ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পর সোমবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে শুরু করেছেন। প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল ৯টার মধ্যে সবার হল খালি করার কথা।
সকাল সাড়ে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পরিবেশ টেনশনপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন রয়েছে। নারী শিক্ষার্থীরা ব্যাগপত্র নিয়ে ধীরে ধীরে ছাত্রাবাস ছাড়ছেন। বিশেষ করে জুলাই ৩৬ হল ও বেগম রোকেয়া হলের সামনে শিক্ষার্থীদের বের হতে দেখা গেছে।
তিনজন নারী শিক্ষার্থী জানান, রবিবার রাতে বহিরাগতদের হামলার পর তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পরিবারের চাপও রয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই হল ছাড়তে হচ্ছে।
আশরাফুল হক হলের সামনে অন্তত পাঁচজন ছাত্র বলেন, এ ঘটনা তাঁদের কাছে নতুন নয়। গত বছর জুলাইয়েও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে হঠাৎ নোটিশে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁদের ভাষায়, “এবারও একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটছে।” তাঁরা অভিযোগ করেন, ক্যাম্পাসে নতুন করে “নব্য স্বৈরাচারদের” উত্থান হয়েছে। যদিও অনেক শিক্ষার্থী হল ছাড়ছেন, তাঁরা ঘোষণা দেন, কোনো অবস্থাতেই হল ছাড়বেন না।
শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি
রবিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে শিক্ষার্থীরা হল ছাড়ার নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে চার দফা দাবি জানায়—
- একক ডিগ্রি (কম্বাইন্ড ডিগ্রি) চালু রাখতে হবে।
- বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় পুরো প্রক্টোরিয়াল বডিকে পদত্যাগ করতে হবে।
- ককটেল বিস্ফোরণ, গ্রন্থাগার ভাঙচুর এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
- ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না—এ নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং যেসব শিক্ষক হামলার সঙ্গে জড়িত তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজ সকাল আটটায় কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীরা প্রতিটি হল থেকে মিছিল নিয়ে কে আর মার্কেটে জড়ো হওয়ার ডাক দেন। দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা “ব্ল্যাক আউট কর্মসূচি” চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এর অংশ হিসেবে ক্লাস, পরীক্ষা বা একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
মিছিল ও শ্লোগানে উত্তাল ক্যাম্পাস
সকাল ৯টার দিকে মাওলানা ভাসানী হল থেকে শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা হাতে মিছিল বের করেন। তাঁরা শ্লোগান দিয়ে রোববার রাতের হামলার বিচার দাবি করেন এবং প্রশাসনের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানান। একই সময়ে অন্যান্য হল থেকেও শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে কে আর মার্কেটের দিকে রওনা দেন।
রবিবার রাতভর সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ ক্যাম্পাসে টহল দেয়। বিজিবির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জেলা প্রশাসকের অনুরোধে রাত ১০টা ১০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সমন্বিত ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলনরত ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের ওপর রাত পৌনে আটটার দিকে একদল বহিরাগত হামলা চালায়। এ সময় তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ দুই শতাধিক শিক্ষককে জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবদুল আলীম বলেন, “আমি সবার শেষে বের হয়েছি। বের হয়ে দেখি, কয়েকজন লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরা বহিরাগত নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী—সেটা আমি বুঝতে পারিনি, কারণ তখন রাত হয়ে গিয়েছিল।”

