বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ১৩টি শিল্পনগরী ও শিল্পপার্ক স্থাপন করেছে। তবে সিরাজগঞ্জ ছাড়া বাকি শিল্পনগরীগুলোয় উদ্যোক্তাদের আগ্রহ নেই। প্রতিষ্ঠার চার থেকে ছয় বছর পার হলেও অনেক শিল্পনগরীতে এক-তৃতীয়াংশ প্লটও বরাদ্দ হয়নি। নতুন আট শিল্পনগরীর ৯১৬টি প্লট এখনো খালি পড়ে আছে। বারবার বিজ্ঞপ্তি দিলেও উদ্যোক্তা পাচ্ছে না বিসিক।
বিসিকের হিসাব বলছে, মুন্সিগঞ্জের বৈদ্যুতিক পণ্য ও হালকা প্রকৌশল শিল্পনগরীতে সাড়ে চার বছরে মাত্র ৮ শতাংশ প্লট বরাদ্দ হয়েছে। রাজশাহী-২ বিসিক শিল্পনগরীতে এখনো ৮৩ শতাংশ প্লট খালি। ২০১৯ সালের পর স্থাপিত শিল্পনগরীগুলোর মধ্যে তিনটিতে মাত্র ৫৫০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির তথ্যমতে, নতুন সাত শিল্পনগরীতে উৎপাদনে গেছে মাত্র ৩৭টি প্রতিষ্ঠান।
গত জুনে দেশের ১৯টি শিল্পনগরী ও পার্কে ৯৭৫টি প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি দেয় বিসিক। এর মধ্যে নতুন আট শিল্পনগরীতে ফাঁকা প্লট ৯১৬টি।
- মুন্সিগঞ্জ শিল্পনগরীতে ৩৩২টি প্লট খালি, বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ২৯টি (৯২ শতাংশ খালি)।
- রাজশাহী-২ শিল্পনগরীতে ২৮৬ প্লটের মধ্যে ২৩৭টি খালি (৮৩ শতাংশ খালি)।
- গোপালগঞ্জ শিল্পনগরী (সম্প্রসারণ) ১৩৮ প্লটের মধ্যে ৯৯টি খালি (৭২ শতাংশ খালি)।
- মাদারীপুর শিল্পনগরীতে (সম্প্রসারণ) ৪৬ প্লটের মধ্যে ২৬টি খালি (৫৬ শতাংশ খালি)।
- চুয়াডাঙ্গায় ৭৮ প্লটের মধ্যে ৫১টি খালি (৬৫ শতাংশ খালি)। মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে উৎপাদন শুরু করেছে।
- বরগুনা শিল্পনগরীর ৬০ প্লটের মধ্যে ২৩টি খালি, উৎপাদনে গেছে মাত্র ছয়টি প্রতিষ্ঠান।
- মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ১২১ প্লটের মধ্যে ৬৫টি খালি।
- সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্কে ৮৩টি প্লট এখনো বরাদ্দ হয়নি।
পুরনো শিল্পনগরীগুলোর পরিস্থিতিও ভালো নয়। সুনামগঞ্জে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত শিল্পনগরীর ১১৬ প্লটের মধ্যে ৮৫টি বরাদ্দ হলেও উৎপাদনে গেছে মাত্র ৩৭টি প্রতিষ্ঠান। উদ্যোক্তারা বলছেন, বিসিক শিল্পনগরীতে জমির দাম স্থানীয় বাজারের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি অথচ মৌলিক সুযোগ-সুবিধা নেই। চুয়াডাঙ্গার শিল্পনগরীতে কারখানা করা সাজেন্টাস কোম্পানির ব্যবস্থাপক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ড্রেনেজ ও রাস্তার অবস্থা খারাপ, বৃষ্টিতে পানি জমে যায়, প্লট নিচু হওয়ায় ভরাট করা হয়নি। বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগও উদ্যোক্তাদের নিজেদের খরচে নিতে হয়েছে। রাজশাহীর একজন উদ্যোক্তা জানান, সেখানে সম্প্রতি বিদ্যুৎ সংযোগ এলেও গ্যাস ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। জমির দামও অনেক বেশি। এজন্য প্রাথমিকভাবে আগ্রহ থাকলেও পরে আর প্লট নেননি।
বিসিক রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নতুন করে ১৭টি প্লটের আবেদন জমা পড়েছে। তবে রাজশাহীতে শিল্প খাত তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকায় পুরোপুরি চালু হতে সময় লাগবে। মুন্সিগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান জানান, বৈদ্যুতিক পণ্য ও হালকা প্রকৌশল শিল্পনগরী বিশেষায়িত হওয়ায় উদ্যোক্তা পেতে সময় লাগছে। এখন পর্যন্ত ২৯টি প্লট বরাদ্দ হয়েছে, নতুন আরও দুটি আবেদন জমা পড়েছে।
বিসিক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, দেশের সব জায়গা শিল্পবান্ধব নয়। আবার সব প্রকল্প স্থাপনের আগে যথেষ্ট বিশ্লেষণও করা হয়নি। রাজশাহী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ সম্প্রসারণ প্রকল্প এর উদাহরণ। তারপরও উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করতে আলোচনা চলছে। অভিযোগের বিষয়ে তিনি স্বীকার করে বলেন, সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। অনেক কিছু বিসিকের নিয়ন্ত্রণে নেই। তবে পরিবেশ ছাড়পত্র, ঋণ সুবিধা ও অন্যান্য সেবায় সহযোগিতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।

