শিক্ষা নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে আউটকাম বেসড এডুকেশন বা ফলাফল ভিত্তিক শিক্ষা। এ শিক্ষার মূল দৃষ্টি হলো শিক্ষার্থী আসলে কী শিখছে এবং শেখা জীবনে কতটা কাজে লাগছে। শিক্ষক কী পড়াচ্ছেন বা বইয়ে কী লেখা আছে, তা এখানে প্রধান নয়। শিক্ষার্থীর দক্ষতা, মনোভাব ও ব্যবহারিক প্রয়োগই প্রধান মাপকাঠি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আল-আমীন এ বিষয়ে লিখেছেন।
কেন দরকার আউটকাম বেসড শিক্ষা
দেশে অনেক ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থী বাস্তব সমস্যা সমাধানে অপ্রস্তুত। এই প্রেক্ষাপটে আউটকাম বেসড শিক্ষা প্রয়োজনীয়। এই মডেলে নির্ধারণ করা হয় স্নাতক শেষে একজন শিক্ষার্থী কী ধরনের সমস্যা সমাধান করতে পারবে, দলগতভাবে কীভাবে কাজ করবে এবং তার নৈতিক অবস্থান কতটা দৃঢ় হবে। অর্থাৎ, শিক্ষার লক্ষ্য শুধুমাত্র ডিগ্রি নয়, দক্ষতা অর্জন।
প্রচলিত শিক্ষার সঙ্গে পার্থক্য
প্রচলিত শিক্ষায় মুখস্থ বিদ্যা, বই শেষ করা এবং পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া মূল লক্ষ্য। কিন্তু আউটকাম বেসড শিক্ষায় জোর দেওয়া হয় সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি, যোগাযোগ দক্ষতা, বাস্তব জীবনে জ্ঞানের প্রয়োগ এবং সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ববোধের ওপর। ফলে শিক্ষার্থীর শিক্ষা কেবল পরীক্ষার খাতায় সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং জীবনে প্রতিফলিত হয়।
বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থা
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ইতিমধ্যেই ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় আউটকাম বেসড কারিকুলাম চালুর নির্দেশ দিয়েছে। মেডিকেল শিক্ষায়ও ধাপে ধাপে এর প্রয়োগ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে ওয়াশিংটন অ্যাকর্ড ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় আউটকাম বেসড অ্যাক্রিডিটেশন বাধ্যতামূলক করেছে। বাংলাদেশও ধীরে ধীরে তার সঙ্গে তাল মিলাচ্ছে। তবে বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, আধুনিক মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং অবকাঠামো উন্নয়নে।
ইতিবাচক সম্ভাবনা
যদি আউটকাম বেসড শিক্ষা পুরোপুরি কার্যকর হয়, শিক্ষার্থীরা ডিগ্রির সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের জন্য আরও প্রস্তুত হবে। নিয়োগদাতারা দক্ষ কর্মী পাবেন। শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশের ডিগ্রির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আরও শক্তিশালী হবে।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হঠাৎ আউটকাম বেসড শিক্ষা চালু করলে তা কেবল কাগুজে সংস্কারেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং সহজবোধ্য কারিকুলাম ছাড়া শিক্ষার্থীরা নতুন চাপে পড়বে। তাই করণীয় হলো—
-
শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা বাধ্যতামূলক করা
-
ধাপে ধাপে কারিকুলাম সংস্কার করা
-
স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আউটকাম বেসড ধারণার ধীর বিস্তার ঘটানো
-
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বোঝানো যে মূল লক্ষ্য নম্বর নয়, দক্ষতা অর্জন।
আউটকাম বেসড শিক্ষা বাংলাদেশের জন্য নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে। তবে এটি সফল হবে তখনই, যখন বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা যাবে। নতুন নামে পুরোনো শিক্ষা চালু করলে লাভ নেই। শিক্ষার্থীরা যদি বাস্তব জীবনের জন্য প্রস্তুত হয়, তাহলেই এই শিক্ষাকে সফল বলা যাবে।

