ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের কাজ সাত মাস পেরিয়েও শেষ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রোডম্যাপ অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে নিবন্ধন গেজেট প্রকাশের কথা ছিল। কিন্তু কমিশন বলছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তারা এক সপ্তাহের মধ্যেই নিতে চায়।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, মাঠপর্যায়ের পুনঃতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়ে কমিশন তা পর্যালোচনা করছে। সিদ্ধান্তও সেই ভিত্তিতেই নেওয়া হবে।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট, আর ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা করেছে ইসি। প্রস্তুতির অন্যান্য কাজ এগোলেও নতুন দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়া পিছিয়ে রয়েছে।
১৪৩টি আবেদন, টিকে আছে মাত্র ২২টি দল
গত ১০ মার্চ ইসি নতুন দল নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করে। এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশনের আহ্বানে একদফা সময় বাড়ানোর পর ২২ জুন পর্যন্ত মোট ১৪৩টি দল আবেদন করে।
তবে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়ে বাদ পড়ে ১২১টি দল। বাকি ২২টি দলের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে তদন্ত চালায় ইসির বিশেষ কমিটি।
৩০ সেপ্টেম্বর জানানো হয়, দুই দল— জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং বাংলাদেশ জাতীয় লীগ— নিবন্ধন পাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শাপলা প্রতীক নিয়ে জটিলতা
নিবন্ধনের পর এনসিপির প্রতীক নিয়ে শুরু হয় জটিলতা। দলটি ‘শাপলা’ প্রতীক চাইছে, কিন্তু ইসি জানিয়েছে— নির্ধারিত তালিকায় থাকলেও প্রতীকটি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়।
১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বিকল্প প্রতীক বাছাইয়ের সময় পেলেও এনসিপি তা না করে ফের শাপলার দাবিতে কমিশনে আবেদন করেছে।
ইসি জানিয়েছে, দলটি বিকল্প প্রতীক না জানালে কমিশন নিজ বিবেচনায় প্রতীক বরাদ্দ করবে। সচিব আরও স্পষ্ট করেছেন, “তালিকার বাইরে কোনো প্রতীক দেওয়া যাবে না এবং ইসির সিদ্ধান্তও অপরিবর্তিত থাকবে।”
অন্য দলগুলোর ক্ষোভ ও অভিযোগ
এনসিপিকে ঘিরে বিলম্বে ক্ষুব্ধ অন্যান্য দল। মঙ্গলবার ইসির মিডিয়া সেন্টারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে মৌলিক বাংলা ও বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিজেডিডিপি) অভিযোগ করেছে— এনসিপিকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে অন্য দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করা হচ্ছে।
মৌলিক বাংলার সাধারণ সম্পাদক ছাদেক আহমেদ সজীব বলেন,
“ইসি প্রথমে তদন্ত করেছে, পরে পুনর্তদন্ত, এখন আবার অধিকতর তদন্ত করছে। এতে আমাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে, এটি রাজনৈতিক ময়নাতদন্তের মতো।”
তিনি আরও বলেন, “এনসিপিকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে কমিশন নিজের নীতিমালা ভঙ্গ করছে।”
পুনঃতদন্তে আরও ১০ দল
বর্তমানে মাঠপর্যায়ে পুনঃতদন্ত চলছে ১০টি দলের বিষয়ে। সেগুলো হলো—
আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, জনতার দল, মৌলিক বাংলা, জনতা পার্টি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই পুনঃতদন্তের প্রতিবেদন এক সপ্তাহের মধ্যে কমিশনে জমা পড়বে। এরপরই নিবন্ধনযোগ্য দলগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
গেজেট প্রকাশে আরও সময় লাগবে
ইসির নিয়ম অনুযায়ী, নিবন্ধনের সিদ্ধান্তের পর আপত্তি জানাতে গণবিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
দুটি দলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও সেই বিজ্ঞপ্তি তিন সপ্তাহ ধরে ঝুলে আছে। ফলে নিবন্ধনের চূড়ান্ত তালিকাও অনিশ্চয়তায়।
ইসি কর্মকর্তাদের ধারণা, পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে আরও দুই সপ্তাহ— অর্থাৎ নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন,
“আমরা আইন ও বিধিমালার মধ্যে থেকেই সিদ্ধান্ত নেব। লক্ষ্য একটাই— এ সপ্তাহের মধ্যেই দল নিবন্ধনের বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করা।”

