জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় না থেকেও ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ১০৪ জনকে চিহ্নিত করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় চলতি সপ্তাহেই তাদের নামে জারি হওয়া গেজেট বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে।
একই সঙ্গে দেখা গেছে, আরও ২৩ জনের নামে একাধিকবার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের গেজেট বহাল রেখে বাকিগুলো বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ভুয়া ও একাধিকবার গেজেট পাওয়া ব্যক্তিরা ইতিমধ্যে সরকার থেকে যে এককালীন ও মাসিক ভাতা নিয়েছেন, সেই টাকা ফেরত নেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যাচাই-বাছাই শেষে আট বিভাগে মোট ১০৪ জন ভুয়া জুলাই যোদ্ধা শনাক্ত হয়েছে। তাদের বিষয়ে জেলা কমিটিগুলোর সুপারিশে মোট ১২৭ জনের গেজেট বাতিলের প্রস্তাব তৈরি হয়েছে—এর মধ্যে ভুয়া ১০৪ জন ও একাধিকবার গেজেট পাওয়া ২৩ জন রয়েছেন।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কয়েক ধাপে ১৪ হাজার ৬৩৬ জনকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু প্রথম তালিকা প্রকাশের পরই বিতর্ক শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে, আন্দোলনে অংশ না নিয়েও অনেকেই স্বীকৃতি পেয়েছেন। প্রকৃত জুলাই যোদ্ধারা এসব ভুয়া নাম বাদ দেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন জেলায় আন্দোলন শুরু করেন এবং সরকারকে আলটিমেটাম দেন।
সমালোচনার মুখে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় তালিকা পুনর্যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়। যাচাই শেষে দেখা যায়, অনেকেই মিথ্যা তথ্য দিয়ে গেজেটে নাম তুলেছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগে ভুয়া যোদ্ধার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—৩৫ জন। এছাড়া এই বিভাগেই চারজনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন ভুয়া যোদ্ধা ও একজনের নামে দুবার গেজেট, সিলেটে ২৬ জন ও একজনের দুবার, খুলনায় ৫ জন ও ৪ জনের নামে দুবার, রংপুরে ২ জন, ঢাকায় ৭ জন ও ৭ জনের নামে দুবার, রাজশাহীতে ৯ জন ও ৪ জনের নামে দুবার এবং বরিশালে ২ জনের নামে দুবার গেজেট জারি হয়েছে।
বিধিমালা অনুযায়ী, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়। গুরুতর আহত (খ ক্যাটাগরি) যোদ্ধারা এককালীন ৩ লাখ ও মাসিক ১৫ হাজার টাকা এবং অপেক্ষাকৃত কম আহত (গ ক্যাটাগরি) যোদ্ধারা এককালীন ১ লাখ ও মাসিক ১০ হাজার টাকা পান।
সূত্র বলছে, গেজেটভুক্ত হওয়ার পর ভুয়া যোদ্ধারাও এসব ভাতা ও আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। এতে সরকারের কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো—এই অর্থ ফেরত আনা হবে কীভাবে? মন্ত্রণালয় এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
মন্ত্রণালয়ের যাচাই তালিকা অনুযায়ী, শুধুমাত্র ময়মনসিংহ বিভাগেই ভুয়া বা দ্বৈত গেজেট পাওয়া ২১ জনের নাম এসেছে। এদের মধ্যে আছেন সৈয়দ তরিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ নুরুল আমিন, তানভীর আহমেদ, আছিয়া খাতুন, রুহুল আমিন, আমি হাসান রুপম, আকিব তালুকদার, সুজন মিয়া, ইমন শাহারিয়া, আশরাফুল ইসলাম জাসামসহ আরও অনেকে।
ঢাকা বিভাগে সাতজন ভুয়া যোদ্ধা ও সাতজনের নামে একাধিকবার গেজেট হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে চিহ্নিত ৩৫ জনের মধ্যে আছেন মো. সাগর, আবদুল্লাহ আল নোমান, নাইম উদ্দীন শাঈদ, শাহাদাত ইকবাজ তাহনি, মাহাবী তাজওয়ার, জসিম উদ্দিন, মোহা. ফরহাদ আলম, রমজান আলী ও রিফাত বিন আলসহ আরও অনেকে।
এ বিষয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের দায়িত্বে থাকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন,
“যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাদের গেজেট বাতিল করা হবে। প্রক্রিয়াটি চলছে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”
ভুয়া যোদ্ধাদের দেওয়া ভাতার টাকা ফেরত নেওয়া হবে কিনা—এ প্রশ্নে তিনি বলেন,
“আগে গেজেট বাতিল করি, তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

