গুম ও খুনের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে পদক্ষেপ নিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। একই সঙ্গে বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে তারা।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) তাদের ওয়েবসাইটে সংস্থাগুলোর যৌথ চিঠিটি প্রকাশ করে।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে—
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে),
সিভিকাস,
ফোরটিফাই রাইটস,
রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস,
এবং টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট।
চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ও শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার মৌলিক স্বাধীনতা পুনর্বহাল ও আইন সংস্কারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।
তারা লিখেছে, “২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে মানবাধিকার সুরক্ষার পরিসর আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে এবং ভবিষ্যতে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে শক্তিশালী ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।”
সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে দেশের নিরাপত্তা খাত এখনো সংস্কার হয়নি। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জবাবদিহি ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সহযোগিতা দিচ্ছেন না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, বিগত সরকারের আমলে সংঘটিত গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে চলমান নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংস্থাগুলো বাংলাদেশে বসবাসকারী সবার অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার নিশ্চয়তা চেয়েছে। তারা বলেছে, জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে এবং গত ১৫ বছরে সংঘটিত নিপীড়নের জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, গুমকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশনকে তাদের কাজের পূর্ণ স্বাধীনতা ও সহায়তা দিতে হবে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্যারিস নীতির আলোকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) সংস্কারের পরামর্শ দেয়, যাতে এর কার্যকারিতা নিশ্চিত হয় এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীন থাকে।
এছাড়া সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ ২০২৫, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট এবং দণ্ডবিধির আওতাধীন ফৌজদারি মানহানি আইনসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিতকারী সব আইন বাতিল বা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সংশোধনের আহ্বান জানানো হয়।
চিঠিতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং সাংবাদিকদের নির্বিচার গ্রেপ্তার ও হয়রানি থেকে রক্ষা করার তাগিদ দেওয়া হয়।
এছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনকারী সব মামলা প্রত্যাহার বা খারিজের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করারও আহ্বান জানানো হয়।
সবশেষে সংস্থাগুলো সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানায়। তাদের মতে, এই আইনের প্রয়োগে সভা, সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অতিমাত্রায় সীমিত করা হয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত অনেক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার হয়েছেন।