কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামে নদীভাঙনের তাণ্ডবে অসহায় মানুষদের জীবিকা বিপন্ন। টানা ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে দুধকুমার নদে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে স্থানীয় মনছেনা বেগম (৩৮) নামে এক বাসিন্দার বসতভিটা নদে বিলীন হয়ে গেছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “নদী ভাঙতে ভাঙতে এমন অবস্থা করছে, একটু আশ্রয় নেমো তার উপায় নাই। বৃষ্টি আর ঢলে ধপ ধপ করি কাছার (নদী তীরবর্তী জমি) ভাঙি বসতবাড়ি-গাছপালা সউগ গিলি খাইল। অসহায় হয়ে অন্য দেশে (ভিন্ন উপজেলায়) চলে যাচ্ছি। সেখানে পোলাপান যাইতে চায় না। ইচ্ছে করে নদীত ভাসাই দেই, দিতে পারি না। চোখের মায়া।”
বিগত ১০ বছরে তিনবার নদীভাঙনে বসতবাড়ি ও জমি হারিয়ে ভূমিহীন হয়ে পড়েছেন মনছেনা বেগম। ২০২২ সালের ভাঙনের পর যাত্রাপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ায় বছর চুক্তিতে জমি ইজারা নিয়ে বাড়ি করেছিলেন। কিন্তু সোমবারের ভাঙনে সেই বাড়িও নদীতে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে তিনি পাশের নাগেশ্বরী উপজেলার চর নারায়ণপুরে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের দুধকুমার নদীর তীরবর্তী চর যাত্রাপুর ও বানিয়াপাড়া এলাকায় প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার বসবাস করে। নদীর পানি বেড়ে গেলে সোমবার মাত্র এক দিনে ৩০টি বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে। পাশাপাশি আরো দুই শতাধিক পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, “কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে চোখের সামনে ১৭টি বাড়ি ভেঙে গেছে। কিছুই করতে পারিনি।”
উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। রাজারহাট উপজেলার নাজিমখান ইউনিয়নের হাঁসার পাড় এলাকায় তিস্তা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েক বছর আগে সেখানে পাউবো জিও ব্যাগ ফেলেছিল। উজানের স্রোতে ব্যাগের কিছু অংশ ভেসে গেছে, কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কয়েক শত পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ধরলা নদীর ভাঙনে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের দুই শতাধিক পরিবারও ঝুঁকির মুখে আছে।
পাউবোর কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, “উজানের ঢলে ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ কয়েকটি নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন মোকাবিলার চেষ্টা করছি। যাত্রাপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ার ভাঙন মোকাবিলার জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। তবে ঠিকাদারের কর্মী সংকট থাকায় সোমবার কাজ শুরু করা যায়নি।”
জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, “উজানের ঢলে হঠাৎ নদ-নদীর পানি বেড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাউবোকে ভাঙন মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
নদীভাঙনের কারণে এলাকার মানুষের জীবন, বসতবাড়ি এবং জমি ধ্বংস হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে নদী নিয়ন্ত্রণ ও ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা সবসময় বেড়ে যাচ্ছে।