বাংলাদেশে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অবাধে চলা ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার বা ইজিবাইককে এবার নিবন্ধনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শিল্প মন্ত্রণালয় প্রণীত ‘ইলেকট্রিক ভেহিকল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২৫’-এর খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নির্ধারিত মান ও পরীক্ষার মাধ্যমে ইজিবাইক নিবন্ধন দেওয়া হবে।
২০২২ সালের এক রিট আবেদনে দেশে প্রায় ৪০ লাখ ইজিবাইক চলাচলের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। এতদিন কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এর সংখ্যা লাগামহীনভাবে বেড়েছে। এবার খসড়া নীতিমালার মাধ্যমে শুধু নিয়ন্ত্রণ নয়, শিল্প খাতের উন্নয়নকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বিআরটিএ ‘বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২৫’-এর খসড়া করেছে, যার উদ্দেশ্য সড়ক ও মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল নিয়ন্ত্রণ, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস এবং চালকদের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থা করা।
অন্যদিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিপুলসংখ্যক ইজিবাইক নিবন্ধনের পাশাপাশি যন্ত্রাংশ উৎপাদন, প্রকৌশল দক্ষতা অর্জন ও রফতানির সুযোগ তৈরির দিকেও নজর দেওয়া হবে। বাংলাদেশকে উৎকৃষ্ট মানের বিদ্যুৎচালিত মোটরযান ও যন্ত্রাংশ উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
বুয়েট ইতোমধ্যেই নিরাপদ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মডেল তৈরি করেছে, যেখানে হাইড্রোলিক ব্রেক, দরজা, উইন্ডশিল্ড ও ইন্ডিকেটরসহ যাত্রী ও চালকের নিরাপত্তা বাড়াতে বেশকিছু সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ তিন চাকার নিরাপদ প্রটোটাইপ ও চার চাকার মডেলও তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হকের মতে, নীতিমালা প্রণয়নের পরও সঠিক বাস্তবায়নের অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, একদিকে বৈদ্যুতিক যানবাহনের প্রচলন বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে—যা দূষণ নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে।
র্যাপিডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নীতিমালা কার্যকর হলে পুরনো ব্যাটারি নিষ্পত্তি, পুনর্ব্যবহার ও চার্জিং অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ায় এখন তুলনামূলক কম দামে পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক যান আমদানি সম্ভব হবে।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, যাত্রী সুরক্ষার জন্য ব্যাটারি স্থাপন এমনভাবে করতে হবে যাতে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ঝুঁকি না থাকে। এছাড়া শিল্প খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা, নগদ প্রণোদনা এবং পর্যবেক্ষণের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।