ভারত ও মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন দেদার মাদক প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। জল ও স্থল—দুই পথেই চলছে এই ভয়াবহ অনুপ্রবেশ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) জানায়, আন্তর্জাতিক চোরাচালান রুট ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল’ ও ‘গোল্ডেন ক্রিসেন্ট’-এর মাঝখানে অবস্থান করায় বাংলাদেশ এখন মাদকের বড় টার্গেট।
ডিএনসি ইতোমধ্যে সীমান্তঘেঁষা ১৮ জেলার ১০৫টি প্রবেশপথকে মাদকের প্রধান রুট হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু কঠোর নজরদারির পরও মাদক আসা ঠেকানো যাচ্ছে না। জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (ইউএনওডিসি) বলছে, বাংলাদেশে যত মাদক ঢুকছে তার মাত্র ১০ শতাংশ ধরা পড়ছে।
ভারত-মিয়ানমার রুটেই বড় প্রবাহ
ডিএনসির তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া মাদকের প্রায় সবই ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত থেকে আসা। ভারত থেকে গাঁজা ও ফেনসিডিলের স্রোত, আর মিয়ানমার থেকে আসছে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ (আইস)। এর সঙ্গে হেরোইন, কোকেন, আফিম, ট্যাপেনটাডোল, এসকাফ সিরাপ ও ইনজেকটেবল ড্রাগও ধরা পড়ছে। শহরের গলি থেকে গ্রামাঞ্চল—সবখানেই ছড়িয়ে পড়ছে এসব নেশা।
কৌতূহল, পারিবারিক অশান্তি, বেকারত্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অসৎ সঙ্গ, হতাশা ও আকাশ সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাবে ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মাদকের ফাঁদে জড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ১ কোটিরও বেশি মানুষ মাদকাসক্ত। প্রতিবছর এ খাতে ব্যয় হচ্ছে ৬০ হাজার কোটি টাকা।
ডিএনসির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে প্রবেশ করা মোট মাদকের ১৭ শতাংশ ঢাকায় এবং আশপাশে খরচ হচ্ছে, আর বাকি ৮৩ শতাংশ ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। এ ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষক, ব্যবসায়ী, বাহক ও খুচরা বিক্রেতাসহ প্রায় ২ লাখ মানুষ সক্রিয়ভাবে জড়িত।
মাদকের কারণে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা) পাচার হচ্ছে। শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, নেশা গ্রাস করছে তরুণদের চিন্তার জগৎও। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রজন্মের সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মাদকের ভয়াল ছোবলে।
সীমান্ত রুটের খতিয়ান
ডিএনসি চিহ্নিত রুটগুলো দেশের চার দিকেই বিস্তৃত।
- পশ্চিম সীমান্তে সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, দিনাজপুরের বিভিন্ন পয়েন্ট।
- পূর্ব সীমান্তে সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও ফেনীর একাধিক প্রবেশপথ।
- উত্তরে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা।
- দক্ষিণে কক্সবাজারের টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন ও পার্শ্ববর্তী এলাকা।
প্রতিটি রুট দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে কোটি টাকার মাদক।
ডিএনসির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোস্তাক আহমেদ জানান, সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় মাদক কারবারি, গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকা ধরে নিয়মিত অভিযান চলছে। সীমান্তে সমন্বিত নজরদারির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে।
বাংলাদেশের সীমান্ত এখন মাদকের করিডর। প্রতিদিন কোটি টাকার মাদক আসছে, খেয়ে ফেলছে তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ। শুধু সীমান্ত রক্ষাই নয়, প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা ও কড়া রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

