গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সরকারি রাস্তার ছয় শতাধিক ইউক্যালিপটাসগাছ টেন্ডার ছাড়াই কাটা হচ্ছে। ঘটনাটি এলাকায় প্রকাশ্যে হলেও প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই। এর ফলে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তিন দিন ধরে উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের শালপাড়া থেকে মিরিপুকুর পর্যন্ত এবং কামদিয়া-পানিতলা রাস্তা থেকে শালপাড়া পর্যন্ত এসব গাছ কাটা হচ্ছে।
স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, শালপাড়া যুব উন্নয়ন ক্লাব ও শালপাড়া এম এ মান্নান ক্লাবের সদস্যদের জানানো হয়নি। সভাপতি মাহমুদ হাসান ইউএনওর কথিত ‘মৌখিক অনুমতি’ দেখিয়ে স্থানীয় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ঠিকাদারের কাছে গাছ বিক্রি করেছেন ২৮ লাখ টাকায়। বন বিভাগের তালিকায় একই গাছের দাম মাত্র সাড়ে ১২ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল।
জানা যায়, ২০০৬ সালে দুই ক্লাবের সদস্যরা প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ৬০০টির বেশি ইউক্যালিপটাসগাছ রোপণ করেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী গাছ বিক্রির সময় বিক্রয়মূল্যের ২০ শতাংশ ইউপি এবং ১০ শতাংশ জমির মালিক পাবেন। কিন্তু সভাপতি মাহমুদ ও সহযোগী বেলাল গোপনে চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেন। এরপর চেয়ারম্যান বিষয়টি ইউএনওকে জানান।
নিয়ম অনুযায়ী, মূল্য নির্ধারণের পর ইউপির চেয়ারম্যান টেন্ডারের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু ইউপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির জানান, ‘সব কাজ ক্লাবের সভাপতি করেছেন।’
গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রমিকরা ট্রাক ও ট্রলিতে করে দ্রুতগতিতে কাটা গাছ সরিয়ে নিচ্ছেন। সকাল থেকে দুপুর ৩টার মধ্যে তিন শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। ক্লাবের সভাপতি মাহমুদ ও সহযোগী বেলাল সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ক্লাবের সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল গাছ ১২ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন দাম ২৮ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। আমরা কোনো টাকা পাইনি। তিনি আমাদের সঙ্গে জালিয়াতি করেছেন। আমরা শাস্তি চাই।’
গাছ বিক্রির সঙ্গে জড়িত বেলাল হোসেন বলেন, ‘যেখানে কাগজপত্র দেখানোর, সেখানে দেখানো হবে। না হলে মামলা করুক।’ ক্রেতা এমরান জানান, ‘সব কাগজপত্র সভাপতির কাছে আছে। আমি তাদের কাছ থেকেই গাছ কিনেছি। দাম প্রায় ১৮ লাখ টাকা।’
অন্য ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি ২৫ লাখ টাকা অফার করেছিলাম। কিন্তু সভাপতি আরও বেশি আশা করায় বিক্রি হয়নি।’ ক্লাবের সদস্য মুনছুর আলী বলেন, নিয়ম না মেনে গাছ বিক্রি করা হয়েছে। ইউপি ও জমির মালিক কেউই টাকার অংশ পাননি। টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হলে দাম আরও বেশি পাওয়া যেত।
সভাপতি মাহমুদ হাসান বলেন, ‘ইউএনওর মৌখিক নির্দেশে গাছ বিক্রি করেছি। বন বিভাগের মূল্য অনুযায়ী দাম ১২ লাখ টাকা। ২৮ লাখ টাকায় বিক্রির অভিযোগ সঠিক নয়।’
গোবিন্দগঞ্জ সামাজিক বনায়ন বিভাগের ফরেস্টার মিজানুর রহমান বলেন, ‘দাম কমবেশি হতে পারে; কিন্তু সরকারি জায়গার গাছ টেন্ডারের বাইরে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।’
গোবিন্দগঞ্জ ইউএনও ইয়াসমিন সুলতানা জানান, ‘উপজেলা সমন্বয় সভায় গাছ বিক্রির অনুমোদনের কথা বলা হয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে তারা কীভাবে কাটা গাছ সরাচ্ছেন, তা আমার জানা নেই।’
জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমদ বলেন, ‘সরকারি জায়গার গাছ বিক্রি করতে হলে টেন্ডারের মাধ্যমে করতে হবে। বিকল্প কোনো পথ নেই। তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে ইউএনওকে নির্দেশ দিচ্ছি।’

