চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আবারও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ১২ অক্টোবর ভোট দেবেন প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী। ইতিমধ্যে ১ হাজার ১৬২ শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এত বড় আয়োজন ঘিরে এখন আলোচনায় মূল বিষয়—নির্বাচনী বাজেট।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোট গ্রহণ থেকে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াই প্রযুক্তিনির্ভর হবে। ক্যাম্পাসজুড়ে বসানো হবে সিসিটিভি ক্যামেরা, যাতে পরবর্তীতে কোনো অভিযোগ উঠলে প্রমাণ রাখা যায়। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক ফলাফল জানাতে ১৪টি এলইডি স্ক্রিন বসানো হবে। দরপত্রের মাধ্যমে বসানো এই পর্দার খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা।
এ ছাড়া ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স তৈরি, ওএমআর মেশিনে ফলাফল গণনা, বুথ স্থাপন, পরিবহন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সম্মানী—সব মিলিয়ে বড় অঙ্কের বাজেট ধরা হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, “চাহিদা অনুযায়ী খরচ হবে। প্রাথমিকভাবে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার হিসাব ধরা হয়েছে। এটি আরও বাড়তে পারে। কারণ শেষ পর্যন্ত কতজন প্রার্থী থাকবেন, কয়টি ব্যালট ছাপাতে হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।”
তুলনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে খরচ হয়েছিল এক কোটির বেশি টাকা।
ভোটের লজিস্টিকস
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের প্রধান যাতায়াত মাধ্যম শাটল ট্রেন। সাধারণ দিনে প্রতিদিন একটি ট্রেন ৯ বার যাওয়া-আসা করে। তবে ভোটের দিনে প্রতি ঘণ্টায় ট্রেন চলবে। এ জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ থাকবে।
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১৮ সেপ্টেম্বর, প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে ২১ সেপ্টেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ সেপ্টেম্বর। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৫ সেপ্টেম্বর।
নির্বাচন ঘিরে এখন পুরো ক্যাম্পাস সরগরম। রেলস্টেশন থেকে বুদ্ধিজীবী চত্বর, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেন—সবখানেই শিক্ষার্থীদের আলোচনায় চাকসু নির্বাচন।
তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে শঙ্কা আছে। তাঁদের মতে, ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে চবি প্রশাসনকে। অন্যথায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর বড় সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, এবার নির্বাচন আয়োজন প্রশাসনের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা।
সম্প্রতি ৭ দফা দাবিতে নয়জন শিক্ষার্থী অনশন করেন। তাঁদের মধ্যে একজন ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে।”
সব শঙ্কার মধ্যেও নির্বাচন কমিশনের আশ্বাস, আয়োজন হবে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ করার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।”

