এই সপ্তাহের রাতগুলো হবে একটু আলাদা—কারণ আজ রাতেই দেখা যাবে বছরের সবচেয়ে বড় ও উজ্জ্বল চাঁদ, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় পরিচিত ‘সুপারমুন’ নামে। চাঁদের এমন ঝলমলে রূপ বছরে একবারই দেখা মেলে, যখন এটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থান করে পূর্ণিমার সময় উদিত হয়।
২০২৫ সালের পরপর তিনটি সুপারমুনের মধ্যে আজ দেখা মিলবে দ্বিতীয়টির। কাকতালীয়ভাবে আজই যুক্তরাজ্যে উদযাপিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ‘বনফায়ার নাইট’, ফলে আজকের রাত হবে সত্যিকারের আলো, রঙ আর জ্যোৎস্নার এক উৎসব।
চাঁদের কক্ষপথ সম্পূর্ণ বৃত্তাকার নয়, বরং কিছুটা উপবৃত্তাকার (elliptical)। ফলে এক পর্যায়ে এটি পৃথিবীর কাছাকাছি আসে—যাকে বলে ‘পেরিজি’, আর অন্য প্রান্তে দূরে সরে যায়—যাকে বলে ‘অ্যাপোজি’।
পেরিজিতে চাঁদ পৃথিবী থেকে থাকে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার মাইল দূরে, আর অ্যাপোজিতে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার মাইল দূরে।
যখন পূর্ণিমা ঠিক সেই সময় ঘটে, যখন চাঁদ পেরিজির ৯০ শতাংশের ভেতরে অবস্থান করে—তখনই সেটি হয় সুপারমুন। এ সময় আকাশে চাঁদকে সাধারণ সময়ের তুলনায় বেশি বড় ও উজ্জ্বল দেখা যায়।
নভেম্বর মাসের এই সুপারমুনকে বলা হয় ‘বিভার মুন’ (Beaver Moon)। বহু শতাব্দী আগে উত্তর আমেরিকার আদিবাসীরা এই নাম দিয়েছিলেন, কারণ এই সময় বিভাররা শীতের প্রস্তুতিতে বাঁধ তৈরি ও খাদ্য সংগ্রহে সবচেয়ে ব্যস্ত থাকে।
১৬শ শতাব্দীতে ইউরোপেও বিভার শিকারের প্রচলন ছিল, যা পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের প্রকৃতি থেকে এই প্রাণীটিকে বিলুপ্ত করে দেয়। তবুও ‘বিভার মুন’ নামটি আজও সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে।
এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে চাইলে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো পরিষ্কার আকাশ। স্থানীয় আবহাওয়ার রিপোর্টে নজর রাখলে জানা যাবে কোথায় আকাশ সবচেয়ে স্বচ্ছ থাকবে। বিশেষ করে সূর্যাস্তের পরপরই আকাশের দিকে তাকালে দেখা মিলবে সেই বিশাল, রূপালি ও উজ্জ্বল পূর্ণিমা চাঁদের।
১৯৭৯ সালে জ্যোতিষী রিচার্ড নোল প্রথমবারের মতো “সুপারমুন” শব্দটি ব্যবহার করেন। তিনি বলেছিলেন, যখন পূর্ণিমা চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসে, তখনই সেটি ‘সুপার’ হয়ে ওঠে—তার দীপ্তি ও উপস্থিতিতে।
এ বছরের শেষ সুপারমুন দেখা যাবে ৪ ডিসেম্বর, অর্থাৎ আজকের রাতই বছরের দ্বিতীয় ও সবচেয়ে উজ্জ্বল পূর্ণিমা উপভোগের সেরা সুযোগ। তাই যারা আকাশ ভালোবাসেন, তাদের জন্য আজ রাত হতে যাচ্ছে এক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক সৌন্দর্যের উৎসব।

