করোনার ধাক্কায় দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা কমেছিল। তবে ২০২৪ সালে এক বছরের ব্যবধানে প্রায় চার হাজার বিদ্যালয় বেড়েছে। সব নতুন বিদ্যালয়ই বেসরকারি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বাড়েনি। শিক্ষার্থীও প্রায় দুই লাখ বেড়েছে। কিন্তু উদ্বেগজনক হলো, ঝরে পড়ার হার এই সময়ে ৩ শতাংশ বেড়ে ১৬.২৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি (এপিএসসি) থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি। করোনার প্রভাবে ২০২১ সালে তা নেমে আসে ১ লাখ ১৮ হাজারের কাছাকাছি এবং ২০২২ সালে আরও কমে ১ লাখ ১৪ হাজারে। ২০২৩ সালে সামান্য বেড়ে ৯৫টি বৃদ্ধি পায়, আর ২০২৪ সালে প্রায় চার হাজার বেড়ে ১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি হয়।

শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০২০ সালে ২ কোটি ১৫ লাখের বেশি ছিল। ২০২১ সালে হঠাৎ সাড়ে ১৪ লাখ কমে আসে। ২০২৩ সালে তা নেমে আসে ২ কোটির নিচে। তবে ২০২৪ সালে আবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১ লাখ ৮৩ হাজারে। ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগে ঝরে পড়ার হার তুলনামূলক বেশি। ময়মনসিংহের চারটি জেলাতেই হার ৩০ শতাংশের বেশি, নেত্রকোনায় ৪৪ শতাংশ।
শিক্ষকের ক্ষেত্রেও সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২৪ সালে শিক্ষকের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬২৪। অনুমোদিত ৬৫ হাজার প্রধান শিক্ষকের মধ্যে ৩৪ হাজারের বেশি পদ শূন্য। সহকারী শিক্ষকেরও প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার পদ খালি। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট শিক্ষকের সংখ্যা বেড়ে সাত লাখের বেশি হলেও, বিদ্যালয়ভেদে অনুপাত অমিল রয়েছে। যেমন হবিগঞ্জের নীরদাময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৯ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র ৫ জন।

ঝরে পড়ার হার ২০২০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত কমেছিল। ২০২০ সালে হার ছিল ১৭ শতাংশের বেশি, ২০২৩ সালে কমে ১৩.১৫ শতাংশ। কিন্তু ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬.২৫ শতাংশ। ছেলেদের ঝরে পড়ার হার সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে—২০২৩ সালে ১৪ শতাংশের বেশি, ২০২৪ সালে প্রায় ১৯ শতাংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুব মোর্শেদ বলেন, বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থী বৃদ্ধিই ইতিবাচক, কিন্তু ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধির বিষয়টি উদ্বেগজনক। দারিদ্র্য ও দুর্গম ভৌগোলিক অবস্থার কারণে ঝরে পড়া বেশি হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকটও বেড়েছে, যা গ্রাম ও দুর্গম অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করছে। তিনি সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।

