জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল রাত পেরিয়েও ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। হল সংসদের ভোট হাতে গণনা শেষ হলেও এখনো চলছে কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা। এতে শিক্ষার্থী ও প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টায় ভোটগণনা শুরু হয়। কিন্তু শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১টা পর্যন্তও কেন্দ্রীয় সংসদের ফলাফল ঘোষণা করতে পারেনি প্রশাসন। নির্বাচন কমিশন জানায়, ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) প্রযুক্তি বাতিল করে ম্যানুয়াল গণনায় ফিরে যাওয়ায় সময় লাগছে বেশি।
নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ
অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছেন নির্বাচন কমিশনের এক সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার। তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়নি, নানা অনিয়ম ঘটেছে এবং তার ওপর পদত্যাগ না করার চাপ ছিল। তাই অনিয়মের দায় এড়াতে পদত্যাগ করা ছাড়া উপায় ছিল না।
তবে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের এজিএস প্রার্থী ফেরদৌস আল হাসান অভিযোগ করেন, জাকসু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই কমিশনের এক সদস্য পদত্যাগ করেছেন।
অভিযোগের পাল্টাপাল্টি
শিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম দাবি করেন, বিএনপিপন্থী কিছু শিক্ষক কৃত্রিমভাবে ফলাফল বিলম্ব করছেন। রাতেই ফলাফল প্রকাশ না হলে তারা কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। একইভাবে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলনের ভিপি প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতুও অভিযোগ করেন, শিক্ষকদের একটি অংশ ইচ্ছাকৃতভাবে ভোট গণনায় দেরি করছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা সুলতানা আক্তারও ধীরগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে চললে তিন দিনেও ফল ঘোষণা সম্ভব নয়।
বর্জন ও অচলাবস্থা
ছাত্রদলের চাপেই ওএমআর মেশিন বাতিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা। অন্যদিকে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ও ছাত্রদল অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করে। বিএনপিপন্থি কয়েকজন শিক্ষকও একই সিদ্ধান্ত নেন।
বর্তমানে সিনেট ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন। তাদের দাবি, মেশিনে ভোট গণনা চালু করে দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। এ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ক্যাম্পাসে এক হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. জাকির আহমেদ জানান, সিনেট ভবনসহ পুরো ক্যাম্পাসে পুলিশ কঠোর অবস্থানে আছে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনী চিত্র
এবারের জাকসু নির্বাচনে ১১ হাজার ৭৫৯ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন প্রায় ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ভিপি পদে ৯ জন, জিএস পদে ৮ জন, এজিএস পদে ১৬ জন এবং নারী প্রার্থী ৬ জন।
মোট আটটি পূর্ণ ও আংশিক প্যানেল নির্বাচন অংশ নেয়। তবে ভোট শুরুর পর কারচুপির অভিযোগ তুলে পাঁচটি প্যানেল নির্বাচন বর্জন করে। এর মধ্যে ছিল ছাত্রদল, প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতির ঐক্য, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের সংশপ্তক পর্ষদ, এবং স্বতন্ত্রদের অঙ্গীকার পরিষদ। আরও কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও বর্জন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে ভোটগ্রহণের জন্য ২২৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছিল। মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৮৯৭। এর মধ্যে ছাত্র ৬ হাজার ১১৫ এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৭২৮।