বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রবণতা গত এক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং জার্মানি এই শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল। তবে সম্প্রতি এসব দেশে অভিবাসন নীতি ও অন্যান্য পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়াশোনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
কানাডা গত দুই বছর ধরে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সংখ্যা কমানোর পরিকল্পনা করছে। দেশের আবাসন ও স্বাস্থ্যসেবা সংকটের কারণে সরকার ২০২৫-২০২৭ ব্যবধানে অভিবাসন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা হ্রাসের ওপর জোর দিচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুতে কানাডা শিক্ষার্থী ভিসার সংখ্যা ৩৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর ২০২৫ ও ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়ছেন। টরন্টো মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী অর্কিড বেনেডিক্ট গোমেজ বলেন, ভিসা পাওয়ার জন্য আমাকে একাধিকবার আবেদন করতে হয়েছে। তাছাড়া চার বছরের কোর্সের জন্য আমার ভিসা মাত্র দুই বছরের জন্য মঞ্জুর করা হয়েছে। পরবর্তীতে এক্সটেনশনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমাকে বাকি অর্থের যোগান দিতে পার্ট-টাইম চাকরি করতে হয়েছে। যা আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার সরকার শিক্ষার্থী ভিসার জন্য আইইএলটিএস স্কোর ৫.৫ থেকে ৬ করেছে এবং ভিসা ফি ৭১০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার থেকে ১৬০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলারে বাড়িয়েছে। এছাড়া সঞ্চয়ের প্রমাণপত্রের পরিমাণও ২৪ হাজার ৫০৫ থেকে ২৯ হাজার ৭১০ অস্ট্রেলিয়ান ডলারে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যেও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনা কঠিন হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে নির্ভরশীল ভিসার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে। শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক ব্যয় প্রায় ২০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড। যা স্কলারশিপের অভাবে অনেকের জন্য সম্ভব হচ্ছে না।
একজন ১২তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাহমিন (ছদ্মনাম) বলেন, আমি যুক্তরাজ্যে পড়তে চেয়েছিলাম। তবে পর্যাপ্ত স্কলারশিপ না থাকায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয়েছে। ইউএস-এর মতো প্রয়োজনভিত্তিক স্কলারশিপ নেই, তাই ব্যয় বহন করা সম্ভব হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ বেড়েছে। ভিসার জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়লেও অনুমোদনের হার কমেছে। ২০২৪ সালে ৭০ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করলেও মাত্র ১৪ হাজার জন ভিসা পেয়েছে।
কাজী ফুয়াদ, যিনি অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়তে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি ভিসার সাক্ষাৎকারের তারিখই পাচ্ছিলাম না। অবশেষে আমি হাল ছেড়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পড়ার সিদ্ধান্ত নিই।
জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার জন্য অপেক্ষার সময় ২৫ মাস পর্যন্ত দীর্ঘ হয়েছে। যা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য বড় বাধা। এছাড়া ব্লকড অ্যাকাউন্টের পরিমাণ ২০২০ সালে ১০ হাজার ২৩৬ ইউরো থেকে ২০২৪ সালে ১১ হাজার ৯০৪ ইউরোতে বেড়ে গিয়েছে। যা মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য জোগাড় করা কঠিন।
এমন পরিস্থিতিতে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এখন ফিনল্যান্ড, হংকং-এর মতো বিকল্প গন্তব্যের দিকে ঝুঁকছেন। তবে এসব দেশেও ব্যয় বৃদ্ধি, স্কলারশিপ সীমাবদ্ধতা এবং ভিসা প্রক্রিয়ার জটিলতা নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।
বর্তমানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পথ আগের চেয়ে অনেক কঠিন হয়ে উঠেছে। উচ্চ ব্যয়, কঠোর ভিসা নীতি এবং প্রতিযোগিতামূলক ভর্তির কারণে বিদেশে পড়াশোনা করার পরিকল্পনা করার সময় শিক্ষার্থীদের আরও সতর্ক থাকা উচিত। বিকল্প দেশ অথবা দেশের ভিতরে উচ্চশিক্ষার সুযোগ খোঁজা একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প হতে পারে।