বারবার নির্দেশনা জারির পরও বিদেশ সফরে নিয়ম ঠিকভাবে মানছেন না উপদেষ্টা ও সচিবরা। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়টি নিয়ে সরকার প্রধান ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
এ কারণে বিদেশ সফরে নিয়ম মানা নিয়ে পূর্বে জারি করা নির্দেশনা এবার তৃতীয়বারের মতো মনে করিয়ে দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে উপদেষ্টা ও সচিবদের। একইসঙ্গে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিদেশ সফর এড়িয়ে চলার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে উপদেষ্টা, সচিব এবং দপ্তর-সংস্থার প্রধানদের।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব সাইফুল্লাহ পান্নার স্বাক্ষরে এ সংক্রান্ত পরিপত্র মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সব সিনিয়র সচিব, সচিব ও দপ্তর-সংস্থার প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, নির্দেশনা অনুসরণ না করে বিদেশ ভ্রমণের ঘটনা ঘটছে। একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ও সচিব একই সঙ্গে বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। একই মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তা একত্রে বিদেশ যাচ্ছেন, যা পূর্বে জারি করা নির্দেশনার বিরুদ্ধে।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রায়ই বিদেশ সফরের প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে, যা মঙ্গলবারের পরিপত্রে পূর্ববর্তী নির্দেশনার পুনরাবৃত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অফিস থেকে সব সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যে কোনও বিদেশ ভ্রমণ একান্ত অপরিহার্য না হলে এড়িয়ে চলতে হবে, বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে।
গত বছর আগস্টে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বিদেশ সফর সীমিত করতে ১৩ দফা নির্দেশনা জারি করেছিল।
নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, জাতীয় স্বার্থ ব্যতীত কোনো মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব একত্রে বিদেশ সফরে যাবেন না। একইসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অধীন অধিদপ্তর বা সংস্থার প্রধানরা একান্ত অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থ ছাড়া একসঙ্গে বিদেশ ভ্রমণে যাবেন না।
১৩ দফা নির্দেশনার পরও তা মানা হচ্ছিল না। তাই চলতি বছরের ২৫ মার্চ সরকারি কর্মচারীদের বিদেশ সফরের বিষয়ে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বরের নির্দেশনা মেনে চলার বিষয়টি স্মরণ করানো হয়েছিল। এবার মঙ্গলবার তৃতীয়বার নতুন পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া জানান, যারা নিয়ম মানছে না তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না, এ বিষয়ে তাঁর ধারণা কিছুই করা হয়নি। তিনি বলেন, “এই কারণেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।”
ফিরোজ মিয়া আরো বলেন, যদি দু-একজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে এ নির্দেশনা না মানার কারণে কঠোর শাস্তি দেওয়া হতো, তাহলে পরবর্তী সময়ে কেউ আর নিয়ম ভঙ্গ করত না। বারবার চিঠি দিয়ে সতর্ক করা একটি দুর্বলতা হিসেবে দেখা যায়।
বিদেশ সফর সংক্রান্ত নির্দেশাবলী-
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ৯ ডিসেম্বর মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার স্বাক্ষরে জারি করা ১৩ দফা নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে—
- সাধারণভাবে বিদেশ ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হবে।
- বছরের সম্ভাব্য বিদেশ ভ্রমণের তালিকা জানিয়ে রাখতে হবে।
- মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বিদেশ সফরের ডেটাবেজ তৈরি করতে হবে; কাঠামো প্রধান উপদেষ্টার অফিস তৈরি করবে ও তথ্য সংরক্ষণ করবে।
- সব স্তরের সরকারি কর্মকর্তারা একসঙ্গে বিদেশ ভ্রমণ এড়িয়ে চলবেন।
- উপদেষ্টা ও সচিবরা সাধারণভাবে একসঙ্গে বিদেশ যাবেন না; জাতীয় স্বার্থে অপরিহার্য হলে তা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
- সচিব ও অধীন অধিদপ্তর/সংস্থা প্রধানরা একান্ত অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থ ছাড়া একসঙ্গে বিদেশ সফর করবেন না।
- সেমিনার বা ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণের প্রস্তাবে আমন্ত্রণপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পর্যায় এবং অন্য দেশের অংশগ্রহণকারীর তথ্য উল্লেখ করতে হবে।
- ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা, প্রস্তাবিত কর্মকর্তার কার্যক্রমে সংশ্লিষ্টতা ও উপযোগিতা স্পষ্ট থাকতে হবে।
- কেনাকাটা, প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন বা ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপ্ট্যান্স টেস্টে শুধু সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ পাঠাতে হবে।
- সরকারি অর্থে কম প্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে হবে।
- কর্মকর্তারা বিনোদনমূলক বিদেশ ভ্রমণ পরিহার করবেন।
- দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা ছুটিতে বিদেশ যাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
- প্রস্তাবিত কর্মকর্তার গত এক বছরের বিদেশ ভ্রমণ বৃত্তান্ত সংযুক্ত করতে হবে।