দেশে এখন এমন কোনো পণ্য নেই যা নকল হয় না বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বিশ্ব মান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)।
সফিকুজ্জামান বলেন, দেশে কোনো কিছু কেনার আগে মানুষের মনে প্রথমেই প্রশ্ন আসে—পণ্যটি আসল না নকল। অথচ বিদেশে গিয়ে কেউ এই প্রশ্ন তোলে না। দেশে এমন কোনো পণ্য নেই, যা নকল হয় না। অথচ আমাদের দেশে সবকিছুই আছে—আইন, প্রশাসন, এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। সেখানে যে বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর মধ্যে এক, দুই, তিন কিংবা চার নম্বর মানের তার পাওয়া যায়। কিন্তু নিম্নমানের বা নকল তার ব্যবহারে রাতের বেলায় বিদ্যুতের লোড নিতে না পেরে আগুন ধরে যায়। এতে পুরো শিল্পপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যায় এবং শ্রমিকরা চাকরি হারান।
তিনি আরও বলেন, দেশের প্রকৃত ব্যবসায়ী ও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ভালো করছেন। তাদের সুরক্ষা ও সহযোগিতা দিতে হবে। কিন্তু আমাদের সমাজে এখনো অনেকে বেসরকারি খাত নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন, যা পরিবর্তন করতে হবে। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এই উদ্যোক্তারা তৈরি করেছেন। তাই সরকারি নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দূরত্ব কমানো জরুরি, নইলে দেশ এগোবে না।
বিএসটিআইয়ের কাজের প্রসঙ্গে ক্যাব সভাপতি বলেন, প্রতিষ্ঠানটিকে দ্রুত পণ্যের মান প্রণয়ন করতে হবে এবং পরীক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
হালাল পণ্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি হালাল পরীক্ষাগার আছে। আমি নিজে পরিদর্শন করেছি। কিন্তু সেটি উপজেলা পর্যায়ের কলেজের রসায়ন ল্যাবের মতো ধুলাবালিতে ভরা। সেখানে পণ্যের মান পরীক্ষার পর্যাপ্ত সক্ষমতা নেই। তবু যদি বাংলাদেশ হালাল পণ্য রপ্তানি শুরু করতে পারে, তাহলে আগামী পাঁচ বছরে ১০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, আমরা ওজনে কারসাজি ও প্রতারণায় প্রায় চ্যাম্পিয়ন। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভোক্তাদের জিম্মি করে ব্যবসা করেন। রমজান এলে তারা ১১ মাসের লাভ তুলতে চান এক মাসে। এতে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ করতে হবে।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপ-উপাচার্য আবদুল হাসিব চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম সভাপতিত্ব করেন। প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী। এছাড়া এফবিসিসিআইয়ের আন্তর্জাতিকবিষয়ক প্রধান মো. জাফর ইকবালসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।