নভেম্বর ও ডিসেম্বর সেন্টমার্টিনের পর্যটন মৌসুমের মূল সময়। এই সময় পর্যটক যদি দ্বীপে ৪-৫ ঘণ্টা অবস্থান বা রাত্রিযাপন করতে না পারেন, তবে হোটেল, রিসোর্ট, শুঁটকি ও কাঁচা মাছ ব্যবসায়ী, ডাব বিক্রেতা, ভ্যান ও অটোরিকশা চালক, ইজিবাইক চালক ও শ্রমিকসহ পর্যটন নির্ভর মানুষের বড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দ্বীপবাসীরা জানান, সরকারের নতুন নিয়ম অনুযায়ী নভেম্বর ও ডিসেম্বর দুই মাস পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারবে না। দিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক অনুমোদিত থাকলেও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ থাকায় দ্বীপবাসীর আয় ব্যাহত হবে। আগে যেখানে ৫-৬ মাস পর্যটন মৌসুম চলত, এখন দিনে দুই হাজার পর্যটক হলেও রাত্রিযাপন না হলে দ্বীপবাসীর অর্থনীতি সংকুচিত হবে।
তারা দাবি করেন, টেকনাফ দমদমিয়া ঘাট থেকে জাহাজ পুনরায় চলাচল শুরু করতে হবে এবং পর্যটকদের রাত্রিযাপনের অনুমতি দিতে হবে। এই দুটি উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সেন্টমার্টিনে পর্যটন নির্ভর প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের দুঃখ-কষ্ট কমবে এবং দ্বীপের অর্থনীতি স্বাভাবিক হবে।
হোটেল মারমেইড রিসোর্টের দায়িত্বরত মো. তৈয়ব উল্লাহ বলেন, দেশীয় আবহাওয়া ও ছুটির দিন মিলিয়ে নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এই সময়কে পিক টাইম বলা হয়। কিন্তু দুই মাস রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ থাকায় পর্যটকরা অন্য গন্তব্য বেছে নেবেন এবং দ্বীপের পর্যটন নির্ভর অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, দ্বীপবাসী ও ব্যবসায়ীদের একমাত্র দাবি এই পিক টাইমে পর্যটকদের রাত্রিযাপন পুনর্বহাল করা।
সেন্টমার্টিন হোটেল, রিসোর্ট ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শিবলী আজম কোরেশি জানান, নভেম্বর থেকে ইনানী বা কক্সবাজারের নুনিয়াছড়া থেকে পর্যটকরা জাহাজে দ্বীপে আসবেন। হোটেল ও রিসোর্টগুলো মোটামুটি প্রস্তুত থাকলেও দ্বীপের ৯০ শতাংশ মানুষ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। দু’মাস রাত্রিযাপন বন্ধ থাকলে তারা কর্মহীন হয়ে পড়বেন এবং বিকল্প পথ নেই।
শুঁটকি ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, দ্বীপে স্থায়ী আয়ের সুযোগ কম। মাছধরার পরিবারগুলি মাত্র চলতে পারে, কিন্তু শুঁটকির চাহিদা আসে শুধুমাত্র পর্যটক থাকলে। পর্যটক না এলে দোকান বন্ধ থাকে। পুরো পর্যটন মৌসুমে রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকলে ব্যবসা সচল থাকবে এবং দ্বীপবাসীরা বাঁচতে পারবে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম জানান, সাগরে মাছ ধরা ও পর্যটন ছাড়া দ্বীপবাসীদের দৃশ্যমান কোনো আয় নেই। পুরো মৌসুমে ব্যবসা চললে বাকি সময়ও চলে। গত বছর থেকে পরিবেশ রক্ষার নিয়মে পর্যটকরা দ্বীপে আসছেন, কিন্তু পর্যটন নির্ভর মানুষের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, এখনো বিস্তারিত অফিসিয়াল কাগজ আসেনি। কতজন পর্যটক দ্বীপে যাবে, কতদিন রাত্রিযাপন করতে পারবে, নভেম্বর থেকে পর্যটক যাওয়া শুরু হবে কি না—সব কিছু এখনও নিশ্চিত নয়। আগের সিদ্ধান্ত এখনও বহাল আছে।