চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে এবার প্রধান ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন হলের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা। এই শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন শহর থেকে যাতায়াত করে ভোট দিতে ক্যাম্পাসে আসেন। মোট শিক্ষার্থী ২৮,৫১৫ জনের মধ্যে প্রায় ১০–১১ হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিত শহর থেকে যাতায়াত করেন। ফলে তাঁদের ভোট যে প্যানেল বা প্রার্থী পাবেন, সেই প্যানেলই নির্বাচনে এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার ফজল জানান, “চাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে পারব, এটা ভাবিনি কখনো। পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগে অন্তত একটি বড় ঘটনার সাক্ষী হচ্ছি।” শহরের নানা এলাকা থেকে আসা শিক্ষার্থীরা শাটল ট্রেন, বাস বা অটোরিকশা ভাড়া করে ভোট দিতে ক্যাম্পাসে পৌঁছান।
বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৪টি আবাসিক হলে ৬,৩৬৯ আসন রয়েছে। তবে বাস্তবে হলে থাকার সুযোগ পান মাত্র ৯,০০০ শিক্ষার্থী, ৫,০০০ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের আশপাশের কটেজ ও মেসে থাকেন এবং ১০–১১ হাজার শিক্ষার্থী শহরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন। এই অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট যে প্যানেলের দিকে যায়, সেটিই ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শহরের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা উৎসাহিত হলেও ভোটের দিন নিরাপত্তা ও পরিবহন-সংকট নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। শহর থেকে প্রতিদিন শাটল ট্রেনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে পৌঁছান। ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, “শাটল ট্রেনে যাঁরা আসেন, তাঁরা বড় ভোটব্যাংক। শহরের ভোটাররা নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিতে পারেন।”
নির্বাচন প্রার্থীরা শহরের ষোলশহর রেলস্টেশনেও প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সমর্থিত প্যানেল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করছেন ইব্রাহিম হোসেন। তিনি জানান, “প্রতিদিন হাজারও শিক্ষার্থী শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসেন। তাই এখানে প্রচারণা চালানো অপরিহার্য।”
বামপন্থী প্যানেল ‘দ্রোহ পর্ষদ’-এর ভিপি প্রার্থী ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ বলেন, “অবকাঠামোগত সমস্যা যেমন আবাসন সংকট এখনও সমাধান হয়নি। শিক্ষার্থীরা বাড়তি খরচ করে মেসে ও কটেজে থাকেন। এই বিষয়গুলো আমাদের ইশতেহারে প্রতিফলিত করা প্রয়োজন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. বখতেয়ার উদ্দীন বলেন, “শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ হলের বাইরে থাকেন। তাঁদের ভোট যে প্রার্থী বা প্যানেল পাবেন, তিনি নির্বাচনে এগিয়ে থাকবেন। তাই ইশতেহারে অবশ্যই অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের কল্যাণে প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।”
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ১৫ অক্টোবর সপ্তম চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবার প্রার্থীর সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়েছে এবং ১৩টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। ভোটের দিন নিরাপত্তা জোরদার থাকবে এবং শাটল ট্রেন ঘণ্টায় ঘণ্টায় চলবে।