ভোলায় উৎপাদিত গ্যাস জেলার বাইরে আনা যায় না এবং জেলার ভেতরেও যথাযথভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। বাংলাদেশের গ্যাস উৎপাদন প্রতিনিয়ত কমছে। চড়া দামে এলএনজি আমদানি করলেও চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না, ফলে শিল্পকারখানার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে দক্ষিণের দ্বীপজেলা ভোলায় উৎপাদিত গ্যাস অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। সরকারি পরিকল্পনার অভাবে প্রায় আড়াই দশক পরও এ গ্যাস ব্যবহার নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) জানিয়েছে, ভোলায় তিনটি গ্যাসক্ষেত্র মিলিয়ে ১,৪৩২ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস থাকতে পারে। শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ কোটি ঘনফুট, কিন্তু ব্যবহার হচ্ছে সর্বোচ্চ ৭.৫ কোটি ঘনফুট। ভোলা নর্থ ও ইলিশা গ্যাসক্ষেত্র থেকে এখনও উৎপাদন শুরু হয়নি। ১৯৯৫ সালে শাহবাজপুর, ২০১৮ সালে ভোলা নর্থ এবং ২০২৩ সালে ইলিশা গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করা হয়।
দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট, যেখানে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৭০–২৮০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় উৎপাদন ১৭৭ কোটি ঘনফুট। ২০১৭ সালের পর থেকে উৎপাদন কমতে থাকে এবং চাহিদা মেটাতে এলএনজি আমদানি শুরু হয়।
গ্যাস আউটপুট বহির্গামী করার জন্য নব্বইয়ের দশকে একটি বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিকল পাইপলাইন প্রস্তাব করেছিল, কিন্তু তখনকার সরকার লাভজনক না মনে করে তা বাস্তবায়ন করেনি। বর্তমানে সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। ভোলার গ্যাস সিলিন্ডারে ভরে শিল্পে সরবরাহ করা বা এলএনজি রূপান্তরের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ভোলায় চাহিদা বাড়েনি, কারণ নতুন শিল্প ও বিনিয়োগ হয়নি। বর্তমানে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, দুটি শিল্পের ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্পকারখানা ও ২,৫০০ বাসায় গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। ভোলার উৎপাদিত গ্যাসের কিছু অংশ সিএনজি আকারে মেঘনাঘাট পর্যন্ত পৌঁছে শিল্পে সরবরাহ করা হলেও দৈনিক পরিমাণ খুবই সীমিত, মাত্র ৮–৯ লাখ ঘনফুট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোলায় গ্যাসের যথাযথ ব্যবহার এবং পাইপলাইন নির্মাণে বিনিয়োগ উৎসাহী করা হলে দেশের গ্যাস সংকট অনেকাংশে সুরাহা পাওয়া যেত। অতিরিক্ত মজুদ গ্যাস থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবে ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হয়নি।

