স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেসামরিক বিমান চলাচলের নিরাপত্তা আরও জোরদার করার জন্য ‘অ্যাভিয়েশন গার্ড বাংলাদেশ (এজিবি)’ নামে একটি আধাসামরিক বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা করছে। সংঘবদ্ধ অপরাধ, সাইবার হামলা, ড্রোন ও বোমা হামলার মতো হুমকি মোকাবিলার জন্য এই নতুন বাহিনী অপরিহার্য বলে মন্ত্রণালয় মনে করছে। প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, এ বাহিনীতে ৭ হাজার ৬৫০ জন সদস্য থাকবেন এবং সম্ভাব্য বাজেট ধরা হয়েছে ৭৭১ কোটি টাকা।
বর্তমানে দেশের বিমানবন্দর নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছে বেবিচক, এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও আনসার বাহিনী। তবে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বেবিচকের ‘অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি (অ্যাভসেক)’ শাখা যাত্রী, ক্রু ও উড়োজাহাজের নিরাপত্তা দায়িত্ব পালন করলেও সংবেদনশীল এলাকাগুলো যেমন অ্যাপ্রন, সীমানা, জ্বালানি ডিপো ও কার্গো পরিবহন আরও সুরক্ষিত করতে নতুন বাহিনী কার্যকর হবে।
এজিবি কেবল নিরাপত্তা নয়, অর্থপাচার প্রতিরোধ, অব্যবহৃত রানওয়ে রক্ষা এবং হেলিকপ্টারের মাধ্যমে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমও পরিচালনা করবে। বাহিনীটি পরিচালনা করবেন বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা, তবে প্রয়োজনে বেসামরিক ব্যক্তি ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রথম দিকে বাহিনীর ৭০ শতাংশ সদস্য আসবেন বিমানবাহিনী থেকে, দীর্ঘমেয়াদে লক্ষ্য রাখা হয়েছে ৫০-৫০ ভাগ।
নেতৃত্ব হবে সম্পূর্ণ বিমানবাহিনীর—একজন এয়ার ভাইস মার্শাল, দুইজন গ্রুপ ক্যাপ্টেন, দুইজন উইং কমান্ডার ও একজন উপসচিব এয়ার ভাইস মার্শালের অধীনে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনটি শাখার মাধ্যমে বাহিনী পরিচালিত হবে, যার দুটির নেতৃত্ব দেবেন এয়ার কমোডর এবং একটি শাখা পরিচালনা করবেন একজন অতিরিক্ত সচিব।
এজিবি ধাপে ধাপে ২০২৬ থেকে ২০৩২ সালের মধ্যে কার্যকর হবে। প্রথম ধাপে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দরে ২ হাজার ১৫০ জন সদস্য মোতায়েন হবে। পরবর্তী ধাপে রাজশাহী, সৈয়দপুর, যশোর ও বরিশাল বিমানবন্দরে ৫০ শতাংশ নিয়োগ দেওয়া হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সব বিমানবন্দরে পূর্ণাঙ্গভাবে বাহিনী মোতায়েন হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমান খান জানিয়েছেন, এজিবি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে এবং কেবল সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “বর্তমানে প্রায় ২০টি সংস্থা বেসামরিক বিমান চলাচল ব্যবস্থাপনায় জড়িত। একক সংস্থা কেন্দ্রীয়ভাবে কাজ করলে সমন্বয় অনেক ভালো হবে।”
এই প্রস্তাব নতুন নয়। এর আগে ১০ মার্চ বেবিচকের নিরাপত্তা বিভাগ ‘বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স’ নামে একটি ১০ হাজার ৬৩২ সদস্যের আধাসামরিক বাহিনী গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে তা বাতিল করা হয়।
বিমানবন্দর নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুরোনো বিতর্কও রয়েছে। ২০১০ সালে এপিবিএনকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মোতায়েন করা হলেও ২০২২ সালে কক্সবাজার বিমানবন্দরে দায়িত্ব দেয়ার পর বিতর্ক শুরু হয়। ২০২৪ সালে বিমান বাহিনী আবার দায়িত্ব নিয়েছে। এর মধ্যেই এপিবিএন অভিযোগ করেছে যে তাদের অফিস ও সরঞ্জাম বিমানবাহিনী জঙ্গিবাহিনী টাস্ক ফোর্সের নামে দখল করেছে।
শেষ পর্যন্ত বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়, বেবিচক ও পুলিশ মহাপরিদর্শক সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় যে বিমানবন্দরগুলোর সব নিরাপত্তা কার্যক্রম বেবিচকের অধীনে পরিচালিত হবে এবং এপিবিএন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের দায়িত্ব পুনরায় শুরু করবে।
এজিবি গঠনের পরিকল্পনা এখনো মন্ত্রণালয় পর্যায়ে চলছে, তবে লক্ষ্য স্পষ্ট—বেসামরিক বিমান চলাচলের নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করা এবং বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা।