Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Thu, Nov 6, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বানিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • স্বাস্থ্য
      • প্রযুক্তি
      • ধর্ম
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » পিআর নাকি সরাসরি ভোট: কোন পথে দেশ?
    বাংলাদেশ

    পিআর নাকি সরাসরি ভোট: কোন পথে দেশ?

    নাহিদSeptember 21, 2025Updated:September 21, 2025
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    সাংবাদিকদের জন্য ইসির নতুন নির্বাচন নীতিমালা
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার একেবারেই এগার মাসের মধ্যেই নির্বাচন পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নতুন বিতর্ক দেখা দিয়েছে। দলগুলোর অবস্থান একেবারেই পাল্টাপাল্টি। একদিকে সরাসরি ভোটের পক্ষে অবস্থান, অন্যদিকে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা পিআর পদ্ধতির পক্ষে দাবি। এই বিতর্ক শুধু রাজনৈতিক স্বার্থের নয় বরং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ভবিষ্যতকেও প্রভাবিত করতে পারে।

    গণঅভ্যুত্থানের চাপের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সংবিধান সংস্কার কমিশন একটি সুপারিশ করেছে। তারা দেশের জন্য দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ গঠনের পরামর্শ দিয়েছে। কমিশনের প্রস্তাব অনুসারে, সংসদকে দুই কক্ষে ভাগ করা হবে।

    নিম্নকক্ষে আসন হবে ৪০০। এর মধ্যে ১০০ আসন নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তারা নির্বাচিত হবেন সরাসরি ভোটে। অর্থাৎ জনগণ নিজ হাতে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। এই ব্যবস্থা নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে এবং নারী নেতৃত্বের বিকাশে সহায়তা করবে।

    উচ্চকক্ষে আসন থাকবে ১০০টি। এখানে নির্বাচন হবে সংখ্যানুপাতিক বা প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতিতে। পিআর পদ্ধতিতে ভোটের হার অনুসারে আসন বিতরণ করা হয়। ফলে ছোট দল ও সংখ্যালঘুদেরও সংসদে অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া যায়। দুই কক্ষ মিলিয়ে সংসদের মোট আসন দাঁড়াবে ৫০০।

    প্রথম দিকে পিআর পদ্ধতিকে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। কিছু দল সমর্থন করেছে, আবার কিছু দল অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে বর্তমানে পিআর নাকি সরাসরি ভোট—এই বিষয়ে দলগুলোর অবস্থান আরও বিভক্ত হয়ে উঠেছে। একেবারে সরাসরি ভোটের পক্ষে থাকা দলগুলোর সংখ্যা কম নয়, আবার পিআর পদ্ধতির পক্ষে থাকা দলগুলোর দাবিও জোরালো।

    দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তার মিত্র কিছু দল সরাসরি ভোটের বিদ্যমান ব্যবস্থার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। তারা মনে করছে, সরাসরি ভোট জনগণের মতপ্রকাশকে সবচেয়ে বেশি নিশ্চিত করে। সরাসরি ভোটে জনগণ নিজ হাতে নির্বাচিত করে তাদের প্রতিনিধি। এই পদ্ধতিতে রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা স্পষ্ট থাকে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ হয়।

    বিপরীতে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, কয়েকটি ইসলামপন্থী ও বামপন্থী দল এবং সদ্য গঠিত এনসিপি সংসদের দুই কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করার জোর দাবি তুলেছে। তারা যুক্তি দেখাচ্ছে, পিআর পদ্ধতি ছোট দল ও সংখ্যালঘুদের ভোটকে প্রাধান্য দেয়। এতে রাজনৈতিক বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে।

    বিশ্লেষকরা বলছেন, পিআর পদ্ধতির সুবিধা হলো এটি ছোট দল, নতুন দল এবং সংখ্যালঘুদের সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে। তবে সমস্যা হলো, সরাসরি ভোটের মতো জনমত প্রাধান্য পাওয়া কঠিন হয়। অনেক সময় এটি সরকার গঠনে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া ভোটারদের জন্য ভোট প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল মনে হতে পারে।

    দলগুলোর অবস্থান মূলত তাদের রাজনৈতিক স্বার্থের ওপর নির্ভর করছে। যারা সরাসরি ভোটের পক্ষে, তারা বৃহত্তর জনমতের সুবিধা দেখতে চায়। যারা পিআর পদ্ধতির পক্ষে, তারা ছোট ও নতুন দলগুলোর অংশগ্রহণ বাড়ানোর স্বার্থে এই পদ্ধতিকে সমর্থন করছে। এই দ্বন্দ্ব শুধু নির্বাচনের ধরন নিয়ে নয় বরং দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত, ক্ষমতার ভারসাম্য এবং গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে যুক্ত।

    নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিবর্তন করলে রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান, তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ, জনগণের চাহিদা এবং সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব—সবই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এই বিতর্ক আগামী নির্বাচনের রূপ এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিক নির্ধারণ করতে পারে।

    প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন: ভোটের অনুপাতে আসন

    বাংলাদেশে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’। এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় প্রার্থীভিত্তিক। নির্বাচনি এলাকায় যিনি সর্বোচ্চ ভোট পান, তিনিই নির্বাচিত হন। এ পদ্ধতিতে যেসব রাজনৈতিক দল বড় ভোটসংখ্যা পায়, তারা সহজেই জয়ী হতে পারে। তবে ছোট বা মাঝারি দলের জন্য এ পদ্ধতিতে জয় পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একটি বিকল্প পদ্ধতি চালু করা হয়েছে—সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা বা ‘প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন’ (PR)।

    পিআর পদ্ধতিতে আসন নির্ধারণ হয় দলীয় ভিত্তিতে। এখানে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি প্রার্থী নির্বাচিত হয় না। ভোটাররা ভোট দেন দলের প্রতীকে। একটি দল যতো শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তাদের আসন সংখ্যা সেটির অনুপাতে নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৩০০ আসনের সংসদে ১ শতাংশ ভোট পাওয়া দল পাবে ৩টি আসন, ১০ শতাংশ ভোট পেলে ৩০টি আসন। এভাবে ভোটের অনুপাতের সঙ্গে সঙ্গে আসনও ঠিক করা হয়।

    বিশ্বের ৯১টি দেশে পিআর পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়েছে। এ অঞ্চলে নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় এটি ব্যবহার করা হয়। অনেক দেশে আবার ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট এবং প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশনের মিশ্র পদ্ধতিও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও মূলনীতিতে সব পিআর পদ্ধতি একই, তবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আইন অনুযায়ী এটি ভিন্নভাবে প্রয়োগ হয়।

    পিআর পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরও সমতুল্য সুযোগ নিশ্চিত করে। ছোট দলগুলোও তাদের ভোটের অনুপাতে আসন পেতে পারে। ফলে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বিস্তৃত হয় এবং বিভিন্ন মতামতের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। আবার, এটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি দলকে একপক্ষীয় মনোপলি তৈরি হতে বাধা দেয়। ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্টের তুলনায় এটি ভোটারদের চাহিদা ও সমমতের রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে সমান গুরুত্ব দেয়।

    পিআর পদ্ধতির ব্যতিক্রমগুলোও রয়েছে। কখনও কখনও ছোট দলগুলোর মধ্যে সমীকরণ ঠিক করা কঠিন হয়, আবার দলভিত্তিক ভোটের কারণে নির্দিষ্ট এলাকার প্রার্থীর জনপ্রিয়তার গুরুত্ব কমে যেতে পারে। তবে সঠিক প্রয়োগ ও দায়িত্বশীল দলীয় প্রার্থী তালিকার মাধ্যমে এ সমস্যা কমানো সম্ভব।

    সংক্ষেপে বলতে গেলে, প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন হলো একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি, যেখানে ভোট অনুযায়ী আসন বিতরণ হয়। এটি রাজনৈতিক বৈচিত্র্য নিশ্চিত করে, ছোট দলের অংশগ্রহণ বাড়ায় এবং সমান ভোটের মূল্যায়ন করে। এই পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশেও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ আরও সমতুল্য ও সমন্বিত হতে পারে।

    পিআর ভোট: সুবিধা-অসুবিধা ও বিশ্লেষণ

    নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদের মতে, সংখ্যানুপাতিক ভোট (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা পিআর) পদ্ধতি দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনা খুলে দিতে পারে। তবে এ পদ্ধতির সঙ্গে কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। দ্য ডেইলি স্টার তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছে।

    তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, ‘বর্তমান প্রচলিত ভোট পদ্ধতিতে বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন প্রভাবশালী পরিবার, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক শক্তির প্রভাবে পড়ছেন। এই প্রভাব থেকে সহজে বের হওয়া কঠিন। পিআর পদ্ধতি একমাত্র সমাধান নয়, তবে এটি একটি সম্ভাব্য পথ হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যদি অভ্যন্তরীণ সংস্কার করত, তাহলে পিআর কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি হতো। যদি তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত দলগুলো ডেমোক্র্যাটিক হতো, তাহলে নির্বাচনের ফলাফল আরও স্বচ্ছ হতো।’

    তোফায়েল আরও সতর্ক করেন, ‘কিন্তু শুধু পিআর পদ্ধতি চালু করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। বরং এতে কিছু দলের সুবিধাই বাড়বে। কারণ ভোটার পার্টিকে ভোট দেবে, ব্যক্তিকে নয়। তখন দল তার ইচ্ছেমতো প্রার্থী তালিকাভুক্ত করতে পারবে। এটি তাদের জন্য আরও সুবিধাজনক হবে।’

    পিআর পদ্ধতির সুবিধাও স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে এক দল একচেটিয়া ক্ষমতায় থাকবে না। ধরা যাক, পিআর পদ্ধতিতে ১ শতাংশ ভোট পাওয়া দলও আসন পেতে পারে। এতে সব দল আসন পাবে এবং সংসদে প্লুরালিজম বা বহুত্ববাদ বাড়বে। এটি নির্বাচনী ব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।’

    তবে পিআর পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। সরাসরি ভোটের মতো নির্বাচকরা তাদের এলাকার প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবেন না। ফলে নির্বাচিত প্রতিনিধির সঙ্গে এলাকার মানুষের সংযোগ কমে যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সংসদীয় পদ্ধতিতেও প্রার্থীকে দল মনোনয়ন দেয়। সেখানে ভোটারের সরাসরি কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। পিআরেও একই সমস্যা থাকবে।’

    তিনি আরও যুক্তি দেন, ‘আমাদের দেশে সিঙ্গেল পার্টি ডমিন্যান্ট সিস্টেম বিদ্যমান। টু পার্টি সিস্টেম ভেঙে গেছে। অতীতে আওয়ামী লীগ একচেটিয়া ক্ষমতায় ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা আবার সেই ধরনের একচেটিয়া ব্যবস্থার দিকে ফিরছি। পিআর পদ্ধতি কিছুটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে এবং সংখ্যানুপাতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করতে পারে।’

    তোফায়েল আহমেদ ‘সংস্কার সংলাপ (সূচনা সূত্র): রাষ্ট্র, নির্বাচন, শাসন-প্রশাসন ও সংবিধান’ শিরোনামের তার বইয়ে পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে দলগুলোর ইচ্ছাকৃতভাবে স্বামী-স্ত্রী বা আত্মীয়দের মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ভোটার পার্টিকে ভোট দেবে, ব্যক্তিকে নয়। ফলে নির্বাচকরা ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন প্রভাবিত করতে পারবে না। তবে তালিকা দেওয়ার মাধ্যমে মানুষের চয়েস সীমিত হবে।’

    তবুও তিনি মনে করেন, সীমিত পরিসরে পিআর পদ্ধতি পরীক্ষা করা যেতে পারে। ‘নেপালে এ পদ্ধতি চালু হয়েছে। এটি জটিল একটি পদ্ধতি, আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের জন্য বোঝা কঠিন হতে পারে। তাই উচ্চকক্ষের অর্ধেক আসনের জন্য পিআর পদ্ধতি কার্যকর করা যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে এবং কিছু মানুষ এটিকে সমর্থন করছে।’

    রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদও এই বিষয়টি সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, ‘পিআর ছোট ছোট দলগুলোকেও সংসদে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেয়। বড় দলগুলো যা মনে করে তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারবে, তারা এ কারণে বিরোধিতা করছে। কারণ পিআর সিস্টেমে তারা সব আসন একচেটিয়াভাবে পাবে না।’

    তিনি প্রচলিত ভোট পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাও তুলে ধরেন। ‘ধরা যাক, প্রচলিত পদ্ধতিতে একজন প্রার্থী ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়ে সিঙ্গেল মেজরিটি পেয়েছে। বাকি ৬৫ শতাংশ ভোট বিভিন্ন প্রার্থী পেয়েছে। তখন দেখা যায়, ৩৫ শতাংশের প্রতিনিধি পুরো ভোটারের প্রতিনিধিত্ব দাবি করছে। এটি স্পষ্টভাবে চ্যালেঞ্জের বিষয়।’

    মহিউদ্দিন আরও ব্যাখ্যা করেন, ‘যেসব দেশে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থা আছে, সেখানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না হলে অন্তত ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত দুই প্রার্থীর মধ্যে রিপোল হয়। অর্থাৎ প্রতিনিধিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের সমর্থন থাকতে হয়। এটাই পিআর পদ্ধতির মূল যুক্তি। আমাদের সংসদীয় ব্যবস্থায় এটি নেই।’

    তিনি পরামর্শ দেন, ‘নিম্নকক্ষে ৩০০ আসনে সরাসরি ভোট হতে পারে। সংরক্ষিত নারী আসনের ৫০টি আসনের ভোট পিআর পদ্ধতিতে দেওয়া যেতে পারে। উচ্চকক্ষের সব আসনও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করা যেতে পারে। সরাসরি ভোট এবং পিআর—দুটোর সংমিশ্রণেই একটি কার্যকর ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব।’

    পিআর পদ্ধতি নিয়ে মুখোমুখি বিএনপি-জামায়াত

    সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনি ব্যবস্থা (Proportional Representation বা পিআর) নিয়ে দেশের দুই প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বিপরীত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। একদিকে বিএনপি মনে করছে, এই পদ্ধতি দেশে বিভক্তি ও অস্থিতিশীলতা ডেকে আনতে পারে। অন্যদিকে জামায়াত বলছে, পিআর ছাড়া জনগণ কোনো নির্বাচন মানবে না।

    বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সতর্ক করে বলেছেন, পিআর ব্যবস্থা দেশের রাজনীতিতে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজন তৈরি করতে পারে। তার ভাষায়, এই পদ্ধতিতে সমাজে বিরোধ বাড়বে, সংসদ দুর্বল হবে, সরকার অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। তিনি আরও মনে করেন, এর আড়ালে এমন এক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হবে যা দেশের মানুষের অগোচরে পরাজিত অপশক্তিকে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেবে।

    অর্থাৎ, বিএনপির দৃষ্টিতে পিআর ব্যবস্থা শুধু সাংবিধানিক বা প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নয় বরং রাজনৈতিক ভারসাম্যে বড় ধরনের অস্থিরতা আনার পথ।

    অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার একেবারেই ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। তার মতে, জনগণ কোনোভাবেই পিআর ছাড়া নির্বাচন মেনে নেবে না। তিনি মনে করেন, এই পদ্ধতি চালু হলে মানুষের ভোটের প্রতিফলন সংসদে আরও সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে।

    সাম্প্রতিক নির্বাচনি ফলাফলের হিসাব কষলেই দুই দলের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

    • ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ১৩ শতাংশ ভোট। এতে তাদের আসন দাঁড়ায় ছয়টিতে, যা দলের ইতিহাসে সবচেয়ে কম। অথচ যদি পিআর পদ্ধতি থাকত, সেই একই ভোটের হার তাদের আসন বাড়িয়ে ৩৯টিতে পৌঁছাত।
    • ২০০১ সালের নির্বাচনের হিসাবও ভিন্ন চিত্র দেখায়। সেবার বিএনপি ৪১ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৯৩টি আসনে জয়ী হয়েছিল। পিআর পদ্ধতিতে সেই হার অনুসারে আসন হতো ১২৩টি, যা বর্তমান সংখ্যার তুলনায় অনেক কম।
    • ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল ৩২ শতাংশ ভোট। এতে তাদের আসন দাঁড়ায় মাত্র ৩০টিতে। কিন্তু পিআর ব্যবস্থায় সেই ভোটের হারেই তারা পেত ৯৬টি আসন।

    এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়, পিআর ব্যবস্থায় বিএনপি কখনো লাভবান হবে, আবার কখনো আসন কমে যাবে। ফলে তাদের অবস্থান এই পদ্ধতির পক্ষে নয়।

    জামায়াতের ক্ষেত্রেও একই রকম অঙ্ক করা যায়। ১৯৯১ সালে দলটি সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। তাতে তারা সংসদে আসন পেয়েছিল ১৮টি। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে ভোটের হার একই থাকলে আসন হতো ৩৬টি—অর্থাৎ আসন দ্বিগুণ হয়ে যেত।

    এই হিসাবই প্রমাণ করে, জামায়াত পিআর পদ্ধতিতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ সরাসরি ভোটে তারা খুব বেশি আসন না পেলেও জাতীয়ভাবে তাদের ভোটের শতাংশ মোটামুটি স্থিতিশীল।

    সুতরাং সরলভাবে বলা যায়, বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থানের মূল কারণ লুকিয়ে আছে নির্বাচনি অঙ্কের ভেতরেই। বিএনপি আশঙ্কা করছে, এই ব্যবস্থায় তাদের ক্ষমতায় ফেরাটা আরও কঠিন হয়ে উঠবে। অন্যদিকে জামায়াত দেখছে, এতে তাদের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের সুযোগ তৈরি হবে।

    এই কারণেই বিএনপি পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে আর জামায়াত তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। রাজনৈতিক ভবিষ্যতের সমীকরণই দুই দলকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে।

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    অর্থনীতি

    টানা তিন মাস ধরে কমছে পোশাক রপ্তানি

    November 5, 2025
    শিক্ষা

    বিশ্বে বইপড়ায় শীর্ষে আমেরিকানরা, তলানিতে বাংলাদেশ

    November 5, 2025
    অপরাধ

    শিক্ষা সহকারী সচিবের শুধু ব্যাংকেই লেনদেন ১৭ কোটি!

    November 5, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.