বাংলাদেশে পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এ আদালতের লক্ষ্য হলো বাণিজ্যিক বিরোধ দ্রুত ও কার্যকরভাবে নিষ্পত্তি করা। এতে বিনিয়োগ পরিবেশ আরও স্বচ্ছ ও গতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ী, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আমদানি-রপ্তানি, বিমান ও নৌপরিবহন, নির্মাণ, অবকাঠামো, ফ্র্যাঞ্চাইজ, বিতরণ ও লাইসেন্সিং, প্রযুক্তি উন্নয়ন, ট্রেডমার্ক, কপিরাইট, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ডোমেইন নাম, ভৌগলিক নির্দেশক, বীমা, অংশীদারিত্ব, পরিষেবা খাত ও শেয়ারহোল্ডার বা যৌথ উদ্যোগ সম্পর্কিত বিরোধ বিশেষায়িত আদালতের আওতায় আসবে। এতে প্রায় সব ধরনের আধুনিক বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, জেলা জজদের মধ্য থেকে বাণিজ্যিক আদালতের বিচারক নিয়োগ করা হবে। একই সঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগে বাণিজ্যিক আপিল বেঞ্চ গঠনের কথাও উল্লেখ রয়েছে। মামলা দায়েরের আগে মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যাতে অনেক বিরোধ আদালতের বাইরে মীমাংসা হয়ে যায় এবং আদালতের ওপর চাপ কমে।
কোনো বাণিজ্যিক মামলা বা আবেদনের মূল্য ৫০ লাখ টাকা হলে তা এই আদালতে বিচারযোগ্য হবে। তবে প্রয়োজনে সরকার এ সীমা পরিবর্তন করতে পারবে। বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত শুনানি ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। আপিল নিষ্পত্তিতেও সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে—বাণিজ্যিক আপিল আদালত ছয় মাসের মধ্যে এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে। প্রস্তাবে অবকাঠামো উন্নয়ন, বিচারক ও আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ এবং ধারাবাহিক পেশাগত উন্নয়নের দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এর আগে অংশীজনদের মতামত নিতে একাধিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। গত ২২ ফেব্রুয়ারি, ৫ এপ্রিল ও ১২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে যথাক্রমে ময়মনসিংহ, রংপুর ও খুলনায় সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে তিনটি আঞ্চলিক সেমিনার হয়। এতে বিচারক, আইনজীবী ও উন্নয়ন সহযোগীরা অংশ নেন। এছাড়া ২১ জুলাই ২০২৫ তারিখে ইউএনডিপি ও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ঢাকায় একটি সেমিনার আয়োজন করে। এর ধারাবাহিকতায় ১৭ আগস্ট ২০২৫ তারিখে সিলেটে আরেকটি বিশেষ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এসব আলোচনার ভিত্তিতেই প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করা হয়।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা হলে দেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। দ্রুত বিচারপ্রাপ্তির ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং অর্থনীতির গতি আরও ত্বরান্বিত হবে।

