জাল শিক্ষাগত সনদ ব্যবহার করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে প্রথম শ্রেণির পদে দীর্ঘ ১০ বছর চাকরি করেছেন ইসলামি বক্তা মোহাম্মদ ফখরুল আলম আশিকী। সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদনে তার জমাকৃত বিএ (অনার্স) সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে।
ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ ফখরুল আলম ফাউন্ডেশনের তৎকালীন মহাপরিচালক শামীম মো. আফজালের সময়ে সহকারী সম্পাদক (৯ম গ্রেড) পদে যোগদান করেন। তিনি ২০০৮ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি অর্জনের দাবি করে একটি সনদ জমা দেন, যা এখন জাল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
তবে তার নিয়োগের আগে থেকেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনে তার নিয়মিত যাতায়াত ও প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য। পদটি ফাউন্ডেশনের অর্গানোগ্রাম ও সার্ভিস রুলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগেই, এমনকি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন ও পরীক্ষানিয়ন্ত্রণ দপ্তর থেকে গত ১৩ অক্টোবর প্রেরিত (সূত্র নং: জাতীয় বি:/পরীক্ষা/সনদ/৪৪৯/২০০৫/৯৪৭০) চিঠিতে জানানো হয়, ফখরুল আলমের পরীক্ষার ফলাফল “ফেল” এবং তার জমা দেওয়া বিএ (অনার্স) সনদটি “জাল” হিসেবে চিহ্নিত।
এরপর ২১ অক্টোবর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জারি করা অফিস আদেশে বলা হয়, “বৈধ সার্টিফিকেট ছাড়া অসত্য তথ্য প্রদান করে নিয়োগ পাওয়া সম্পূর্ণ অনৈতিক ও বেআইনি।” ইসলামিক ফাউন্ডেশন চাকরিবিধিমালা ১৯৯৮-এর ৩৮(১)(ক)(গ) ও ৩৯(খ)(চ) ধারার আওতায় “অসদাচরণ ও প্রতারণার দায়ে দোষী” হিসেবে তাকে ১৬ অক্টোবর থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর আগে ফাউন্ডেশনে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত এক অনুসন্ধান কমিটির অনুরোধে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ যাচাইয়ের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পত্র পাঠানো হয়। সেই অনুসন্ধানেই ফখরুল আলমের সনদ জাল হিসেবে প্রমাণিত হয়।
ফখরুল আলম আশিকী বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, ইউটিউব ও সামাজিক মাধ্যমে ইসলামি বক্তা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছিলেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্ন মসজিদে ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতা দিতে দেখা গেছে তাকে। তার আলোচনায় প্রায়ই “হালাল উপার্জন, নৈতিকতা ও সততার” গুরুত্ব ছিল প্রধান বিষয়। অথচ নিজেই জাল সনদ ব্যবহার করে সরকারি চাকরি করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন তিনি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, তদন্ত সম্পন্ন হলে তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

