সাদা বালুর সৈকতে ঢেউ আছড়ে পড়ছে। আকাশে চক্কর দিচ্ছে গাঙচিল। সেই সৌন্দর্যের পাশে জীর্ণ পলিথিনের ছাউনি ঘর। সেন্ট মার্টিনের এই বাড়িতেই থাকেন সাবেক গ্রাম পুলিশ হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, “১২ বছর আগে ঘর ভেঙে গেছে। এরপর পলিথিন আর বাঁশ দিয়ে কোনোভাবে টিকে আছি। গত ২৮ বছরে কেউ খোঁজ নেয়নি, কেমন আছি জানতে চায়নি।”
১৯৯৭ সালের ১৫ জুন দেশের প্রথম আশ্রয়ণ প্রকল্প চালু হয় সেন্ট মার্টিনে। ঝড়ে ঘরহারা হাবিবুর রহমানসহ ৫০টি পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল এখানে। কিন্তু প্রায় তিন দশক পরও সেই ঘরগুলো সংস্কার হয়নি।
সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ও ফিরোজ আহমদ খান জানান, নির্মাণের পর থেকে প্রকল্পটির কোনো সংস্কার হয়নি। টিনের ছাউনি নষ্ট, বাঁশের বেড়া ভেঙে পড়েছে। এখানকার পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে।
৮০ শতক জমির ওপর নির্মিত হয়েছিল পাঁচটি শেড। সঙ্গে ছিল তিনটি নলকূপ, তিনটি ল্যাট্রিন ও কাঁটাতারের সীমানা। এখন সবই অচল।
মুজিবুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালের ৯ জুন কক্সবাজারকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত জেলা ঘোষণা করা হলেও সেন্ট মার্টিনে কেউ ঘর পায়নি। কারণ, দ্বীপে খাসজমি নেই। ফলে দেশের প্রথম আশ্রয়ণ প্রকল্প সংস্কারও হয়নি।
৬ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকল্পের ঘরে এখন ৮০টি পরিবারের চার শতাধিক মানুষ থাকেন। লোক বেড়েছে কিন্তু ঘর বাড়েনি। অধিকাংশ ঘর ভেঙে গেছে। পলিথিনের ঝুপড়িতে চলছে জীবন।
ইউপি সদস্য মো. আল নোমান বলেন, “বিদ্যুৎ নেই, বেড়া নেই। ল্যাট্রিন নষ্ট হয়ে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করতে হয়। কয়েক বছর নলকূপও বন্ধ ছিল। এখন এনজিওর সহযোগিতায় পানির ব্যবস্থা হয়েছে। কাজ না থাকায় জীবন খুবই কষ্টের।”
জুলেখা বেগম নামে এক বাসিন্দা জানান, ১০ সদস্যের পরিবার নিয়ে একটি কক্ষে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। পর্যটন মৌসুমে তাঁর ছেলে টমটম চালিয়ে কিছু আয় করেন, বাকিটা সময় থাকে বেকার।
২০২২ সালের ১ জানুয়ারি তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান প্রকল্পটি পরিদর্শন করে দ্রুত সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে তা আর বাস্তবায়ন হয়নি।
ইউপি সদস্য আল নোমান বলেন, এক দশক ধরে নতুন শেড নির্মাণের দাবি জানানো হলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
জেলা প্রশাসক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মেয়াদ গত জুনে শেষ হয়েছে। বর্তমানে নতুন কোনো আশ্রয়ণ প্রকল্প চালু নেই। তবে বিষয়টি ভূমি মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে সংস্কার করা হবে। আপাতত খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে।