বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বড় একটি অংশই আসল উপকারভোগীদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের ভাষায়, বর্তমানে ভাতাভোগীদের প্রায় ৫০ শতাংশই ভূতুড়ে বা রাজনৈতিক সুবিধাভোগী।
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের দরিদ্র, প্রান্তিক ও অসহায় মানুষকে সহায়তা করার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তালিকায় নাম তুলছে এমন সব ব্যক্তি, যাদের প্রকৃত প্রয়োজন নেই—বরং রাজনৈতিক পরিচয় বা প্রভাব কাজে লাগিয়েই তারা সুবিধা পাচ্ছেন। এতে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা বাদ পড়ে যাচ্ছেন।
উপদেষ্টা বলেন, উপকারভোগীর সঠিক তালিকা তৈরিতে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে কার্যকর স্থানীয় সরকার না থাকায় এই প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়েছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটালাইজেশনের কাজ শুরু হলেও তা এখনো পূর্ণাঙ্গ নয়। এ অবস্থায় জাতীয় পর্যায়ে একটি কেন্দ্রীয় রেজিস্টার তৈরির পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ন্যাশনাল কনফারেন্স অন সোশ্যাল প্রোটেকশন ২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, এখন সময় এসেছে সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির।
তার মতে, বাংলাদেশ আর একেবারে গরিব দেশ নয়; আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে চলেছি। তাই শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও মৌলিক সামাজিক নিরাপত্তা সবাইকে নিশ্চিত করতেই হবে।
তিনি স্বীকার করেন, দুর্বল রাজস্বনীতির কারণে সরকারের আয় সবসময় ব্যয়ের তুলনায় কম থাকে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্প ও সামাজিক নিরাপত্তার খরচ মেটাতে সরকারকে ঋণের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। দারিদ্র্যের ভিন্ন ভিন্ন কারণ—যেমন কারও পরিবারে অতিরিক্ত সদস্য, কারও একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অসুস্থ—এসব বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষার জন্য ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট বাজেটের প্রায় ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং জিডিপির ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এতে সামাজিক সহায়তা, সামাজিক বীমা, শ্রমবাজারভিত্তিক কর্মসূচি এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত অন্যান্য সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই কর্মসূচির আওতায় আসবেন প্রবীণ, প্রতিবন্ধী, শিশু, নিম্নআয়ের পরিবার এবং জলবায়ু কিংবা অর্থনৈতিক ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।
বাংলাদেশের জন্য সামাজিক সুরক্ষা শুধু অর্থনৈতিক সহায়তা নয়—এটি মানবিক ন্যায়বিচার, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথ। তবে এই ব্যবস্থা সঠিকভাবে কার্যকর করতে হলে ভূতুড়ে ও রাজনৈতিক সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত করা এখন সময়ের দাবি।

