অজানাকে জানার তীব্র বাসনা এবং অসম্ভবকে সম্ভব করার আকাঙ্ক্ষা মানুষের মধ্যে এক চিরন্তন বৈশিষ্ট্য। তবে এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা এই বাসনাকে বাস্তবে পরিণত করেন। এর অন্যতম উদাহরণ বাংলাদেশের আশিক চৌধুরী, যিনি পাইলট পরিবারের সন্তান হলেও পেশায় একজন ব্যাংকার। তবে তাঁর জীবন কোনো সাধারণ পথ বেয়ে এগোয়নি বরং নানা রকম রোমাঞ্চকর অভিযান এবং অভাবনীয় অর্জনের মাধ্যমে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
পেশায় ব্যাংকার হলেও রপ্ত করেন বিমান চালানো। পাইলট হওয়ার পাশাপাশি আশিক চৌধুরী স্কাইডাইভিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ খেলায়ও নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। অর্ধশতবার বিমান থেকে ঝাঁপ দিয়ে অর্জন করেছেন স্কাইডাইভারের সার্টিফিকেট। এরই মাঝে প্রায় ৪২ হাজার ফুট উঁচুতে উড়ন্ত বিমান থেকে শূন্যে লাফ দিয়ে ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে’ নাম লিখিয়েছেন তিনি।
তবে তাঁর নাম সম্প্রতি আরো একটি কারণে সামনে এসেছে। বিগত সরকারের পতনের পর গত সেপ্টেম্বরে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান আশিক চৌধুরী। এরপর থেকে তিনি তার কর্মদক্ষতা, উপস্থাপনা শৈলী ও যোগ্যতার জন্য ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছেন।
চলতি মাসের গত (৯ এপ্রিল) একটি বিনিয়োগ সম্মেলনে তথ্যপূর্ণ ও সাবলীল ভাষায় প্রেজেন্টেশন দেওয়ার মাধ্যমে তিনি দেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলো তুলে ধরেন, যা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। তাঁর বক্তব্যে উপস্থিতির পাশাপাশি তাঁর দক্ষতা এবং নতুন ভূমিকা নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে আগ্রহ বেড়ে যায়।
শৈশব ও শিক্ষা জীবন: চাঁদপুরে জন্ম নেয়া আশিক চৌধুরী শৈশবের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন যশোরে, বাবার চাকরির কারণে। সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে শিক্ষা গ্রহণের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) ভর্তি হন।
কর্মজীবন: ২০০৭ সালে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতে অঞ্চলের অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন আশিক। এরপর ২০০৭ সালে তিনি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে যোগ দেন। ২০১২ সালে লন্ডনে আমেরিকান এয়ারলাইন্সে ফিন্যান্সিয়াল ও স্ট্র্যাটেজিক এনালিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এছাড়াও সিঙ্গাপুরে HSBC-তে রিয়েল অ্যাসেট ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ ও কাজের পাশাপাশি রোমাঞ্চের টানে তিনি স্কাইডাইভিংয়ের দিকে আগ্রহী হন।
স্কাইডাইভিং এবং গিনেস রেকর্ড: আশিক চৌধুরী ২০১২ সালে প্রথম স্কাইডাইভ করেন এবং তারপর থেকে প্রায় অর্ধশতবার আকাশ থেকে ঝাঁপ দেন। ২০২৪ সালের মে মাসে- তিনি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখান। ৪১ হাজার ৭৯৫ ফুট উচ্চতা থেকে বাংলাদেশি পতাকা নিয়ে ঝাঁপ দিয়ে তিনি ‘গ্রেটেস্ট ডিসট্যান্স ফ্রিফল উইথ আ ব্যানার/ফ্ল্যাগ’ শাখায় রেকর্ড করেন।
নতুন দায়িত্ব: গত সেপ্টেম্বর থেকে আশিক চৌধুরী বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি কাজ করছেন। ৭ এপ্রিল তাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হয়।
সর্বশেষে বলা যায় যে: আশিক চৌধুরী তার অনন্য জীবনের গল্প দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, সৎ ও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে যে কেউ বিশ্বের প্রতিটি কোণায় পৌঁছাতে পারে। তাঁর ব্যতিক্রমী পেশাগত জীবন ও অর্জনগুলো তাকে শুধুমাত্র এক সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নয় বরং এক অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

