জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দীর্ঘ ৩৩ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। ২১ হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ কেন্দ্রে ভোট দেবেন ছাত্ররা এবং ১০ কেন্দ্রে ছাত্রীরা। মোট ২২৪ বুথে শিক্ষার্থীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাসজুড়ে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।
নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় সবগুলো ভোটকেন্দ্র হলভিত্তিক। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রার্থীরা।
‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’-এর জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, “হলে হলে এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। প্রশাসন তাদের সরাতে পারেনি। সাবেক কিছু ছাত্রনেতারও আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদি কোনো অবৈধ উপায়ে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা হয়, শিক্ষার্থীরা এর জবাব দেবে।”
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটের দিনে ক্যাম্পাসের ১২টি গেট বন্ধ থাকবে। কেবল বৈধ শিক্ষার্থীরা স্টুডেন্ট কার্ড দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকবে এক হাজার ২০০ পুলিশ সদস্য। প্রতিটি কেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা, যা থেকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, “শিক্ষার্থীদের একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে আমরা প্রস্তুত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাদা পোশাকেও সার্বক্ষণিক নজরদারি চালাবে।”
আট প্যানেলের লড়াই
এবারের নির্বাচনে ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), ইসলামী ছাত্রশিবির, বামপন্থি সংগঠন ও স্বতন্ত্রসহ মোট আট প্যানেল অংশ নিচ্ছে। ২৫টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৯ জন প্রার্থী।
সহসভাপতি (ভিপি) পদে আছেন ১০ প্রার্থী। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন। নারী এজিএস পদে ছয়জন এবং পুরুষ এজিএস পদে ১০ জন প্রার্থী লড়ছেন।
শিক্ষার্থীদের মতে, ভিপি পদে ত্রিমুখী লড়াই হবে। এগিয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রশিদ জিতু, বাগছাসের আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল এবং শিবির সমর্থিত আরিফুল্লা আবিদ। জিএস পদে লড়াই হবে বাগছাস সমর্থিত তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম ও শিবির সমর্থিত মাজহারুল ইসলামের মধ্যে।
শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও প্রত্যাশা
নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। বুধবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চললেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল নির্বাচন।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল চৌধুরী বলেন, “আমরা চাই নিয়মিত জাকসু নির্বাচন হোক। বিজয়ীরা যেন জাকসুকে দলীয় কার্যালয় বানিয়ে না ফেলেন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করেন।”
আরেক শিক্ষার্থী ইরফাত আমিন বলেন, “আমরা জন্মের পর থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখিনি। এবার উৎসবমুখর পরিবেশ পাচ্ছি। সবাই ভোট চাইছে। নির্বাচন যে উৎসব, তা আমরা উপভোগ করছি।”
ডাকসুর প্রভাব জাকসুতে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে শিবির সমর্থিত প্যানেল বড় জয় পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এর প্রভাব জাহাঙ্গীরনগরেও পড়তে পারে।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ইমন রহমান বলেন, “শিবিরের একটি ফিক্সড ভোটব্যাংক আছে। ডাকসুতে তাদের ভূমিধস জয়ের প্রভাব জাকসুতেও পড়বে বলে আমরা মনে করছি।”

