বিশ্বের বিজ্ঞানীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে এক গ্রহাণু যার নাম ‘২০২৪ ওয়াইআর৪’। তারা জানিয়েছে, এই গ্রহাণুটি ২০৩২ সালে সৌরজগতের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে। যদিও এর আঘাতের সম্ভাবনা কম, কিন্তু সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীতে আঘাত হানার সম্ভাবনা মাত্র ২.১ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৭.৯ শতাংশ সম্ভাবনা আছে যে এটি নিরাপদে পাশ কাটিয়ে যাবে। কিন্তু ২ শতাংশ ঝুঁকিও অনেকে ছোট করে দেখছেন না। সম্ভাব্য আঘাতের তারিখ হতে পারে ২০৩২ সালের ২২ ডিসেম্বর।
গ্রহাণুর গতিপথ, আকার এবং গতি অনুযায়ী সম্ভাব্য আঘাত স্থানের সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। নাসার ক্যাটালিনা স্কাই সার্ভে প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার ডেভিড র্যাঙ্কিন জানান, “যদি ২ শতাংশ সম্ভাবনা সত্যি হয়, তাহলে আঘাত হতে পারে দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরাংশ, প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণ এশিয়া, আরব সাগর বা আফ্রিকার কিছু এলাকায়।” ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইথিওপিয়া, সুদান, নাইজেরিয়া, ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া ও ইকুয়েডর।
‘২০২৪ ওয়াইআর৪’ প্রথম আবিষ্কার হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে, হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি থেকে। এর ব্যাস ১৩০ থেকে ৩০০ ফুটের মধ্যে, এবং টরিনো স্কেলে হুমকির মাত্রা ৩ নম্বর। এটি ২০০৪ সালের ‘অ্যাপোফিস’ গ্রহাণুর পরে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, গ্রহাণুটি যদি আঘাত হানে, বিস্ফোরণের শক্তি হবে প্রায় ৮ মিলিয়ন টন টিএনটির সমান—হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার চেয়ে ৫০০ গুণ বেশি। বিস্ফোরণ ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রভাব ফেলতে পারে। তবে সঠিক সময়ে সতর্ক করা গেলে মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব।
অ্যারিজোনার লওয়েল অবজারভেটরির গ্রহাণু বিশেষজ্ঞ টেডি কারেটা বলেন, “গ্রহাণুর আঘাতের সম্ভাবনা খুবই কম। যদি কখনো আশঙ্কা দেখা দেয়, আমরা আগেভাগেই মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরাতে পারব।”
২০০৪ সালে ‘অ্যাপোফিস’ নামের একটি গ্রহাণুও পৃথিবীর দিকে আসার ভয় তৈরি করেছিল। তখন সম্ভাব্য আঘাতের সম্ভাবনা ছিল ২.৭ শতাংশ। পরে গবেষণায় দেখা যায়, এটি নিরাপদে পাশ কাটিয়ে যায়।
জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই ‘প্ল্যানেটারি ডিফেন্স প্রটোকল’ সক্রিয় করেছে। বর্তমানে টরিনো স্কেলে ‘২০২৪ ওয়াইআর৪’-এর হুমকি স্তর ৩। বিজ্ঞানীরা এর গতিপথ নজরে রাখছেন এবং প্রয়োজনে ‘কাইনেটিক ইমপ্যাক্ট’ পদ্ধতিতে গ্রহাণুর গতিপথ পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছেন। নাসা ২০২৩ সালে ডার্ট মিশনের মাধ্যমে এই প্রযুক্তির সফল পরীক্ষা চালিয়েছিল, যা ভবিষ্যতে গ্রহাণু প্রতিরোধে কাজে লাগবে।

