Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Sat, Oct 11, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বানিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • প্রযুক্তি
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » কাজের খোঁজে কেন তরুণরা হাওর ছেড়ে যাচ্ছে শহরে
    বাংলাদেশ

    কাজের খোঁজে কেন তরুণরা হাওর ছেড়ে যাচ্ছে শহরে

    এফ. আর. ইমরানOctober 11, 2025
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের মুঝরাই গ্রাম। সম্প্রতি কয়েকটি পরিবার কাজের খোঁজে এ গ্রাম ছেড়েছেছবি: প্রথম আলো
    সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের মুঝরাই গ্রাম। সম্প্রতি কয়েকটি পরিবার কাজের খোঁজে এ গ্রাম ছেড়েছে। ছবি: প্রথম আলো
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    টাঙ্গুয়ার হাওরের বিস্তীর্ণ জলরাশির মধ্যে ছোট্ট একটি গ্রাম মুঝরাই। এটি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় পড়েছে। উপজেলা সদর থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় রওনা দিলে ঘণ্টা দেড়েকের পথ।

    আমরা গ্রামটিতে পৌঁছালাম বেলা আড়াইটার দিকে (গত ২৩ সেপ্টেম্বর)। এক পাশ ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় চোখে পড়ল টিনের ছাউনি ও বাঁশের বেড়ার একটি ঘর। দাওয়ায় বসা এক নারী। বয়স চল্লিশের মতো। কাছে গিয়ে নাম জানতে চাইলাম। বললেন, নাম রেখা বর্মন।

    অনেকক্ষণ কথা হলো। রেখা বর্মন জানালেন, তাঁর স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। একমাত্র ছেলে রবিন বর্মন মাস দুয়েক হলো বাড়ি ছেড়েছে। কাজের খোঁজে গেছে গাজীপুরে। সেখানে একটি পোশাক কারখানায় কাজ নিয়েছে।

    কেন রবিন বাড়ি ছাড়ল, জানালেন রেখা বর্মন বলেন, জুলাই মাসের প্রথম দিকে পরপর তিন দিন হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে খালি হাতে ফিরেছিল রবিন। একদিন এসে বলেছিল, ‘আমি আর গেরামও থাকতাম না। চাকরি করতে ঢাকাত যাইমুগি।’

    রেখা বর্মনের সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম, তখন আশপাশের বাড়ি থেকে জনা দশেক নারী–পুরুষ এলেন। তাঁরা জানালেন, শুধু রবিন একা নন, গ্রাম থেকে অনেক পুরুষই অন্যত্র গেছেন কাজের খোঁজে। কারণ, হাওরে এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। গ্রামে বিকল্প কর্মসংস্থানও নেই। ফলে জীবিকার জন্য তাঁদের হাওর ছাড়তে হচ্ছে।

    কেন রবিন বাড়ি ছাড়ল, জানালেন রেখা বর্মন। বললেন, জুলাই মাসের প্রথম দিকে পরপর তিন দিন হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে খালি হাতে ফিরেছিল রবিন। একদিন এসে বলেছিল, ‘আমি আর গেরামও থাকতাম না। চাকরি করতে ঢাকাত যাইমুগি।’

    সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলের পাঁচটি গ্রামে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে এবং জেলার সরকারি–বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাজের খোঁজে সব সময়ই কিছু কিছু মানুষ হাওর ছাড়ে। তবে এ ধরনের ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে। বিশেষ করে ২০১৭ সালে হাওরে আগাম বন্যায় ফসলহানির পর হাওরের গ্রাম থেকে শহরে কাজের খোঁজে যাওয়া পুরুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

    সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়াও স্বীকার করেন, হাওরের গ্রাম থেকে মানুষ শহরের উদ্দেশে কাজের খোঁজে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তাঁরা এ বিষয়টি অনেক দিন ধরে লক্ষ করছেন। মানুষের যে প্রচলিত কর্মসংস্থান ছিল, তাঁরা মনে করছেন, সেটা আর নিরাপদ নয়। এ কারণে অনেকে ঢাকাসহ নানা শহরে কাজ করতে চলে যাচ্ছে।

    ২০১৭ সালের বন্যার পর ত্রাণ দিতে হাওরের গ্রামগুলোতে গিয়েছিলাম। তখন দেখি একটি পরিবার হাঁড়িপাতিল, তোশক, নানা জিনিস, গরুসহ নৌকায় গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে। মানুষের সেই যাত্রা যে শুরু হলো, আর থামেনি।
    পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা

    বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সারা দেশে গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর হওয়া মানুষের সংখ্যা প্রতি ১ হাজারে ছিল ১৫ জন, যা ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ জনে। ২০২২ সালে তা আরও বেশি ছিল (২৬ দশমিক ৪)। এ ক্ষেত্রে অবশ্য সুনামগঞ্জের তথ্য আলাদাভাবে পাওয়া যায়নি।

    হাওর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা। তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালের বন্যার পর ত্রাণ দিতে হাওরের গ্রামগুলোতে গিয়েছিলাম। তখন দেখি একটি পরিবার হাঁড়িপাতিল, তোশক, নানা জিনিস, গরুসহ নৌকায় গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে। মানুষের সেই যাত্রা যে শুরু হলো, আর থামেনি।’

    মুঝরাইয়ে কয়েক ঘণ্টা-

    মুঝরাই গ্রামের চারপাশে পানি। মাঝে ‘নাক উঁচু করে’ দ্বীপের মতো জেগে থাকা এই গ্রামে ৪০টির মতো পরিবারের বাস। সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী। বেশির ভাগই অসচ্ছল। গ্রামের মানুষের জীবিকার উৎস মূলত দুটি—বর্ষার মাছ আর শুকনা মৌসুমের ধান।

    রেখা বর্মনের ঘরের সামনে জটলায় ছিলেন প্রবীণ রায়মোহন বর্মন। তিনি স্মৃতিচারণা করে বললেন, ‘আমরার যৌবনকালে একবার মাছ ধরলে এক সপ্তাহ মাছ ধরা লাগত না। এত মাছ ধরা পড়ত। আমরা ত মাছ ধইরা জীবন কাটাইছি। হাওরে মাছ না থাকলে আমরা বাঁচতাম কিলা।’

    রায়মোহন জানান, তাঁর বড় ছেলে সজীব বর্মন গ্রাম ছেড়েছে চার বছর আগে। এখন গাজীপুরে একটি ইটভাটায় কাজ করে। সজীবের মতো আরও অনেকের নাম জানালেন তিনি।

    নিকুঞ্জ বর্মন নামের গ্রামের আরেক বাসিন্দা বললেন, ‘মাছ ধরবার যন্ত্রপাতি কিনতে অয় সুদের ঋণের টাকায়। মাছই ত অখন না, সুদের টেকা দিব কিবায়। এর লাগি মানুষ যে যেবাং পারছে গ্রাম ছাড়ের।’

    মুঝরাই গ্রাম থেকে বের হয়ে নৌকায় মিনিট বিশেকের মতো পাড়ি দিয়ে পৌঁছালাম হাওরের আরেক গ্রাম জয়পুরে। সেটিও মুঝরাইয়ের মতো, চারপাশে পানি। এই গ্রামে ৬০টির মতো পরিবারের বাস। সবাই মুসলমান। প্রায় সবাই অসচ্ছল।

    মাছ ধরবার যন্ত্রপাতি কিনতে অয় সুদের ঋণের টাকায়। মাছই ত অখন না, সুদের টেকা দিব কিবায়। এর লাগি মানুষ যে যেবাং পারছে গ্রাম ছাড়ের।
    নিকুঞ্জ বর্মন

    নৌকা থেকে নেমে জয়পুরে যাকে প্রথম পাওয়া গেল, তাঁর নাম অজুদ মিয়া। বয়স চল্লিশের মতো। জানতে চাইলে তিনি জানালেন, জয়পুরে শুধু পুরুষেরা নন, কেউ কেউ পরিবারসহ গ্রাম ছেড়েছেন। কাজের খোঁজে তিন–চার মাসে গ্রাম ছাড়া পরিবারের সংখ্যা অন্তত ১০।

    জয়পুর গ্রামের প্রবীণদের একজন আবুল ফজল। বয়স ৭০ বছরের বেশি। তিনি জানালেন, আগে হেমন্তে ধান কাটতেন। আর বাকি মৌসুমে মাছ ধরতেন। মাছ আর ধান ছিল হাওরের প্রাণ। কিন্তু মাছ এখন কম পাওয়া যায়। আর ধানে লাভ কম। এ কারণে দরিদ্র পরিবারের পুরুষেরা এখন কাজের খোঁজে শহরে চলে যাচ্ছে।

    আবুল ফজল আরও জানান, হাওরে এক বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করতে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা লাগে। আরও খরচ আছে। কিন্তু যে ধান হয়, তাতে কখনো লাভ থাকে, কখনো লোকসান হয়। যে বছর পাহাড়ি ঢল হয়, সে বছর পুরোই লোকসান।

    জয়পুর গ্রাম থেকে বের হয়ে গোলবাড়ি, ছিলানী তাহিরপুর, মান্দিয়াতা ও রনসি গ্রামে গিয়েও একই কথা জানা গেল।

    মুঝরাই, জয়পুরসহ ১২টি গ্রাম পড়েছে উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের মধ্যে। এই ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সাজিনুর মিয়া জানান, তাঁর ওয়ার্ডের প্রতিটি গ্রাম থেকে পুরুষেরা গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওর এখন ধ্বংস অই গেছে। ধ্বংসের কারণ এখন এটা কেউ সংরক্ষণ করে না। টাঙ্গুয়ার হাওরে আগে দেড়শ ছোট-বড় অভয়াশ্রম ছিল। সব ধ্বংস হয়ে গেছে।’

    সাজিনুর দুটি কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন। প্রথমত, হাওরের মাটির বাঁধ ভেঙে নদীতে পড়ে। এতে পানি ঘোলা হয়ে যায়। পানি ঘোলা হলে মাছ থাকে না। দ্বিতীয়ত, টাঙ্গুয়ার হাওরকে ‘রামসার সাইট’ ঘোষণা করার পর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। মাছ রক্ষা করার কেউ নাই।

    টাঙ্গুয়ার হাওর দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট। জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেসকো ‘দ্য কনভেনশন অন ওয়েটল্যান্ডস’–এর আওতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমিকে রামসার সাইট হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০০ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে রামসার সাইট ঘোষণা করা হয়। দেশের বাকি দুই রামসার সাইট হলো সুন্দরবন ও হাকালুকি হাওর। এর উদ্দেশ্য হলো, জলাভূমি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা।

    আগে ইজারাদারেরা হাওরে হিজলগাছের কাণ্ড ফেলে রাখত। বাঁশের খুঁটি দিত। ছোট ছোট নৌকা ডুবিয়ে মাছের প্রজননের জন্য জায়গা করে দিত। সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়ার পর এসব আর করা হয় না। অন্যদিকে উজান থেকে বালু এসে হাওর ভরাট হচ্ছে। ধান চাষে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়েছে। সব মিলে মাছের আকাল শুরু হয়েছে।
    তাহিরপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামের আহমদ কবীর

    কেন মাছ কমছে-

    সরকার টাঙ্গুয়ার হাওরকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে ১৯৯৯ সালে। এরপর হাওর ইজারা দেওয়ার প্রথা বাতিল করে জেলা প্রশাসন হাওর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয় ২০০৩ সালে। এ জন্য গঠন করা হয় একটি সহব্যবস্থাপনা কমিটি।

    সহব্যবস্থাপনা কমিটিতে দীর্ঘদিন সদস্যসচিব হিসেবে কাজ করেছেন তাহিরপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামের আহমদ কবীর। তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর কয়েক বছর তাদের সক্রিয়তা ছিল। পরবর্তী সময়ে তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ইজারা প্রথা যখন ছিল, তখন ইজারাদার নিজের স্বার্থে হাওর পাহারা দিত। এখন সরকার মাত্র ১০ জন আনসার সদস্য দিয়ে ১২ হাজার হেক্টর আয়তনের টাঙ্গুয়ার হাওর পাহারা দেয়। যেটা বাস্তবিক অর্থে সম্ভব না। ফলে লোকজন কোনা জাল, চায়না দুয়ারি জাল, বৈদ্যুতিক ‘শক’ দিয়ে মাছ ধরে সব শেষ করে দিয়েছে।

    হাওরে কোনো ধরনের মৎস্য ব্যবস্থাপনা নেই বলে দাবি করে আহমদ কবীর বলেন, আগে ইজারাদারেরা হাওরে হিজলগাছের কাণ্ড ফেলে রাখত। বাঁশের খুঁটি দিত। ছোট ছোট নৌকা ডুবিয়ে মাছের প্রজননের জন্য জায়গা করে দিত। সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়ার পর এসব আর করা হয় না। অন্যদিকে উজান থেকে বালু এসে হাওর ভরাট হচ্ছে। ধান চাষে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়েছে। সব মিলে মাছের আকাল শুরু হয়েছে।

    জেলে, আড়তদার ও মৎস্য সমিতির নেতারা মাছ আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না বললেও সুনামগঞ্জের জেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ বছর ধরে জেলাটিতে মাছের উৎপাদন বেড়েছে।

    ২০২০-২১ অর্থবছরে সুনামগঞ্জে মাছের উৎপাদন ছিল প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার মেট্রিক টন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার টনের কিছু বেশি। এখানে চাষ করা মাছ ও প্রাকৃতিকভাবে আহরিত মাছের হিসাব একসঙ্গে দেখানো হয়েছে।

    সুনামগঞ্জের জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, সুনামগঞ্জে হাওর আছে ৯৫টি। এসব হাওরে ১৪২ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যাচ্ছে ৮০ প্রজাতির মতো মাছ।

    হাওরের জেলেরা বলছেন, প্রভাবশালীদের কারণে সাধারণ জেলেরা সব জায়গায় মাছ ধরতে পারেন না। যেসব জায়গায় বেশি মাছ পাওয়া যায়, সেসব জায়গা প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাঁরা সেখান থেকে নির্বিচারে মাছ শিকার করেন। অতিরিক্ত আহরণ দীর্ঘ মেয়াদে হাওরের মৎস্যসম্পদের ক্ষতি করছে।

    জেলে, আড়তদার ও মৎস্যজীবী সমিতির নেতারা বলছেন, এ বছর হাওরে সবচেয়ে কম মাছ ধরা পড়ছে। কারণ বৃষ্টি কম। পানিও কম।

    সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামশুল করিমও একই কথা বললেন। তাহলে প্রতিবছর উৎপাদন কীভাবে বাড়ে, জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

    মাছ উৎপাদনের তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার জগন্নাথপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি রিপন বর্মন বলেন, মাছ উৎপাদনের হিসাব মনগড়া। বাস্তবের সঙ্গে মিল নেই।

    বন্যার ভয়-

    কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের এপ্রিলে ভয়াবহ বন্যায় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় ১৪২টি হাওরের ফসলি জমি। এ বন্যায় ফসল পচে হাওরের পানি দূষিত হয়ে পড়ে। এখনো প্রতিবছর হাওরে বন্যার ভয় কাজ করে কৃষক পরিবারের মধ্যে।

    ওই সময়ে মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছিল, ১ হাজার ২৭৬ টন মাছ দূষণে মারা গেছে। মাছ আর ধান হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন কৃষকেরা। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির যে হিসাব তৈরি করা হয়েছিল, তাতে ৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবারের ২ লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ৬টি উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়নের ১৮ হাজার ২০৫টি ঘরবাড়ি পরিপূর্ণ ও আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানানো হয় ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে।

    পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা বলেন, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে পরপর দুই বছর বন্যায় হাওরে ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। এর পর থেকে মানুষের আয় কমে যাচ্ছিল। এক ফসলি জমির আয়রোজগারের ওপর সবকিছু নির্ভর করত। মাছের উৎপাদনও কমে গেছে। শুধু গার্মেন্টসে কাজ করতে চলে যাচ্ছে মেয়েরাও। পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

    হাওরে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই জানিয়ে কাশমির বলেন, হাওরের প্রথাগত আয় দিয়ে টিকে থাকা সম্ভব নয় কারও। মাছে জেলেদের অধিকার নেই। মাছের উৎপাদন বাড়লেও তাঁরা লাভবান হচ্ছেন না। কারণ, অমৎস্যজীবীরা ইজারা নিচ্ছেন।

    টোডারো মডেল ও হাওরছাড়া তরুণ-

    কাজের খোঁজে মানুষের অন্য জায়গায় যাওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদ মাইকেল টোডারোর একটি তত্ত্ব আছে। তাঁর মতে, বাড়তি আয়ের সুযোগের জন্য মানুষ অন্য জায়গায় যায়। মানুষ মূলত দুই কারণে যায়—প্রথমটি, ‘পুল ফ্যাক্টর’। মানে হলো, কোথাও বাড়তি আয়ে কাজের সুযোগ তৈরি হলে মানুষ সেখানে যায়। দ্বিতীয়টি ‘পুশ ফ্যাক্টর’, যার মানে মানুষ যেখানে থাকে, সেখানে যদি কাজের সুযোগ কমে যায়, আয় কমে যায়, তাহলে সেই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়।

    বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, তাঁর মনে হচ্ছে মানুষের হাওর ছাড়ার পেছনে রয়েছে ‘পুশ ফ্যাক্টর’। সেখানে কাজের সুযোগ কমে গেছে, আয়ের সুযোগ কমে গেছে। তিনি বলেন, হাওর ছেড়ে মানুষ শহরে এসে যেসব কাজ করছে, তা স্বল্প মজুরির এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক। এতে তাদের জীবনযাত্রার মান বাড়ছে না।

    গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, শহরে কাজের সুযোগের ওপর চাপ তৈরি করছে গ্রাম থেকে আসা মানুষ। নিয়োগকারীরা স্বল্প মজুরিতে কর্মী পাচ্ছেন। ফলে মজুরি বাড়ছে না। দেশে আয়বৈষম্য বৃদ্ধির এটা একটা কারণ। হাওরের মতো এলাকা নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না, সেটা পর্যালোচনা করে দেখা উচিত।

    প্রতিবেদন: প্রথম আলো

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    অপরাধ

    সাত রুটে অবৈধ অস্ত্র ঢুকছে দেশে

    October 11, 2025
    বাংলাদেশ

    ‘অন্ধকারে’ বিমানের মনিটর, যাত্রীরা কেন হতাশ?

    October 11, 2025
    ব্যাংক

    ইসলামী ব্যাংকে বরখাস্ত কর্মকর্তাদের বৈষম্য ও অন্যায়ের অভিযোগ

    October 11, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025

    টেকসই বিনিয়োগে শীর্ষে থাকতে চায় পূবালী ব্যাংক

    অর্থনীতি August 15, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Privacy Policy
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Privacy Policy
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.