সিনেট শুনানিতে পরবর্তী মার্কিন দূত-
ঢাকায় পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন সিনেটে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ হলেও তার বৃহৎ প্রতিবেশীর প্রভাবের কারণে আন্তর্জাতিক মনোযোগ প্রাপ্য মাত্রায় পৌঁছাচ্ছে না। তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আসা গণতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
ক্রিস্টেনসেন লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, যদি তাকে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়, তবে ঢাকাস্থ দূতাবাস টিমের সঙ্গে কাজ করে বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য নিবিড়ভাবে চেষ্টা করবেন। তিনি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ভূমিকাকেও স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সংঘটিত বিক্ষোভ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা সরকারের পতন ঘটিয়েছে। আগামী নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে ক্রিস্টেনসেন বলেন, এটি কয়েক দশকের মধ্যে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হতে চলেছে এবং এর মাধ্যমে গঠিত হবে নতুন সরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি সমর্থন করে।
তিনি বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানকে উল্লেখযোগ্য বলে মনে করেন, যা একে উন্মুক্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অপরিহার্য অংশে পরিণত করেছে। বাংলাদেশকে তিনি এশিয়ার ‘নতুন টাইগারদের’ মধ্যে অন্যতম উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দেশটি বড় চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে, যা দেশের জনগণের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, কঠোর পরিশ্রম এবং সহনশীলতার ফল।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার পরিকল্পনাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক বিনিয়োগের সুযোগ সম্প্রসারণ, বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা হ্রাস এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব আরও মজবুত করার জন্য কাজ করবেন।
রোহিঙ্গা সংকটেও ক্রিস্টেনসেন গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ গত আট বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে বসবাস করছে।
তিনি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন, পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছেন এবং মানবিক সহায়তার বাস্তবতা যাচাই করেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহায়তা এবং আর্থিক সহযোগিতা জোরদার করা দরকার, যাতে এই ভার এক দেশ একা বহন না করে।
ক্রিস্টেনসেন বলেন, অনুমোদন পেলে তিনি ঢাকাস্থ দূতাবাস এবং সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে বিশেষ করে সিনেট কমিটির সহায়তায় একটি স্থায়ী ও কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করার জন্য কাজ করবেন। তিনি এটিকে নিজের জন্য সম্মানের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেন এবং ঢাকার দূতাবাসের দক্ষ কর্মীদের নেতৃত্ব দিয়ে দুই দেশের অংশীদারিত্ব আরও দৃঢ় করতে চান।

