আগামী পাঁচ বছরে জাপানের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে এক লাখ কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম (টিআইটিপি) ও স্পেসিফাইড স্কিলড ওয়ার্কার (এসএসডব্লিউ) এই দুই ভিসা ক্যাটাগরিতে কর্মী নেওয়া হবে। জাপানি ভাষা ও দক্ষতার পরীক্ষায় পাস করলেই নামমাত্র খরচে সেখানে কাজের সুযোগ মিলবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরের সময় ২৯ মে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) তিনটি জাপানি কোম্পানির সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। একটি বিএমইটি ও কাইকম ড্রিম স্ট্রিট (কেডিএস), অন্যটি বিএমইটি, জাপানের ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কোঅপারেটিভস (এনবিসিসি) ও জাপান বাংলা ব্রিজ রিক্রুটিং এজেন্সি (জেবিবিআরএ)-এর মধ্যে।
চুক্তি অনুযায়ী ২০২৬ সালে দুই হাজার, ২০২৭ সালে ছয় হাজার, ২০২৮ সালে ১২ হাজার, ২০২৯ সালে ৩০ হাজার এবং ২০৩০ সালে ৫০ হাজার শ্রমিক পাঠানো হবে।
পাঁচ খাতে শ্রমিক যাবে—নির্মাণে ৪০ হাজার, শিল্প-কলকারখানায় ২০ হাজার, কেয়ারগিভার ভিসায় ২০ হাজার এবং কৃষি ও গাড়ি সার্ভিসিং খাতে ২০ হাজার। জাপানের বয়স্ক জনসংখ্যা ও কম জন্মহারের কারণে দেশটিতে শ্রমিক সংকট বাড়ছে। এতে বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে।
জাপানি প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যে নরসিংদীর মনোহরদী টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) পরিদর্শন করেছে। অক্টোবর থেকে সেখানে এক হাজার টাকা ফিতে জাপানি ভাষা শেখার কোর্স শুরু হবে। জাপানের প্রশিক্ষকরা ভাষা ও দক্ষতা শেখাবেন।
এসএসডব্লিউ ভিসার জন্য আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৭–১৮ বছর হতে হবে। জাপানি ভাষার এন৪ স্তরের পরীক্ষা ও নির্দিষ্ট খাতের দক্ষতা পরীক্ষায় পাস করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কৃষি, ম্যানুফ্যাকচারিং, কেয়ারগিভিং ও ড্রাইভিং খাতে এ পরীক্ষা দেওয়া যায়। কেয়ারগিভিং ও কৃষিতে চাহিদা বেশি।
টিআইটিপি ভিসার জন্য বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর এবং জাপানি ভাষার এন৫ স্তরের দক্ষতা প্রয়োজন। এই ভিসায় শতাধিক খাতে কাজের সুযোগ রয়েছে।
প্রথমে ভাষা শেখা ও এন৫ বা এন৪ পরীক্ষা পাস করতে হবে। এরপর টিআইটিপি বা এসএসডব্লিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তালিকাভুক্ত এজেন্সির মাধ্যমে জাপানি কোম্পানির সাক্ষাৎকার দিতে হবে। সাক্ষাৎকারে সফল হলে জাপানের সংস্কৃতি ও কর্মস্থলের নিয়ম নিয়ে অতিরিক্ত দু–তিন মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে ৯৪টি রিক্রুটিং এজেন্সি অনুমোদিত। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগে।
সরকারিভাবে জাপান যেতে আনুমানিক এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে। ভাষা শেখা, প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা মিলিয়ে মোট ব্যয় প্রায় তিন লাখ টাকা হতে পারে।
টিআইটিপি ভিসায় কর্মীরা মাসে ১.২ থেকে ১.৮ লাখ টাকা এবং এসএসডব্লিউ ভিসায় ২ থেকে ২.৮ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আয় বাড়ে। দীর্ঘমেয়াদে পরিবার নেওয়া ও স্থায়ী নাগরিকত্বের সুযোগও রয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও জাপান সেলের প্রধান শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর মতে, দক্ষ কর্মীর ঘাটতি ও মানসম্পন্ন প্রশিক্ষকের অভাব বড় বাধা। তবু জাপানের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে যাতে নিয়োগপ্রক্রিয়া সহজ হয় এবং বেশি কর্মী পাঠানো যায়।

