মালয়েশিয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে উড়োজাহাজে ওঠার কিছু সময় পরই বোয়িং ৭৭৭ মডেলের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে এক যাত্রী উচ্চস্বরে কেবিন ক্রুদের ডেকে মনিটর না চলার অভিযোগ করেন। চেষ্টা করেও মনিটর সচল করতে না পারায় কেবিন ক্রুরা দুঃখ প্রকাশ করেন, তবে এতে যাত্রীর অসন্তোষ আরও বেড়ে যায়। কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটের এই ফ্লাইটে এমন ঘটনা সম্প্রতি ঘটেছে।
নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজে আসনের পেছনে থাকা মনিটর যাত্রীদের বিনোদন ও ফ্লাইট সম্পর্কিত তথ্য প্রদানের জন্য ব্যবহার হয়। ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট (আইএফই) সিস্টেমের মাধ্যমে যাত্রীরা নাটক, চলচ্চিত্র, গান এবং গেমস উপভোগ করতে পারেন।
এছাড়া ফ্লাইটের অবস্থান, গতি, উচ্চতা ও আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য, এমনকি মানচিত্রে রুট দেখার সুযোগ থাকে। মনিটরের বোতামে চাপ দিয়ে কেবিন ক্রুর সঙ্গে যোগাযোগও করা সম্ভব।
বিমান বাংলাদেশের বহরে থাকা ১৯টি উড়োজাহাজের মধ্যে ৭৭৭, ৭৮৭ ও ৭৩৭ মডেলের বেশিরভাগে এই মনিটর সিস্টেম রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে মনিটরের কার্যক্রম প্রায় অচল।
মূল কারণ, গত বছরের আগস্টের পর সব মনিটর নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ করা হয়। কারণ, এর মধ্যে পুরনো সরকারের প্রচারমূলক কনটেন্ট সংযুক্ত ছিল, যা যাত্রীদের অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পরে শুধুমাত্র ড্রিমলাইনার মডেলের মনিটর সচল হয়। তবে ৭৭৭ ও ৭৩৭ মডেলের বেশিরভাগ মনিটর এখনো অন্ধকার।
যাত্রীদের অভিযোগ, অনেক সিটে মনিটরই নেই, কিছুতে রিমোট কন্ট্রোল নেই বা ঝুলে আছে। ফলে দীর্ঘ ফ্লাইটে বিনোদন ও ফ্লাইট তথ্যের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। কেবিন ক্রুদেরও সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা নেই, যা উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করছে।
বিমান বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বেশিরভাগ মনিটর দীর্ঘ ব্যবহারের কারণে অকেজো হয়ে গেছে। অপর্যাপ্ত মেরামত, যাত্রীদের অসচেতন ব্যবহার এবং অপারেটিং দক্ষতার অভাবও এর কারণ।
৭৭৭ মডেলের চারটি উড়োজাহাজের মধ্যে একটি ইতালিতে পরীক্ষার জন্য রয়েছে। অন্য তিনটির মাত্র ৫ শতাংশ মনিটর কার্যকর, ৩৭৩ মডেলের একটি মনিটর প্রায় পুরোপুরি অকেজো।
উড়োজাহাজ কেনার সময় বোয়িং কর্তৃক সরবরাহকৃত মনিটর সিস্টেম পুরনো হওয়ায় এবং সফটওয়্যার হালনাগাদ না থাকায় এই সমস্যা চলছে।
ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, একক মনিটরের দাম ৪–৬ হাজার ডলার এবং বিজনেস ক্লাসে ১২–১৪ হাজার ডলার। সফটওয়্যার আপগ্রেড করলে নতুন মনিটর কেনার তুলনায় খরচ কম হতে পারে না, তাই মেরামতের কাজ সীমিত।
যাত্রীদের অসচেতনতা ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের কারণে মনিটর দ্রুত অকেজো হচ্ছে। কেবিন ক্রুদেরও নজরদারি বাড়াতে হবে বলে মনে করেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম।
তিনি বলেন, “যাত্রীদের সচেতনতা এবং ক্রুদের দায়িত্বশীলতা মিলিয়ে মনিটরের দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব।”
বিমান কর্তৃপক্ষ মনিটর সংস্কার ও প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে যাত্রীসেবার মান বাড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে প্রতিযোগিতার বাজারে প্রতিষ্ঠান আরও শক্তিশালী থাকবে।