কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, গঙ্গাধর ও জিনজিরামসহ ২৬ নদ-নদী ও অসংখ্য খাল-বিলে এখন আর মিলছে না আগের মতো দেশি মাছ। মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল পেশাদার জেলেরা বলছেন, বিদেশি অবৈধ ‘মরণ জাল’ই এই সংকটের মূল কারণ।
স্থানীয়ভাবে ‘চায়না জাল’, ‘রিং জাল’ বা ‘চায়না দুয়ারী জাল’ নামে পরিচিত এই জালের বুনন অত্যন্ত সূক্ষ্ম। এতে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ ও জলজ প্রাণী আটকা পড়ে। ফলে পোনা ও মা মাছ ধরা পড়ায় প্রাকৃতিকভাবে মাছের বংশবিস্তার মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ভুক্তভোগী পেশাদার জেলেরা জানান, তারা এই জাল ব্যবহার করেন না, কারণ এতে মা ও পোনা মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু অপেশাদার জেলেরা দ্রুত লাভের আশায় নির্বিচারে এই জাল ব্যবহার করছেন। একেকটি ‘মরণ জাল’-এর দাম ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে হওয়ায় পেশাদার জেলেদের পক্ষে এ বিনিয়োগ সম্ভব নয়। এতে তারা জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে পড়ছেন।
কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর তীরে সারডোব গ্রামের কৃষক সুলতান আহমেদ বলেন, “আগে নদী ও খাল-বিলে দেশি মাছের প্রাচুর্য ছিল। কিন্তু পাঁচ-ছয় বছর আগে চায়নার এই জাল ব্যবহারের পর থেকে মাছ ক্রমে কমে যাচ্ছে। এখন নদীতে নামলে তেমন মাছই পাওয়া যায় না। নিষিদ্ধ হলেও অভিযান প্রায় নেই।”
রাজারহাটের কৃষক দিদারুল হক বলেন, “এই জাল দেশি মাছের বংশ ধ্বংস করছে। আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ না করলে কয়েক বছরের মধ্যেই নদী থেকে দেশি মাছ হারিয়ে যাবে।”
একই এলাকার জেলে সুরেশ চন্দ্র দাস জানান, “আমরা প্রজন্ম ধরে মাছ ধরি, কিন্তু মা ও পোনা মাছ কখনো ধরি না। এখন অপেশাদার জেলেরা নিষিদ্ধ জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছ ধরছে। এতে আমাদের পেশা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা সহিদার রহমান বলেন, “সবাই জানে জালটি নিষিদ্ধ, তবুও এটি বাজারে সহজলভ্য। প্রশ্ন হলো—এই জাল চীন থেকে দেশে আসছে কীভাবে?”
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শুটকু দাস বলেন, “এই মরণ জালের আমদানি, বিক্রি ও ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। না হলে শুধু জেলেদের জীবিকা নয়, পুরো দেশের মৎস্যসম্পদই বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।”
কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুক্তাদির খান বলেন, “চায়নার মরণ জাল মাছের জন্য বড় হুমকি। এটি পোনা ও মা মাছ নির্বিচারে ধরছে, ফলে প্রাকৃতিক বংশবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি এবং জাল জব্দ করছি, তবে ব্যবহার পুরোপুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি এবং কঠোর আইনগত ব্যবস্থার সুপারিশ করেছি।”