বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের অবস্থা পর্যালোচনাকারী প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রকাশিত ২০২৪ সালের গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশ ২৫ ধাপ পিছিয়ে ১০০তম অবস্থানে রয়েছে। ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এ পর্যন্ত সর্বনিম্ন।
গতকাল (২৭ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত এ সূচকে দেশগুলোর গণতান্ত্রিক অবস্থান পাঁচটি সূচকের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে-নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুদলীয়তা, সরকার পরিচালনা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক স্বাধীনতা।
গণতন্ত্রের ১০ নম্বরের স্কেলে বাংলাদেশ এবার ৪.৪৪ স্কোর পেয়েছে, যা দেশটিকে ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা’র তালিকায় রাখলেও এটি এখন নিম্নস্তরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
ইআইইউ-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, যেসব দেশে নির্বাচনে অনিয়ম দেখা যায় এবং তা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হতে বাধাগ্রস্ত হয়, সেসব দেশ হাইব্রিড শাসনের অন্তর্ভুক্ত।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালে গণতন্ত্র সূচকে বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবনতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। স্কোর ১.৪৪ পয়েন্ট কমে ৪.৪৪-এ নেমে আসায় দেশটি ২৫ ধাপ পিছিয়েছে। একই তালিকায় পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়ারও উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে এবং তারা সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্সকারী ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে।
বাংলাদেশের এই অবনতির প্রধান কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর অপসারণ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ কারণেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় স্কোর পরিবর্তন রেকর্ড করেছে।
তবে নির্বাচনে অনিয়মের পরও তৃণমূল পর্যায়ের আন্দোলন পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে যুব নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন উদ্যোগ তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়িয়েছে, যারা প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি দিন দিন হতাশ হয়ে উঠছে।
প্রতিবেদনে ভারতের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিজেপি সরকার ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিচ্ছে এবং মুসলিম-বিরোধী মনোভাবকে রাজনৈতিকভাবে সহনীয় করে তুলেছে। এতে সামাজিক সংহতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় অনিশ্চয়তার কথা জানানো হলেও প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করা হয়েছে যে, যদি বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, তাহলে ২০২৪ সালের গণতান্ত্রিক সংকট সাময়িক হতে পারে।