“বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত”—এই প্রতিশ্রুতির পথ ধরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যাত্রা। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের আকাশসীমা রক্ষাই ছিল তাদের প্রথম দায়িত্ব। সেনা ও নৌবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ে প্রতিটি যুদ্ধে তারা আকাশ থেকে ছিল দেশের ঢাল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এই বাহিনী ভুগছিল আধুনিক যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারের অভাবে।
অবশেষে সেই ঘাটতি কাটাতে বড় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়াতে এবার কেনা হচ্ছে বিশ্বের আধুনিকতম কয়েকটি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার—ইতালির ইউরোফাইটার টাইফুন, চীনের জে-১০সি, পাকিস্তানের জেএফ-১৭ থান্ডার এবং তুরস্কের টি-১২৯ অ্যাটাক হেলিকপ্টার।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ২০২৭ সালের মধ্যে ইতালির কাছ থেকে ১০টি ইউরোফাইটার টাইফুন ও তুরস্কের কাছ থেকে ছয়টি টি-১২৯ হেলিকপ্টার সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যেই এসব ক্রয়চুক্তির নীতিগত অনুমোদন পেতে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১২ সদস্যের আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিমানবাহিনীর এক এয়ার ভাইস মার্শাল। কমিটিতে প্রতিরক্ষা, অর্থ, পররাষ্ট্র, আইন ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকবেন। তারা ইতালি ও তুরস্কের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসে চুক্তির বিস্তারিত চূড়ান্ত করবেন। লক্ষ্য—২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যেই ক্রয় প্রক্রিয়া শেষ করা।
এরই মধ্যে চীনের তৈরি ২০টি জে-১০সি যুদ্ধবিমান কেনার আলোচনা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২০ কোটি ডলার—যার মধ্যে বিমান, প্রশিক্ষণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ সবই অন্তর্ভুক্ত। একই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে ১৬টি জেএফ-১৭ থান্ডার কেনার চুক্তিও চূড়ান্ত হয়েছে, ব্যয় প্রায় ৭২০ মিলিয়ন ডলার।
বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে এক সাবেক সহকারী প্রধান, এয়ার কমোডর (অব.) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন,
“এই উদ্যোগ বাংলাদেশের বিমান প্রতিরক্ষার নতুন অধ্যায় খুলে দেবে। ইউরোফাইটার টাইফুন, জে-১০সি, জেএফ-১৭—সবগুলোই বিশ্বমানের যুদ্ধবিমান। এগুলো যুক্ত হলে আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা শুধু শক্তিশালী নয়, অনেক বেশি স্মার্টও হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বিমান কেনার পাশাপাশি রাডার, কমিউনিকেশন, সার্ভেইল্যান্স ও লাইভ ইনফরমেশন সিস্টেম—সবকিছু আধুনিক করতে হবে। দক্ষ জনবলের দিক থেকে আমরা ইতিমধ্যেই অনেক এগিয়ে আছি। সাইফুল আজমের মতো কিংবদন্তি এই বাহিনীরই সন্তান।”
বিশ্বের ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েনে, বিশেষ করে ভারত-চীন, মিয়ানমার ও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে নতুন করে সামরিক ভারসাম্য তৈরি হচ্ছে। তাই আধুনিক বিমানবাহিনী এখন শুধু প্রয়োজন নয়, সময়ের দাবি—এমনটাই মনে করেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।