বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট সংযোগে নতুন এক অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে। দেশে প্রথম বেসরকারি উদ্যোগে সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্ক চালুর পথে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্যাবল সিস্টেম (BPCS) কনসোর্টিয়াম নোকিয়ার সঙ্গে সাবমেরিন লাইন টার্মিনাল ইকুইপমেন্ট (SLTE) সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন BPCS-এর প্রতিনিধিদল: মেটাকোর সাবকম লিমিটেডের সিইও আমিনুল হাকিম, সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেডের এমডি ও সিইও আরিফ আল ইসলাম এবং সিডিএননেট কমিউনিকেশনস লিমিটেডের সিইও মো. মাশিউর রহমান। নোকিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রশান্ত মালকানি ও সুমন প্রসাদ। এছাড়া নোকিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেমন জিবিতেশ নয়াল, রাহুল দেরওয়ানি, মোহাম্মদ আর ইসলাম ও ক্রিস্টোফার স্যামুয়েলও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিকও ছিলেন, যার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ভারতীয় ফিনল্যান্ড দূতান্তি এন্টি হারলেভি এবং জাপানি দূতাবাসের প্রতিনিধি ছিলেন। এতে প্রমাণিত হলো, প্রকল্পটি আন্তর্জাতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথ চাহিদা ও নতুন কেবলের প্রয়োজন
কনসোর্টিয়াম জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ৯,০০০ গিগাবিট প্রতি সেকেন্ড (Gbps) ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে। ২০২৭ সালের মধ্যেই এটি প্রায় ২০,০০০ Gbps এবং ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৫০,০০০ Gbps পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে সাবমেরিন কেবল অবকাঠামোয় বেসরকারি বিনিয়োগের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং জুন ২০২৬-এর পর আরও ১,২০০–১,৩০০ কোটি টাকা ব্যয় করে তিনটি কেবল জোড়া চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বর্তমানে দেশের ৬০% এর বেশি ব্যান্ডউইথ ভারত থেকে আন্তর্জাতিক স্থল কেবলের মাধ্যমে আসে, যা বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা প্রস্থান ঘটাচ্ছে। নতুন সিঙ্গাপুর–কক্সবাজার রুট তিনটি কেবল জোড়া নিয়ে আসার ফলে দেশের ব্যান্ডউইথ নির্ভরতা কমবে এবং আত্মনির্ভরতার দিকে আরও এক ধাপ এগোবে।
নোকিয়ার প্রযুক্তি ও সম্ভাব্য সুবিধা
নোকিয়ার SLTE প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ডেটা সেন্টারে বিদ্যুৎ খরচ কমবে, স্থান বাঁচবে এবং নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা উন্নত হবে, যা অপারেশনাল খরচ কমাতে সাহায্য করবে। কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনে নোকিয়ার সরঞ্জাম ব্যবহারের ফলে উচ্চ মানের সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।
পরিষেবা উন্নয়নের পাশাপাশি এই প্রযুক্তি দীর্ঘমেয়াদিভাবে ইন্টারনেট সেবার খরচ কমিয়ে ব্যবহারকারীদের জন্য সাশ্রয়ী করে তুলতে পারে।

