মালয়েশিয়ায় জঙ্গি-সম্পৃক্ততার অভিযোগে আটক বাংলাদেশিদের মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যে দেশে ফিরেছেন। দেশে ফিরে আসার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
গতকাল রাতে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “যারা ফিরবে, সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এর আগে শুক্রবার কুয়ালালামপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জানান, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩৬ জন বাংলাদেশিকে আটক করেছে তারা।
আইএস মতাদর্শ ছড়ানো ও অর্থ পাঠানোর অভিযোগ
রয়টার্সের বরাতে জানানো হয়, আটক বাংলাদেশিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ইসলামিক স্টেট (আইএস)–এর মতাদর্শ প্রচার করতেন এবং অর্থ সংগ্রহ করতেন। চক্রটি বাংলাদেশ ও সিরিয়ায় আইএসের কাছে অর্থ পাঠাত বলে দাবি মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষের।
মালয়েশিয়ার পুলিশের মহাপরিদর্শক খালিদ ইসমাইল বলেন, চক্রটি মূলত অন্যান্য বাংলাদেশি শ্রমিককে টার্গেট করে সদস্য সংগ্রহ করত। তারা অনলাইন মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় চরমপন্থী মতাদর্শ ছড়াত। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।
৩৬ জনের মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য হিসেবে মামলা হয়েছে। ১৫ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বাকি ১৬ জন এখনও পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন এবং তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে।
মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধানের ধারণা, এ চক্রে ১০০ থেকে ১৫০ জন পর্যন্ত সদস্য থাকতে পারে। যাদের সংশ্লিষ্টতা কম, তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। তবে যারা গভীরভাবে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার প্রচলিত আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান: “কঠোর জিরো টলারেন্স”
এ প্রসঙ্গে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “মালয়েশিয়া আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। লাখ লাখ বাংলাদেশি সেখানে কাজ করছে। কিছু ব্যক্তির এমন জঙ্গি-সংশ্লিষ্ট অভিযোগ আমাদের জন্য বিব্রতকর। এটা আমাদের দুই দেশের জন্যই উদ্বেগের বিষয়।”
তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকার এ ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে এবং মালয়েশিয়ার উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তার ভাষায়, “যেখানেই হোক, জঙ্গিবাদকে আমরা কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেব না। একসঙ্গে কাজ করব এবং কঠোর অবস্থান নেব।”
প্রবাসী শ্রমিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ
মালয়েশিয়ায় নির্মাণ, কৃষি ও কারখানা খাতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন। দেশটির অভ্যন্তরীণ জনশক্তির ঘাটতি পূরণে বিদেশি কর্মীর ওপর নির্ভরতা অনেক বেশি। প্রতিবছর হাজার হাজার বাংলাদেশি পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের খোঁজে।
২০১৬ সালে কুয়ালালামপুরে আইএস–সংশ্লিষ্ট এক হামলার পর থেকে মালয়েশিয়ায় নিরাপত্তা অভিযান জোরদার করা হয়। তখন থেকেই জঙ্গি সন্দেহে শত শত ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রেপ্তারের হার কিছুটা কমে আসে।
তবু এই সাম্প্রতিক ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় জঙ্গিবাদ ইস্যুতে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।