মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রেক্ষাপটে একটি চ্যালেঞ্জ হলো স্বল্প সুদে ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানদণ্ডের মান্যতা নিশ্চিত করতে হবে- নগদসহায়তা ও ভর্তুকি প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শৃঙ্খলার আরোপ, শ্রম, পরিবেশ, জেন্ডার, কার্বন নিঃসরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে আরোপিত বিভিন্ন মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা বিধান করতে হবে। বাজার-সুবিধানির্ভর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা থেকে উৎপাদনশীলতা, দক্ষতা, ও মানদণ্ড-মান্যতানির্ভর প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় উত্তরণ করতে হবে। বাণিজ্যনীতি ও শিল্পনীতির মধ্যে সমন্বয় বিধান করতে হবে।…
যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল অনুঘটক হলো বিনিয়োগ। বিনিয়োগ ছাড়া প্রবৃদ্ধি হয় না। আর দ্বিতীয় কথা হলো- আমি কত ইউনিট বিনিয়োগ করে ১ শতাংশ জিডিপি গ্রোথ করতে পারি। আমি যদি রেশিও কমাতে পারি, তার মানে হলো- আমার উৎপাদনশীলতা ভালো। আমি যদি ৪ ইউনিট দিয়ে ১ শতাংশ জিডিপি গ্রোথের পরিবর্তে ৩ ইউনিট বিনিয়োগ করে ১ শতাংশ জিডিপি গ্রোথ করতে পারি, এটাই উৎপাদনশীলতা। এ উৎপাদনশীলতাটুকু জরুরি। আমাদের দেশে যেটা দেখছি, ২৪-২৫ শতাংশেরর মধ্যে বিনিয়োগ থমকে আছে কয়েক বছর। ক্রেডিট তারা যা নেন ব্যাংক থেকে বিনিয়োগের জন্য, এখানেও স্থবিরতা দেখছি। আমরা দেখছি যে, আমদানি ক্রেডিটের মেশিনারি করে আমদানির মাধ্যমে যন্ত্রপাতি এনে যে বিনিয়োগ করা হয়, সেই আমদানি নিয়েও একটা স্থবিরতা আছে। সবটা মিলে বিনিয়োগে একটা বড় ধরনের স্থবিরতা আছে। এর সঙ্গে কর্মসংস্থান, শোভন কর্মসংস্থান, আয় বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির চাপকে সামাল দেওয়া- অনেক কিছু জড়িত। সুতরাং, আমাদের অবশ্যই বিনিয়োগে চাঞ্চল্য আনতে হবে।
অনেক উন্নয়নশীল দেশ তাদের উন্নয়ন পথযাত্রায় একটা পর্যায়ে পৌঁছানোর পরবর্তীতে আর উচ্চতর পর্যায়ে উত্তরণ করতে সক্ষম হচ্ছে না। যেমন, নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ করল, কিন্তু সেখান থেকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারছে না, বা উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ করতে সক্ষম হলেও উচ্চ আয়ের দেশে যেতে পারছে না। এটাকেই বলে মধ্য আয়ের ফাঁদ- প্রথমটিকে বলা হয় নিম্নমধ্যম আয়ের ফাঁদ, আর দ্বিতীয়টিকে বলা হয় উচ্চমধ্যম আয়ের ফাঁদ। আলোচনা অগ্রসর করার আগে বিভিন্ন ‘আয়’-এর সীমারেখা সম্পর্কে বলা দরকার।
মাথাপিছু জাতীয় আয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত এ সীমারেখাগুলো বিশ্ব ব্যাংক বিভিন্ন বিবেচনার প্রেক্ষাপটে নির্ধারণ করে থাকে, যা বৈশ্বিক অগ্রগতির নিরিখে প্রতি বছর পর্যালোচনাসাপেক্ষে পুনর্নির্ধারণ করা হয়। যেমন ২০২৫-২৬ সালের জন্য এগুলো ছিল নিম্নরূপ- নিম্ন আয়: ১ হাজার ১৩৫ ডলার বা তার নিচে, নিম্নমধ্যম আয়: ১১৩৬-৪৪৯৫ ডলার, উচ্চমধ্যম আয়: ৪ হাজার ৪৯৬ থেকে ১৩ হাজার ৯৩৫ ডলার এবং উচ্চ আয়: ১৩ হাজার ৯৩৬ বা তার ওপরে। অ্যাটলাস মেথড অনুযায়ী মার্কিন ডলারে প্রতি বছর জুলাই মাসে বিশ্বব্যাংক এ হিসাব দিয়ে থাকে।
প্রশ্ন হলো, কেন অধিক সংখ্যক দেশ উন্নয়নের পথপরিক্রমায় একটা ধাপে থমকে যায় এবং প্রবৃদ্ধির গতিধারা অব্যাহত রেখে পরবর্তী ধাপে উত্তরণ করতে সক্ষম হয় না। বাংলাদেশের জন্য এ প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কারণে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নির্ধারিত মাপকাঠিতে জাতীয় আয়ের ভিত্তিতে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ করে, তখন এ ধাপের জন্য মাথাপিছু আয়ের সীমা ছিল ১ হাজার ৪৬ থেকে ৪ হাজার ১২৫ ডলার। সে বছর বিশ্বব্যাংকের অ্যাটলাস মেথড অনুযায়ী বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ২৮০ ডলার। ২০২৪ সালে এটি এসে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২০ ডলার। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রেক্ষাপটে একটি চ্যালেঞ্জ হলো স্বল্প সুদে ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা। যেমন ২০১৫ সালে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার কারণে বাংলাদেশ আগের মতো (নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে) সহজ শর্তে ঋণ পাচ্ছে না।
আগে বিশ্বব্যাংকের আইডিএ ঋণ ছিল বাংলাদেশের অন্যতম সূত্র, সেখানে সুদের হার শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ, গ্রেস পিরিয়ড (এখন কেবল সুদ পরিশোধ হয়) ছিল ১০-১৫ বছর ও রিপেমেন্ট পিরিয়ড (যখন সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হয়) ছিল ৩০-৪০ বছর। এখন বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ব্ল্যান্ড দেশ (যা স্যাপ-দেশ) যখন সহজ ও অ-সহজ দুই ধরনের ঋণ পেতে পারে (এবং ক্রমান্বয়ে শেষেরটি বাড়ছে এবং বাংলাদেশে মূলত: বাজারভিত্তিক শর্তে বৈদেশিক ঋণ পাচ্ছে (এসব কঠিন শর্তের মধ্যে আছে ৩-৫% হারে ঋণের সুদ, গ্রেস পিরিয়ড ৫ থেকে ১০ বছর ও রিপেমেন্ট পিরিয়ড ১৫ থেকে ২০ বছর)।
ফলে বর্তমানে ও আগামীতে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ অধিসেবার চাপ বাড়ছে/বাড়বে। যেমন, কয়েক বছর আগেও সেখানে প্রতি বছর বৈদেশিক ঋণ পরিষেবার পরিমাণ ছিল ২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি, সেখানে সাম্প্রতিক সময়ে এ সংখ্যা ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। যেসব খাতে ঋণ গ্রহণ করা হচ্ছে, যেসব প্রকল্পে ঋণ টাকা ব্যবহৃত হচ্ছে, তার নির্বাচন ও অগ্রাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে এখন আরও সতর্ক হওয়ার সময় হয়েছে। বিশেষত: যখন সাম্প্রতিক অতীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়নের কারণে যেসব প্রকল্প থেকে টাকায় রিটার্ন আসে সেগুলোর ঋণ পরিশোধের দায়ভার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে (এ কথাটি বিদ্যুৎ-জ্বালানি-যোগাযোগ খাতের প্রকল্পের জন্য সমধিকভাবে প্রযোজ্য)। মধ্যম আয়ের ফাঁদকে যে অনেক সময় ঋণ ফাঁদের সঙ্গে সমার্থক করে দেখা হয়, তার মধ্যে যৌক্তিকতা আছে।
এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে যখন শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা থাকবে না, তখন বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী শিল্পকে বাড়তি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে বিশ্ব বাজারে। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানদণ্ডের মান্যতা নিশ্চিত করতে হবে- নগদসহায়তা ও ভর্তুকি প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শৃঙ্খলার আরোপ, শ্রম, পরিবেশ, জেন্ডার, কার্বন নিঃসরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে আরোপিত বিভিন্ন মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা বিধান করতে হবে। বাজার-সুবিধানির্ভর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা থেকে উৎপাদনশীলতা, দক্ষতা, ও মানদণ্ড-মান্যতানির্ভর প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় উত্তরণ করতে হবে। বাণিজ্যনীতি ও শিল্পনীতির মধ্যে সমন্বয় বিধান করতে হবে।
পরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে ট্রান্সপোর্ট করিডরগুলোকে ইকোনমিক করিডরে রূপান্তর করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে, সাশ্রয়ীভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য কর্মকাণ্ড পরিচালনা নিশ্চিত করে কস্ট অব ডোয়িং বিজনেস হ্রাস করতে হবে এবং ব্যবসা-পরিবেশ উন্নত করতে হবে। বিনিয়োগ-যোগাযোগ-বাণিজ্যের ত্রিমাত্রিক সম্পর্কের মাধ্যমে তা সরবরাহ সক্ষমতা বৃদ্ধি, পণ্য বৈচিত্র্যকরণ ও বাজার বহুধাকরণের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরকে মসৃণ ও টেকসই করার জন্য যে স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি (এসটিএস) প্রণয়ন করেছে তাতে এসব ক্ষেত্রে ১৫৭টি লক্ষ্য নির্দিষ্ট কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। কার কী দায়িত্ব তা উল্লিখিত আছে এবং কখন তা ডেলিভারি দেওয়া হবে তাও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। সিঙ্গেল উইনডো স্থাপন, লজিস্টিক পলিসির বাস্তবায়ন, এপিআই শার্ক প্রতিষ্ঠা (বিশেষত, যেহেতু এলডিসি উত্তরণের ফলে ওষুধশিল্পের ওপরে বড় নেতিবাচক অভিঘাত পড়বে) ইত্যাদিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কালবিলম্ব না করে উদ্যোগ-উদ্যম গ্রহণ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার এসটিএস বাস্তবায়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এগুলোকে যৌক্তিক সমাপ্তিতে নিতে হবে।
বাংলাদেশ ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। অনেকে বলে থাকেন বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে উত্তরণ করে মধ্যম আয়ের দেশেও গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হবে। এ ধারণাটি ভুল। মধ্যম আয়ের দেশের বিশ্বব্যাংকের দ্বারা নির্ধারিত; অন্যদিকে এলডিসি গ্রুপ জাতিসংঘের দ্বারা সংজ্ঞায়িত। এলডিসি থেকে উত্তরণের পরবর্তীতে বাংলাদেশ এলডিসি-বহির্ভূত উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিগণিত হবে। আর যেটা আগেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশের (নিম্ন) মধ্যম আয়ের গ্রুপে উন্নীত হয়েছে ২০১৫ সালে। যেখানে ‘মধ্যম-আয়’ উত্তরণ সংজ্ঞায়িত শুধু মাথাপিছু জাতীয় আয়ের ভিত্তিতে, সেখানে এলডিসি উত্তরণ সংজ্ঞায়িত হয় তিনটি সূচকের ভিত্তিতে- মাথাপিছু জাতীয় আয় (বর্তমানে ১ হাজার ৩০৬ ডলার বা তার ওপরে), মানবসম্পদ সূচক (৬৬ বা তার ওপর) এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতার সূচক (৩২ বা তার নিচে)।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ‘মধ্যম-আয় ফাঁদ’-এর আলোচনায় এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, বাংলাদেশকে দ্বৈত-উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আগামীতে অগ্রসর হতে হবে- মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ (যা ইতোমধ্যে ২০১৫ সালে সংঘটিত হয়েছে) এবং এলডিসি উত্তরণ (যা আগামী বছর হতে যাচ্ছে)। এ দুই উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে এবং তা করতে সক্ষম না হলে বাংলাদেশ তার পরবর্তী পর্যায়ে, অর্থাৎ উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে দ্রুত উন্নীত হতে সমর্থ হবে না। ফলে নিম্নমধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা, প্রাতিষ্ঠানিক, শক্তিমত্তা ও সংস্কার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতার ওপর নির্ভর করে পরবর্তী ধাপে অর্থাৎ উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ নিশ্চিত করতে হবে। কাজটি বেশ কঠিন। এ কারণেই প্রথমেই বলা হয়েছে যে অনেক দেশ এটা করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এর ফলে তারা নিম্ন ও উচ্চমধ্যম আয়ের ফাঁদে বছরের পর বছর আটকে পড়ে আছে।
ফিলিপাইন নিম্নমধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে আছে ৩৮ বছর। দক্ষিণ এশিয়ার ভুটান (১৬ বছর), ভারত (১৫ বছর) ও পাকিস্তান (১৪ বছর)-এর কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। উচ্চমধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে পড়া দেশের মধ্যে থাইল্যান্ড (১২ বছর), মালয়েশিয়া (৩০ বছর), ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার (৩৫ বছর) কথা উদাহরণ হিসেবে আনা যায়। যদিও এ দুই ফাঁদে আটকে থাকা দেশের তালিকা বেশ দীর্ঘ।
সংশ্লিষ্ট তথ্যউপাত্তের ভিত্তিতে উল্লিখিত দেশগুলোর ক্ষেত্রে মধ্যম আয়ের ফাঁদের কিছু সাধারণ অনুষ্ঠানের কথা বলা সম্ভব: অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন সাধনে দুর্বলতা, অনেক খাতে বিশিল্পায়ন, কৃষি খাতকে শিল্প খাতের সঙ্গে অগ্র ও পশ্চাৎ সংযোগের মাধ্যমে সংযুক্ত করতে না পারা, অকাঠামোগত দুর্বলতা, প্রযুক্তি ও দক্ষতার সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে শ্লথ অগ্রগতি, দুর্বল অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ, ঋণের ফাঁদে পড়া, শিক্ষা-সংস্কৃত-সামাজিক সুরক্ষা খাতে সর্বোপরি মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে সক্ষম না হওয়া, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় শক্তিশালী অবস্থান থেকে সংযুক্ত হতে না পারা। বাংলাদেশকে এসব দেশের উন্নয়ন অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং দ্বৈত উত্তরণকে টেকসই করে উচ্চমধ্যম আয়ের ধাপে উন্নীত হওয়ার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশের দ্বৈত-উত্তরণ এমন সময়ে হতে যাচ্ছে যখন বৈশ্বিক পরিবেশ একেবারেই অনুকূল নয়। ট্রাম্পের তথাকথিত ‘পাল্টাপাল্টি শুল্ক’ আরোপ এক অনানুকূল বিশ্ব পরিস্থিতিরই ইঙ্গিতবাহক। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থাধীন রুলস বেসড বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে; ভূ-অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে এ উত্তরণ সময় পার হতে হবে। আঞ্চলিক সহযোগিতার গভীরায়ণ করতে হবে, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক জোট গঠনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বর্তমানে জাপান ও সিঙ্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে এ ধরনের জোট গঠনের আলোচনা চলমান। এগুলোর সম্পাদন ও সমাপ্তিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। দেশের নেগোসিয়েশন সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রয়োজন সামষ্টিক ও খাতভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করে, সুশাসনভিত্তিক প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও মানবসম্পদ উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে সামনে এগিয়ে চলা। ঋণ ফাঁদ ও মধ্যম-আয় ফাঁদ পরিহার করে সাফল্যজনকভাবে দ্বৈত উত্তরণ করার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে।
লেখক: সম্মাননীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)

