পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের জন্য ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করেছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে জীবন বিমা খাতের একমাত্র প্রতিষ্ঠান পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স চার বছর পার হলেও এই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। বর্তমানে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার রয়েছে মাত্র ২৩.৭০ শতাংশ। বিষয়টি নিয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে, এমন নির্দেশনা থাকলেও পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স এখনও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে রয়েছে মাত্র ২৩.৭০ শতাংশ শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২০.৪৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৫৫.৮৭ শতাংশ শেয়ার।
কোম্পানিটি ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে বিএসইসির কাছে পরিকল্পনা জমা দিলেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। ২০০৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৬০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানির লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ১,৫২৪ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ কোটি টাকা কম। সর্বশেষ কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৩৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক সালাউদ্দিনের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চার কর্মকর্তা—ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বি এম ইউসুফ আলী, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বি এম শওকত আলী ও মোস্তফা হেলাল কবির এবং জ্যেষ্ঠ উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর ফিরোজের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, উল্লিখিত কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা দেশ ত্যাগ করতে পারেন এমন আশঙ্কায় দুদক এই নিষেধাজ্ঞার আবেদন করে এবং আদালত তা মঞ্জুর করে।
২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের পর, ২০১১ সালে বিএসইসি উদ্যোক্তা পরিচালকদের জন্য ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করে। ২০১৯ সালে এই শর্ত আরও কঠোর করে বলা হয়, শেয়ার বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া, বোনাস শেয়ার দেওয়া কিংবা উপহার হিসেবে শেয়ার হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা হবে। ২০২০ সালে ৯টি কোম্পানির ১৭ জন পরিচালককে এই শর্ত না মানায় অপসারণ করা হয় এবং উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করলে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিএসইসি ২৫টি কোম্পানিকে এক মাসের মধ্যে এই শর্ত পূরণের নির্দেশ দেয়, কিন্তু মাত্র একটি কোম্পানি তা করতে সক্ষম হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বর্তমানে পপুলার লাইফ ও সন্ধানী লাইফ ছাড়া অন্য সব জীবন বীমা কোম্পানি ৩০ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার উদ্যোক্তাদের হাতে রেখেছে।
তালিকাভুক্ত জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে সর্বাধিক ৬০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে প্রগ্রেসিভ লাইফে ৩৮.৮২ শতাংশ, সানলাইফে ৬৫.৬৬ শতাংশ, ডেল্টা লাইফে ৪১ শতাংশ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফে ৩৯.৮৯ শতাংশ, মেঘনা লাইফে ৩০.১১ শতাংশ, ন্যাশনাল লাইফে ৫৫.৮৮ শতাংশ, পদ্মা ইসলামী লাইফে ৩১.৫৬ শতাংশ, প্রগতি লাইফে ৪০.৬২ শতাংশ, প্রাইম ইসলামী লাইফে ৩৬.০৮ শতাংশ, রূপালী লাইফে ৩২.০৭ শতাংশ, সোনালী লাইফে ৫৪.৮৫ শতাংশ এবং ট্রাস্ট লাইফে ৫১.৩৫ শতাংশ উদ্যোক্তাদের হাতে রয়েছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কামাল বলেন, “কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। এখন অনেক কোম্পানি সেই শর্ত মানছে না। কমিশন বিষয়টি জানে এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
এ বিষয়ে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সচিব ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা হেলাল কবিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি এবং পাঠানো বার্তারও কোনো উত্তর দেননি। কোম্পানির চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম রিংকুর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি ফলে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় বিএসইসি কী ব্যবস্থা নেয় সেটিই এখন দেখার বিষয়।

