দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ তীব্র শিক্ষক সংকটে ভুগছে। অর্ধেকের বেশি পদ শূন্য থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ফলে কর্মরত শিক্ষকরা অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক চাপের মধ্যে কাজ করছেন, অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও বঞ্চিত হচ্ছেন মানসম্মত পাঠদান থেকে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এসব কলেজে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত আছেন ২ হাজার ৫৪৪ জন। অথচ পদ আছে ৫ হাজার ২৪১টি। অর্থাৎ শূন্য রয়েছে ২ হাজার ৬৯৭টি পদ, যা মোট পদের ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ।
অধ্যাপক ৯০০ পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ৩১২ জন। সহযোগী অধ্যাপক ১ হাজার ৭১০ পদের বিপরীতে কর্মরত ৯২০ জন। আর সহকারী অধ্যাপক ২ হাজার ৬৩১ পদের বিপরীতে আছেন ১ হাজার ৩১২ জন। এ হিসেবে যথাক্রমে ৫৮৮, ৭৯০ ও ১ হাজার ৩১৯টি পদ শূন্য।
ক্লিনিক্যাল ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মোট ১ হাজার ৭০৩ পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ৯৪৫ জন। শূন্য ৭৫৮টি। বেসিক সাবজেক্টে (অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ফরেনসিক, কমিউনিটি মেডিসিন, ফার্মাকোলজি, মাইক্রোবায়োলজি ও প্যাথলজি) ২ হাজার ১৫৫টি পদের মধ্যে আছেন ১ হাজার ৬২৪ জন শিক্ষক। শূন্য রয়েছে ৫৩১টি।
একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অনেক সময় তিন শিক্ষকের কাজ একজনকেই করতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন, শিক্ষকরাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছেন।”
সংশ্লিষ্টদের মতে, নিয়োগ ও পদোন্নতির দীর্ঘসূত্রতা এ সংকটের মূল কারণ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর আট মাস কোনো পদোন্নতি বোর্ড হয়নি। পরে পদোন্নতি হলেও নতুন পদায়ন আটকে যায় সফটওয়্যারভিত্তিক সিস্টেম চালুর উদ্যোগে।
বেসিক সাবজেক্টের শিক্ষক সংকট নিরসনে ২০১৯ সাল থেকে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি প্রণোদনার হার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে তা আটকে যায়। পরে ৭০ শতাংশ হারে অনুমোদন মিললেও প্রজ্ঞাপন এখনো জারি হয়নি। এছাড়া সরকারি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের মাসিক ২০ হাজার টাকা প্রণোদনার প্রস্তাবও অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
অধিদপ্তরের এক পরিচালক দাবি করেছেন, শিক্ষক সংকট থাকা সত্ত্বেও মেডিকেল শিক্ষার মান ব্যাহত হয়নি। তাঁর ভাষায়, “শিক্ষকরা দ্বিগুণ-তিন গুণ কাজ করছেন। কারিকুলাম ও পরীক্ষা ক্যালেন্ডার অনুযায়ীই শেষ হচ্ছে।”
তবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হোসেন স্বীকার করেছেন, সংকট শিক্ষার গুণগত মানে প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন, “শিক্ষক সংকট নিরসনে কাজ চলছে। পদোন্নতি হয়েছে, শিগগিরই সফটওয়্যারের মাধ্যমে পদায়নও সম্পন্ন হবে।”
তিনি আরও জানান, বেসিক সাবজেক্টে শিক্ষার্থী তৈরি করতে প্রণোদনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মিললেই তা কার্যকর হবে।