সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় টিলা কাটা এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। গত মাসে পাথর লুটের ঘটনা পুরোপুরি আড়াল হওয়া আগেই নগর ও জেলার অন্তত ৩৪টি স্থানে অবাধে টিলা ধ্বংসের তথ্য পাওয়া গেছে। খাদিমপাড়া, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় টিলার প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন, বাকিগুলো সরকারি খাসভূমি।
অবাধে টিলা কাটার এই ঘটনায় প্রশাসনের কার্যক্রম কার্যত উদাসীন থেকে যাচ্ছে। সাদাপাথর এলাকা থেকে দীর্ঘ সময় পাথর লুটের খবর প্রকাশিত হলেও প্রশাসন তৎপর হয়নি। সমালোচনার পর সরকার কয়েকটি অভিযান চালিয়েছিল, তবে তা লোকদেখানো বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রকাশ্যে টিলা কাটলেও তা রোধে প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ব্যক্তিমালিকানরা নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে শ্রমিকদের দিয়ে টিলা সমতল করছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, টিলাকাটায় জড়িতদের মধ্যে অধিকাংশই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। কয়েকটি মামলা হলেও কার্যত টিলাকাটা বন্ধ হয়নি।
পরিবেশবাদী একাধিক সংগঠন জানিয়েছে, ২০২৪ সালের আগের আড়াই দশকে সিলেটে অন্তত ৩০ শতাংশ টিলা সাবাড় হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রশাসন, পুলিশ ও পরিবেশ অধিদপ্তর কয়েক মাস ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিল। এ সুযোগে অবাধে টিলা কাটা চলে। এ সময় অন্তত ১৫ শতাংশ টিলার মাটি কমবেশি সাবাড় হয়।
২০২৪ সালের আগে-পরে ৪৫ শতাংশ টিলা পুরোপুরি বা আংশিক সাবাড় হয়েছে। অতীতে এক বছরে যে পরিমাণ টিলা কাটা হয়েছে, গত এক বছরে এর কয়েক গুণ বেশি কাটা হয়েছে। আগে রাতে চুপিসারে টিলা কাটা হতো। এখন দিনের বেলা প্রকাশ্যে চলছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ৬(খ) ধারা স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছে যে, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড়, টিলা বা সমতুল্য ভূখণ্ড কর্তন করা যাবে না। তবে প্রশাসন উদাসীন থাকায় সিলেটের টিলার স্বাভাবিক অবস্থা বিপন্ন হচ্ছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ ও নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষজ্ঞরা প্রশাসন ও স্থানীয় জনগণকে একত্র হয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দোষীদের সর্বোচ্চ সীমার আইনি শাস্তি নিশ্চিত করা, বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দীর্ঘমেয়াদি টিলা সংরক্ষণ পরিকল্পনা প্রণয়ন অপরিহার্য।
সিলেটের জেলা প্রশাসক আশ্বস্ত করে জানিয়েছিলেন, সিলেটের প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় কোনো ছাড় দেওয়া হবে না এবং টিলা কাটায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন। তবে তাঁর বক্তব্য দৃশ্যমান হওয়া জরুরি।

