শেভরন বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে টেকসই উন্নয়নের অঙ্গীকার রাখছে। প্রতিষ্ঠানটি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি)-এর সঙ্গে মিল রেখে কমিউনিটি উন্নয়ন ও সামাজিক উদ্যোগ চালাচ্ছে। কৌশলগত অংশীদারিত্ব ও লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগের মাধ্যমে শেভরন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। এভাবে ১৭টি এসডিজির মধ্যে ৯টি লক্ষ্যকে সমর্থন দিচ্ছে।
স্বাস্থ্য ও সুস্থতা- শেভরনের স্বাস্থ্য উদ্যোগ সুস্থ জীবন এবং সকলের কল্যাণ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার প্রতিফলিত করছে। ২০০৬ সাল থেকে করিমপুর ও শাস্তিপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করেছে। ক্লিনিকগুলো সমাজ কল্যাণ সংস্থা (এসএসকেএস) পরিচালনা করছে এবং প্রতি বছর ১,২০,০০০-এরও বেশি মানুষকে সেবা দিচ্ছে। নবীগঞ্জ উপজেলার দূরবর্তী এলাকায় ১২টি স্যাটেলাইট ক্লিনিকও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে।
২০১৩ সাল থেকে শেভরন রোটাপ্লাস্ট আন্তর্জাতিকের সঙ্গে অংশীদারিত্বে কাঁধ ও মুখের সমস্যা সমাধানে ৬০০-এরও বেশি পুনর্গঠনমূলক সার্জারি সম্পন্ন করেছে। ২০২২ সালে সেভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গে মিলিত হয়ে “প্রতিবন্ধী শিশুদের সমন্বিত সহায়তা” প্রকল্প চালু করেছে। এ প্রকল্পে ৩৯৪ জন প্রতিবন্ধী শিশু চিহ্নিত, ১৫৫টি সহায়ক যন্ত্র সরবরাহ, ২৫টি বিদ্যালয়ে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং ৬২ জন শিশুকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
২০২৫ সালে বড় সিলেটে ৬০ জন প্রতিবন্ধীকে কৃত্রিম অঙ্গ সরবরাহ করেছে। সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশ ও জালালাবাদ প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই বছরে ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে টিস্যু বিশ্লেষক দান করা হয়েছে, যা দ্রুত নির্ণয় ও সাশ্রয়ী চিকিৎসা নিশ্চিত করবে। জালালাবাদ প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রকে ১০টি হাসপাতাল বেড প্রদান এবং নাদমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪টি স্কুলে ৪০০ ছাত্রীকে মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচি চালানো হয়েছে।
শিক্ষা- শেভরনের শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ শিক্ষার মান ও সুযোগ বৃদ্ধি করছে। এশিয়ান মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্বে গণিত ও বিজ্ঞান গ্রীষ্মকালীন স্কুল পরিচালনা করছে। এতে কন্যাশিশুদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (এসটিইএম)-এ ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। ২০১৯ সাল থেকে ৩৭০-এরও বেশি শিক্ষার্থী চট্টগ্রামে মাসব্যাপী আবাসিক প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেছে।
উচ্চশিক্ষা ছাড়াও শেভরন নিকটবর্তী বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করেছে। শিক্ষাবৃত্তি, শিক্ষকের বেতন, কম্পিউটার ল্যাব, ক্রীড়া সরঞ্জাম, আসবাবপত্র, শৌচাগার ও নলকূপ সরবরাহ করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সমন্বিত সহায়তা নিশ্চিত করছে।
পরিবেশ ও কমিউনিটি নিরাপত্তা- শেভরন পরিবেশ সংরক্ষণে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি রাখছে। গত দুই দশকে গ্যাস প্লান্ট ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ১,৬০,০০০-এরও বেশি গাছ রোপণ করেছে। এটি কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়ক।
সবুজ উদ্যোগের অংশ হিসেবে হাবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে ৭০টিরও বেশি সৌরশক্তিচালিত রাস্তার আলো স্থাপন করা হয়েছে। ২০২৩ ও ২০২৫ সালে সিলেটে প্রায় ৬৫০টি বর্জ্য পাত্র এবং ৬০টি বর্জ্য সংগ্রহ যানবাহন সরবরাহ করা হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতা কর্মসূচি পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় শেভরন নিয়মিত মানবিক সহায়তা প্রদান করছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন- শেভরনের অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলো সিলেট অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষকে ক্ষমতায়ন করেছে। “উত্তরণ—উন্নত জীবনের জন্য দক্ষতা” প্রকল্পে সুইসকন্ট্যাক্ট ও এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় ২০১৪ জন যুবককে হালকা প্রকৌশল, নির্মাণ ও গার্মেন্ট মেশিন পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ২৪% প্রশিক্ষণার্থী নারী এবং ৭৩% প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ শেষে চাকরিতে যুক্ত হয়েছে।
“উদ্যোক্তা—উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন” প্রকল্পে ২৭০০ গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থা-সংযুক্ত পরিবারের আয় ৫১% বৃদ্ধি পেয়েছে। ৭৫০০ পরোক্ষ পরিবারের আয় ৫৪% এবং ১১০০ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের আয় ৫৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫-২০২২ সালে ব্র্যাক-এর জীবিকা প্রকল্প ২২,৫০০ পরিবারের সদস্যকে সহায়তা করেছে, ১১০টি গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থা গড়ে তুলেছে এবং ১৯৪৯ জন সদস্য ১৯টি যৌথ উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে।
টেকসই অগ্রগতির অঙ্গীকার- শেভরন বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে শুধু কর্পোরেট দায়িত্ব পালন করছে না, বরং দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্ব ও কমিউনিটি বিনিয়োগের শক্তি প্রদর্শন করছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে শেভরন হাজার হাজার মানুষের জীবনে স্থায়ী পরিবর্তন আনছে।
৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শেভরন কেবল দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করেনি বরং কমিউনিটির সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাহিদাও পূরণ করেছে। শেভরনের কমিউনিটি অংশগ্রহণ মডেল প্রাইভেট সেক্টরের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

