বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে শুধু “বাংলাদেশ এগোচ্ছে” বলাই যথেষ্ট নয়। দুর্নীতি ও হয়রানিকে রাষ্ট্রীয় ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করে অর্থনীতির গতি বাড়াতে হবে। সোমবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এক সেমিনারে এ কথা বলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, ব্যবসা ও দৈনন্দিন জীবনে দুর্নীতির পাশাপাশি হয়রানি এখন বড় বাস্তবতা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেমন লড়াই প্রয়োজন, তেমনি হয়রানির বিরুদ্ধেও একই শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। “আমরা সহজেই আত্মতুষ্টির ফাঁদে পড়ি। বাংলাদেশ এগোচ্ছে—এই বয়ান এখন আর যথেষ্ট নয়। মূল বিষয় হলো অগ্রগতির গতি। আত্মতুষ্টির জায়গা নেই,” যোগ করেন তিনি।
হোসেন জিল্লুর আরও বলেন, ২০০৪ সালে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম একই অবস্থানে ছিল। আজ ভিয়েতনাম অনেক এগিয়েছে। অথচ বাংলাদেশে দারিদ্র্য উল্টো পথে হাঁটছে, ছদ্ম বেকারত্ব মহামারি পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার বেড়েছে। তার মতে, অর্থনীতিতে ও মানসিকতায় নতুন গতি ছাড়া কাঙ্ক্ষিত অর্জন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে গোষ্ঠীতন্ত্র ও অনৈতিকতার কারণে বেসরকারি খাত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অথচ অর্থনীতির চাকা ঘোরাবে বেসরকারি খাতই। তাই তাদের আস্থায় আনতে হবে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
বৈশ্বিক অর্থনীতি বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে হবে। তৈরি পোশাক ও রেমিট্যান্সের পাশাপাশি ওষুধ, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি সেবা, চামড়া ও অন্যান্য উদীয়মান খাতকে প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তি হিসেবে কাজে লাগাতে হবে বলে মত দেন হোসেন জিল্লুর।
সেমিনারে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানের কোম্পানিগুলো ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশল গ্রহণ করছে। তারা চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে আনতে চাইছে এবং রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ দেশগুলোকে বিকল্প হিসেবে দেখছে। মেক্সিকো, ভিয়েতনাম ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাশাপাশি বাংলাদেশও সম্ভাব্য গন্তব্য হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। উন্নত বন্দর ও অবকাঠামো, নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর সংস্কার এবং নতুন রপ্তানি খাত গড়ে তোলার ওপর জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতকে আগাম প্রস্তুত থাকতে হবে।
চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থনীতি
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, গত এক বছরে অর্থনীতি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বড় সমস্যা।
তিনি জানান, দেশে সাড়ে ছয় কোটি শ্রমশক্তি থাকলেও মাত্র ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। বিদেশে কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিকই অদক্ষ। ফলে তারা ভারতের বা শ্রীলঙ্কার শ্রমিকদের তুলনায় কম আয় করছে। তার মতে, এলডিসি থেকে উত্তরণের সময়সীমা অন্তত তিন বছর বাড়ানো দরকার। নইলে প্রস্তুতি ছাড়া উত্তরণে বাংলাদেশ অনেক বাণিজ্য সুবিধা হারাতে পারে। একই সঙ্গে বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গত এক বছরে ব্যবসায়ীদের সমস্যার সমাধানে এফবিসিসিআই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। তার মতে, ট্রেড সংগঠনগুলোকে দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করা জরুরি।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বারভিডার সভাপতি আবদুল হক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, আবুল কাসেম হায়দার প্রমুখ।

