বিশ্বজুড়ে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাওয়ায় যখন প্রযুক্তি জগত সরগরম, তখনও পুরোনো এক নায়ক তার নিজস্ব পথে শীর্ষে পৌঁছেছে—অ্যাপল। ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্য ছুঁয়ে আবারও বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান প্রযুক্তি কোম্পানির মুকুট পরেছে তারা।
মঙ্গলবার মাত্র ০.১ শতাংশ শেয়ারমূল্য বাড়লেও, সেটাই অ্যাপলকে নিয়ে গেছে এক নতুন উচ্চতায়। কারণ, সদ্য বাজারে আসা আইফোন ১৭ প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে, বিশেষ করে চীনের বাজারে। বিশ্লেষকদের মতে, এই চীনা বিক্রিই অ্যাপলের পুনরুত্থানের সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি।
তবে বছরের শুরুতে চিত্রটা ছিল একেবারেই উল্টো। ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি, এআই উন্নয়নে ধীরগতি, আর দেশীয় উৎপাদনের চাপ—সব মিলিয়ে অ্যাপলের শেয়ার তখন নিম্নগামী ছিল। একদিনে ৩১০ বিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্য হারানো সেই দিনটিও খুব বেশি পুরোনো নয়।
তবু এক বছরের মধ্যে পরিস্থিতি ঘুরে গেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, অ্যাপল হয়তো এআই দৌড়ে পিছিয়ে, কিন্তু তাদের একমাত্র অস্ত্র আইফোন-ই যথেষ্ট ওয়াল স্ট্রিট ও সাধারণ ক্রেতা—দু’পক্ষকেই খুশি রাখতে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৪ সালে শেয়ারমূল্য ৩০ শতাংশেরও বেশি বাড়লেও, এ বছর অ্যাপলের বৃদ্ধি তুলনামূলক ধীর—মাত্র ৭ শতাংশ। তবু সেই বৃদ্ধিই যথেষ্ট ছিল প্রতিষ্ঠানটিকে এনভিডিয়া ও মাইক্রোসফটের পাশে ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্লাবে ফিরিয়ে আনতে।
অ্যাপলের এই অর্জন কেবল আর্থিক সাফল্য নয়, বরং বাজারে ব্র্যান্ড আস্থার এক শক্ত বার্তা। কারণ, যেখানে এনভিডিয়া এআই চিপের জগতে রাজত্ব করছে, মাইক্রোসফট ক্লাউডে বিপ্লব ঘটাচ্ছে—সেখানে অ্যাপল এখনো ভরসা রাখছে মানুষের হাতে ধরা সেই আইফোনের ওপর।
২০১৮ সালে ১ ট্রিলিয়ন, ২০২০ সালে ২ ট্রিলিয়ন, ২০২২ সালে ৩ ট্রিলিয়ন—অ্যাপলের প্রতিটি মাইলফলক যেন প্রযুক্তি ইতিহাসের নতুন অধ্যায়। আর এখন ২০২৫-এ এসে ৪ ট্রিলিয়ন অতিক্রম করা মানে, তারা আবারও প্রমাণ করল—নবপ্রজন্মের প্রযুক্তির দৌড়ে নয়, নিজের ধারায়ই তারা রাজা।
ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক ড্যান আইভসের ভাষায়, “আইফোন ১৭ অ্যাপলকে আবারও সাফল্যের ট্র্যাকে ফিরিয়েছে। এখন বাজারের দৃষ্টি অ্যাপলের বড় এআই পরিকল্পনার দিকে।”
তবে অ্যাপল এখনও দেখাতে চায়—এআই হোক বা না হোক, ব্র্যান্ডের শক্তি আর ভোক্তার ভালোবাসাই তাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ।

