্যতিক্রমের ব্যবহার বাড়ছে। নিরাপত্তার নামে আরোপিত শুল্ককে বহু দেশ, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র, আদালতের পর্যালোচনার বাইরে মনে করে। দ্বিতীয়ত, ডব্লিউটিওর আপিল বিভাগ ২০১৯ সাল থেকে অচল। যুক্তরাষ্ট্র নতুন বিচারপতি নিয়োগে সম্মতি না দেওয়ায় প্রয়োজনীয় কোরাম গঠনই সম্ভব হয়নি। তৃতীয়ত, ‘সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত জাতি’ বা এমএফএন নীতির উল্লেখযোগ্য ক্ষয়। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে অস্থায়ী বাণিজ্য সমঝোতা করতে গিয়ে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক দেশ এই নীতি লঙ্ঘনে বাধ্য হয়েছে।

    ১৯৯১ সালে রাশিয়ার হুমকি কমে এলে ইউরোপীয়রা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল—ইইউ-এর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংহতি, পাশাপাশি বৈশ্বিক উদারনৈতিক গণতন্ত্রের বিস্তার—প্রচলিত ভূরাজনীতিকে অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়েছে। কিন্তু ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন দেখিয়ে দিল, শান্তি শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতকারী ভূমিকায়। এখন সেই ভূমিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অনীহা স্পষ্ট।

    এটি প্রতিফলিত করে মার্কিন ভোটারদের ক্রমবর্ধমান সেই ধারণাকে—লিবারাল বিশ্বব্যবস্থা ধরে রাখার খরচ আর লাভের চেয়ে বেশি। এই বিশ্বাসে নাটকীয় পরিবর্তন না এলে, এবং যুদ্ধোত্তর মিত্ররা নিজেদের নিরাপত্তা কাঠামো শক্তিশালী করতে না পারলে, পুরো ব্যবস্থা অপ্রত্যাবর্তনীয়ভাবে হারিয়ে যাওয়ার মুখে। সূত্র: বনিক বার্তা

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    অর্থনীতি

    বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনকুবেরদের সম্পদ ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

    December 18, 2025
    মতামত

    ঋণ ও হতাশায় কেন শুরু হয় অভিবাসন যাত্রা?

    December 18, 2025
    অর্থনীতি

    ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী কয়লার চাহিদা কমবে

    December 18, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.